রেশনে চালের জোগান বজায় রাখতে খোলা বাজার থেকে চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্যের খাদ্য দফতর। আবার, এই কাজে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ই-টেন্ডার মারফৎ চাল কিনবে তারা। গত ৯ই জুন রাজ্য খাদ্য দফতরের সচিব পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি একটি চিঠি পাঠান কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রককে। চিঠিতে জানানো হয়, রেশনে চালের জোগান বজায় রাখতে যেন কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গকে খাদ্যশস্য দেয়। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য রাজ্যকে গম দেওয়ার আবেদন জানানো হয় চিঠিতে। যদি কোনও কারণে গম দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে রাজ্যের রেশন ব্যবস্থা সচল রাখতে যেন চাল দেওয়া হয়। ৮০ হাজার মেট্রিক টন গম চেয়ে কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রকে আবেদন জানানো হয়।
কেন্দ্র থেকে এই শস্য পাওয়া গেলে ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত রাজ্যের রেশন ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকবে বলে রাজ্য খাদ্য দপ্তর তরফে জানানো হয়। সূত্রের খবর, খাদ্য মন্ত্রক রাজ্যকে জানিয়েছে, তাদের পক্ষে এই মুহূর্তে চাল দেওয়া সম্ভব নয়। সঙ্গে একথাও রাজ্যকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে, পশ্চিমবঙ্গ চাল উৎপাদনে সারা দেশের মধ্যে প্রথম। এমন চিঠি পাওয়ার পরেই ঘাটতি মেটাতে উদ্যোগ শুরু করেছে দফতরের শীর্ষ আধিকারিকেরা। দফায় দফায় বৈঠক করে ঠিক হয়, খোলা বাজার থেকে চাল কিনে এই ঘাটতি মেটানো হবে।
গত ২২শে জুন খাদ্য দপ্তর থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয় যে রেশন ব্যবস্থা চালু রাখতে খোলা বাজার থেকে চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। এই পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা রাখার জন্য ই-টেন্ডারের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানা গিয়েছে। সেইসঙ্গে এই বিষয়ের কার্যকরিতা বজায় রাখতে ৭ সদস্যের একটি কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে রাজ্য খাদ্য দপ্তরের তরফে। তবে এমন সিদ্ধান্তে খুশি নয় রাজ্যের রেশন ডিলারদের একাংশ। তাঁদের কথায়, প্রতি বছর রাজ্য সরকার ৫ লক্ষ মেট্রিক টন চাল কেনে। কিন্তু এ বছর চাল কেনার ক্ষেত্রে কত সংখ্যায় রেশন কার্ড রাজ্যের মানুষ ব্যবহার করেন, তার সঠিক তথ্যও খাদ্য দপ্তরের কাছে ছিল। কিন্তু তারা সেই সব বিষয়গুলি নজরে না রাখায় রেশন দোকানে চাল বাড়ন্ত হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
প্যান্ডেমিকের পর থেকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিম্নমুখী। তাই খাদ্য দপ্তর কার্যত যে পদ্ধতিই অবলম্বন করা হোক না কেন সাধারণ মানুষের সমস্যা বাড়ছে বলে অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের মত। অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে ‘‘যে পদ্ধতিতে বাড়তি চাল কেনা হচ্ছে তা আমরা সঠিক বলে মনে করি না। এ ক্ষেত্রে একটু বেশি দাম দিয়ে রাজ্যের কৃষকদের হাতে থাকা চাল কিনলেই বাজারের সামঞ্জস্যতা বজায় থাকত। কিন্তু টেন্ডার পদ্ধতিতে বিষয়টি হওয়ায়, তা জটিল হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতির জন্য খাদ্য দফতর তার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না।’’