সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে বড় স্বস্তির খবর পেলেন সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদ। আগামী ১৯ জুলাই পর্যন্ত তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না বলে বুধবার জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি এএস বোপন্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের ডিভিশন বেঞ্চ। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৯ জুলাই।
২০২২ সালের ২৫ জুন মুম্বই থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল সাংবাদিক তথা মানবাধিকার কর্মী তিস্তাকে। তার পর সেপ্টেম্বরে তিনি সুপ্রিম কোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। সেই জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তিনি গুজরাত হাই কোর্টে সাধারণ জামিনের আর্জি জানান। কিন্তু সেই আর্জি খারিজ করে দিয়ে গত জুন মাসে গুজরাত হাই কোর্ট তিস্তা শেতলবাদকে দ্রুত আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তিস্তা। পয়লা জুলাই রাতে বিশেষ শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টে। এই শুনানির পর গুজরাট আদালতের নির্দেশে স্থগিতাদেশ জারি করে তিস্তাকে এক সপ্তাহের জন্য রক্ষাকবচ প্রদান করে শীর্ষ আদালত। সেই মামলারই শুনানি ছিল আজ বুধবার।
বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি এএস বোপন্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের ডিভিশন বেঞ্চ এ বিষয়ে গুজরাত সরকারের জবাব তলব করেছে। আগামী ১৯ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি। সে দিনই গুজরাত সরকারকে জবাব জানাতে হবে আদালতকে। এ দিন গুজরাত সরকারের হয়ে আদালতে হাজির হয়েছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এবং অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু। তাঁরা আদালতকে জানান, কিছু নথির অনুবাদ করতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। তিস্তার আইনজীবী কপিল সিব্বল যদিও বিষয়টি জরুরি শুনানি করার আবেদন জানান।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, গুজরাত হাই কোর্ট তিস্তাকে অবিলম্বে আত্মসমর্পণ করার যে নির্দেশ দিয়েছিল, তার উপর স্থগিতাদেশের মেয়াদ ১৯ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সে দিনই গুজরাত সরকারকে জবাব জানাতে হবে আদালতের কাছে।
২০০২ সালের গুজরাত হিংসাপর্বে গুলবার্গ সোসাইটি হত্যাকাণ্ড মামলায় ‘SIT’ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বেশ কয়েক জনকে ক্লিনচিট দেয়। তার বিরোধীতায় মামলা দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে। গত বছর ২৪ জুন সেই আবেদন খারিজ করে দেশের শীর্ষ আদালত। পাশাপাশি, গুজরাত দাঙ্গা সংক্রান্ত কোনও মিথ্যা তথ্যপ্রমাণ তিস্তা পেশ করেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখার কথা বলে। এর পরেই ২৫ জুন মুম্বইয়ে গিয়ে গুজরাত পুলিশের সন্ত্রাসদমন শাখা (এটিএস) তিস্তাকে গ্রেফতার করেছিল। সে সময় তাঁকে হেফাজতকালীন শারিরীক নিগ্রহ করা হয় বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
২০০২-এর গুজরাত হিংসায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে দীর্ঘ দিন ধরে রয়েছেন তিস্তা। ধারাবাহিক ভাবে পরিবারগুলিকে আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ভারতের বিভিন্ন সংশোধনাগারে বন্দীদের, বিশেষত নারী বন্দীদের উপর হেফাজতকালীন অত্যাচার নিয়ে তার সমীক্ষা এমনকি হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মনস্তত্ত্বের গবেষণাতেও উল্লেখিত হয়েছে। গুজরাত পুলিশের জঙ্গিদমন শাখার (এটিএস) হাতে তিস্তা শেতলবাদের গ্রেফতারি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপুঞ্জও। দেশের গণতান্ত্রিক মহলের বক্তব্য, গণতন্ত্রের কন্ঠ রোধ করতেই এভাবে বিভিন্ন মামলার সাথে যোগসূত্র টেনে গ্রেফতার করা হচ্ছে একের পর এক সমাজ কর্মীকে।