রাম নবমীর মিছিল নিয়ে সাম্প্রদায়িক হিংসা দেখে অভ্যস্ত বাঙালি জাতি হঠাৎ জানলো মুর্শিদাবাদের মফঃস্বল বেলডাঙায় কার্তিক লড়াই উপলক্ষ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসা হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের পর এটাই সম্ভবত প্রথম বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা।
অনেকে সেই সংঘাতে আহত হলেও, এবং অনেক ঘরবাড়ির ক্ষতি হলেও কেউ নিহত হয়েছে বলে কোনো খবর নেই। শনিবার রাত প্রায় ১০টা নাগাদ বেলডাঙায় শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক হিংসা নিয়ে মূলস্রোতের বাংলা সংবাদ মাধ্যমগুলো ফলাও করে খবর না করলেও সামাজিক মাধ্যমে হিন্দুত্ববাদী প্রচার মাধ্যম সেই নিয়ে বেশ মাতামাতি করে। কিন্তু একদিকে মূলস্রোতের সংবাদ মাধ্যমের ঘটনাটিকে প্রায় চেপে রেখে শুধু আইন শৃঙ্খলার ব্যাপারে খবর করা আর হিন্দুত্ববাদী শিবিরের এই নিয়ে জোরদার প্রচারের ফলে বেলডাঙায় সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হয়।
পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের প্রধান উৎসব দূর্গা পূজা মনে করা হলেও, হুগলি জেলার চন্দন নগর এবং সংলগ্ন এলাকার জগদ্ধাত্রী পূজার মতন পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া বা মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার মত মফস্বলের হিন্দু বাঙালিদের প্রধান উৎসব কার্তিক লড়াই। যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য, কার্তিক সহ বিভিন্ন দেবতা বা পৌরাণিক চরিত্রদের মূর্তি নিয়ে যুবকদের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা।
সেই কার্তিক পূজা ঘিরেই নাকি বেলডাঙা অঞ্চলে হিংসা ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ তোলে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) পরিচালিত ভারত ইউনিয়নের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্ব। সেই সংঘাত নাকি হিন্দুদের বিরুদ্ধে সংগঠিত করেছে মুসলিমেরা, এই অভিযোগ করেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য।
“পশ্চিমবঙ্গ হিন্দুদের কবরে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেক উৎসব, পুজো সেখানে আক্রমণের শিকার হচ্ছে,” লিখে এক্সে (সাবেক টুইটার) অভিযোগ করেন মালব্য।
মালব্যের পোস্টের ঠিক তিন মিনিট পরে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার একই সুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তোষণের রাজনীতিকে আক্রমণ করে এক্সে পোস্ট করেন।
এরপর রবিবার সকালে এই বেলডাঙার সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা নিয়ে প্রথম সংবাদ করে হিন্দুত্ববাদী আরএসএস-ঘনিষ্ঠ পোর্টাল অপইন্ডিয়া।
অপইন্ডিয়ার রিপোর্টটি পড়ে মনে হতে পারে, কার্তিক লড়াই করাটাকেই মুসলিমরা ঈশ্বর দ্রোহীতা তকমা দিয়ে বেলডাঙার হিন্দুদের উপর হামলা করেছে। মালব্যের পোস্টের মতনই এই প্রতিবেদনে কোথাও সংঘাতের আসল কারণটি নিয়ে আলোচনা করা হয়নি।
কেন পশ্চিমবঙ্গের বেলডাঙার কার্তিক লড়াই কে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি হলো? কেন সমগ্র এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হলো, সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রেখা আরও বলিষ্ঠ ভাবে চিত্রিত হলো?
বেলডাঙায় সাম্প্রদায়িক হিংসা হলো কেন?
শনিবারের সাম্প্রদায়িক হিংসার পর আতঙ্কের স্তব্ধতা এবং উৎসবের উচ্ছাসের অদ্ভুত এক মেলবন্ধন দেখলো বেলডাঙা।
শনিবারের হিংসার পরে, রবিবার সন্ধ্যের দিকে প্রায় বনধের চেহারা নিয়েছিল গোটা এলাকা। রাস্তাঘাট শুনশান, প্রায় সমস্ত দোকান বন্ধ। এরই মধ্যে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় যুবকদের বিক্ষিপ্ত জটলা। মাঝে মাঝেই কানে উঠে উড়ে আসছে একটিই শব্দ ‘আরএসএস’।
অন্যদিকে এই আতঙ্কের মাঝেই হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় চলছে কার্তিক লড়াইয়ের শোভা যাত্রা। তবে শোভা যাত্রায় অংশগ্রহণকারী যুবক এবং বারান্দা থেকে শোভাযাত্রা দেখা মানুষ বাদে রাস্তায় তেমন লোক নেই বললেই চলে। মন্দির গুলোর সামনে বসেছে পুলিশী প্রহরা।
শনিবার সন্ধ্যায় হরিমতি স্কুল সংলগ্ন ‘গনেশ তলা পুজো কমিটির’ একটি লাইটিং (marquee) বোর্ডে দেখা যায় মুসলিম ধর্মালম্বীদের আরাধ্য ‘আল্লাহ’ নিয়ে একটি অশ্লীল কটূক্তি করা হয়েছে। সেই ডিসপ্লে বোর্ডের ভিডিও বানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছাড়া হয় এবং মূহুর্তে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
রাতের দিকে উত্তেজনা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষের রূপ নেয়। এই বোর্ডের কথা বেমালুম চেপে যাওয়া হয়েছে অপইন্ডিয়ার তরফে। যদিও পরবর্তীতে গণেশ তলা পুজো কমিটির এই মেনু বোর্ডের নির্মাতা হিসেবে উঠে আসে এক মুসলিম ব্যক্তির নাম। আর তখন নিজেদের তত্ত্ব বদলিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেন বিজেপি নেতা তরুণ জ্যোতি তেওয়ারি।
জানা গেল সংঘর্ষের কেন্দ্র ডিসপ্লে বোর্ডিটি, যেখানে আল্লাহ’র নামে কটুক্তি করা ছিল, সেটি বানিয়েছিলেন একজন মুসলিম, নাম বাশের শেখ। মাঝপাড়ায় তাঁর বাড়ি।
মাঝপাড়ার শুনশান গলির মধ্যেই একটি খোলা চায়ের দোকানে শেখের খোঁজ করতেই, বেঞ্চে বসা একজন মধ্যবয়স্ক এগিয়ে এসে বললেন তিনিই বাশের শেখ।
প্রথমে ঘটনা নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি না হলেও, শেষ পর্যন্ত রাজি করানো গেল।
তাঁর দাবি এই ঘটনার জন্য তিনি দায়ী নন। তাঁকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছে বলে মানসিকভাবে তিনি যে বিপর্যস্ত বোধ করছেন তাঁকে দেখেই সেটা বোঝা যাচ্ছে। শেখ নিজের মোবাইল খুলে দেখালেন পুজো কমিটির চাহিদা অনুযায়ী তিনি marquee-তে লিখেছিলেন “শ্রী শ্রী গণেশতলার মোচ্ছোব’’।
শেখ বলেন সন্ধ্যা ৬টার আগে তিনি পুজো কমিটিকে বোর্ড চালিয়ে দেখিয়ে বাড়ি চলে এসেছিলেন। “এর পর ৭টা নাগাদ প্যান্ডেলওয়ালা ফোন করে বললো ‘বাসার দা তোমার মেনুবোর্ডটা ভুলভাল চলছে, তাড়াতাড়ি এসো’ এর পর আমি ওখানে গিয়ে দেখলাম পুজো কমিটি বোর্ডটা বন্ধ করে দিয়েছে,” বললেন শেখ।
শেখের দাবি পুজো কমিটি তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে প্রোগ্রামটি দেখতে চায়। শেখ সেটা দেখান এবং পুজো কমিটি সন্তুষ্ট হয়ে তাকে রেহাই দেয়। সুতরাং শেখের দাবি অনুযায়ী, সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ তাঁর ফিরে আসা এবং ৭টা নাগাদ প্যান্ডেলওয়ালার তাঁকে ফোন করার মাঝে কোনো এক সময়ে কেউ ‘’মেনু বোর্ড’ এর প্রোগ্রাম বদলে দিয়েছে।
কিন্তু এটা কী ভাবে সম্ভব? শেখের দাবি সেটা সম্ভব, কারণ বেশির ভাগ মেনুবোর্ডের পাসওয়ার্ড একই হয়। ফলে যে একটি মেনুবোর্ডের পাসওয়ার্ড জানবে সে যে কোনো মেনুবোর্ড খুলতে পারবে। একই পাসওয়ার্ড হওয়ায় এটা জানা কঠিন কিছু নয়। মোবাইলের সাহায্যে যে কেউ এটা বদল করতে পারে।
প্রসঙ্গত গত দুর্গাপুজোতেও শেখ ঐ পুজো কমিটির কাজ করেছিলেন। এইবার কার্তিক লড়াইয়েও বিভিন্ন পুজোর লাইটিং তিনিই করেছেন। যদিও এই ব্যবসায় তিনি নতুন। এর আগে সবজির ব্যবসা করতেন,কিন্তু বিশেষ সাফল্য না মেলায় নতুন ব্যবসা খুলেছিলেন। কিন্তু এই ঘটনার পর তার নতুন ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন। এইবারের ভাঙচুরের ফলে তার ৯০ হাজার টাকার মতন ক্ষতি হয়েছে বলে হিসেব করে জানালেন শেখ।
শেখের দাবির সত্যতা যাচাই করা গেল গণেশতলা পুজো কমিটির সদস্যদের কাছে। বিসর্জনের ঘাটে দাঁড়িয়ে তাপস হোর বলেন, “বাশের ৬টার আগে মেনু বোর্ড চালিয়ে দেখিয়ে চলে গেছিল কমিটিকে। এরপর আমরা সবাই মহাপ্রসাদ বিতরণের কাজে ব্যস্ত ছিলাম, হঠাৎ শুনতে পেলাম এই অবস্থা! কী ভাবে কী হল বুঝতে পারছি না।”
পুজো কমিটি বাসারকে ক্লিনচিট দিলেও, হিন্দু এলাকার অনেকে এর মধ্যে শেখেরই দোষ দেখছেন। সামাজিক মাধ্যমেও শেখের নাম নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে যা নিয়ে তেওয়ারির মতন বিজেপির নেতারাও মন্তব্য করেছেন। যদিও সম্পূর্ণভাবে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় এই নিয়ে অবগত নন শেখ।
এই নিয়ে তদন্তে কোনো অগ্রগতি হয়নি এবং কে পাসওয়ার্ড বদলেছে তা এখনো তদন্তে ধরা পড়েছে বলে জানা যায়নি।
বেলডাঙায় সাম্প্রদায়িক হিংসার পরের পরিস্থিতি
বেগুনবাড়ি হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন সোমবার থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। আসাদুজ্জামানের কাছে বার বার ফোন আসছিল চিন্তিত অবিভাবক এবং শিক্ষকদের। আসাদুজ্জামানের মতে স্বাভাবিক ভাবে পূর্ব নির্ধারিত নির্ঘন্ট অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়ার পরিস্থিতি এখন আছে। যদিও তিনি বলেন, “পুলিশ প্রশাসন যদি পরীক্ষা বন্ধ রাখতে বলে, তাহলে বন্ধ রাখতে হবে। কারণ পরিস্থিতি ওরাই ভালো বলতে পারবে। তবে আমার মনে হয় না অসুবিধা হবে।”
রবিবার রাতে প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে আসাদুজ্জামান জানালেন পূর্ব নির্ধারিত সূচী অনুযায়ী সোমবার থেকেই শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা।
ঘোষ পাড়ার সংকট
বেলডাঙার সাম্প্রদায়িক হিংসার পরের দিন, রবিবার, বাজার খুললেও, দুধ বিক্রেতারা কেউ দুধ বিক্রি করতে আসেননি।
প্রসঙ্গত, দুধ বিক্রেতা ঘোষদের অঞ্চলগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির ঘাঁটি হিসাবে বেলডাঙা সহ রাজ্যের নানা অঞ্চলে পরিচিত। সেই ঘোষ পাড়ায় নাকি হিংসা হয়েছে বলে জানা যায় তবে যেহেতু একটি আতঙ্কের পরিবেশ ওখানে বিরাজমান তাই কোনো টোটো ওয়ালাও ঐদিকে যেতে রাজি হচ্ছিল না।
ঘোষ পাড়ার অন্যদের মতন অমর ঘোষও (৪৫) রবিবার দুধ বিক্রি করতে যেতে পারেননি। হিসেব করে বললেন তার হাজার তিনেক টাকার মতন ক্ষতি হয়েছে। “আল্লাহ’র নিয়ে গালাগালি করাটা অন্যায়। তাঁর ধর্ম, তাঁর কাছে, আমার ধর্ম আমার কাছে।’’ বললেন অমর।
অমর আরও বলেন ‘’মুসলিমদের বাড়িতে দুধ দোয়াতে যেতে হয়, ওদের বাড়িতেই দুধ বিক্রি করি। ওরা হয়তো আমাকে কিছু বলবেনা, ঝামেলা হলে বাঁচাবেও হয়তো। কিন্তু রাস্তায় কিছু হলে তখন তাঁরা তো বাঁচাতে পারবে না।”
ঘোষ পাড়ার এক বছর কুড়ির যুবকের প্রশ্ন, “আগে বলুন তো, আপনি হিন্দু তো?” তিনি আরও বলেন, “হিন্দু হলে ঠিক আছে। হিন্দুকে হিন্দুর দুঃখের কথা বলতে হবে। হিন্দুই আসলে সংখ্যালঘু, এই সংখ্যালঘু নির্যাতন মেনে নেওয়া যায় না। ওরা নিজেরা গোল টেবিল মিটিং করে এই চক্রান্তটা করলো, আমরা হিন্দুর ছেলে, কোনো নোংরা কথা বলতে গিয়ে আমাদের গায়ে বাঁধে, বেলডাঙায় কার্তিক লড়াই বা হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব বন্ধ করে দেওয়ার জন্যেই এটা করা হয়েছে।” এই যুবক তাঁর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কারণ তাঁর দাবি তাঁকে মুসলিমদের সাথে ব্যবসা করে খেতে হবে।
সুমন ঘোষ (২২) বলেন “যে দোষ করেছে, ওরা সেই লাইট ম্যানকে নিয়ে যাক। যে কোনো শাস্ত্রে গাল দিলে, এটা একটা খারাপ বিষয়। আমার শাস্ত্রকে কেউ গাল দিলে আমি তাকে অপমান করবো। কেউ ওদের শাস্ত্রকে গাল দিয়ে থাকলে সে অন্যায় করেছে। ন্যায় বিচার চাই। কিন্তু আমাদের সবার উপর আক্রমণ কেন হল?’
শনিবার রাতে যে অঞ্চলগুলোতে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম কামারপাড়া এবং কাহারপাড়ার মধ্যে ইঁট ছোড়াছুড়ি ও বাড়ি ভাঙাভাঙি হয়েছে। কামারপাড়া হিন্দু এবং কাহারপাড়া মুসলিম অধ্যুষিত।
কামারপাড়া ও কাহারপাড়া
কামারপাড়ার ১৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রেমানন্দ হালদার (৪০) মাছের ব্যবসায়ী। রবিবার সকালে তাঁর মাছের ব্যবসা হয়নি। হালদার বলেন ‘’ঝামেলা,ইট মারামারির জন্য অনেক রাত অবধি জাগতে হয়েছিল, আত্মীয় ঠাকুর দেখতে এসেছিল, রাতে তাঁরাও বাড়ি ফিরতে পারেনি। সকালে তাঁদের নিরাপদে এগিয়ে দিয়ে আসতে হয়েছে, তাই আজ আর ব্যবসা হয়নি।”
কামারপাড়ায় দেখা গেল শনিবার রাতের ব্যাপক ভাঙচুর এবং ইট বৃষ্টির নমুনা। ভাঙা টালি, তোবড়ানো দোকানের শাটার, ভাঙা দরজা, ইত্যাদি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সকাল ৯টা নাগাদ পৌরসভা দুই ট্রাকটর ইট তুলে রাস্তা পরিস্কার করে গেছে।
ষাটোর্ধ বৃদ্ধ দিনবন্ধু হালদারের বাড়ি দুই পাড়ার সীমানা লাগোয়া। রাত ১০টা নাগাদ প্রসাদ খেয়ে এসে টিভি দেখছিলেন বৃদ্ধ। এমন সময় সংঘর্ষ শুরু হয়। দাঙ্গাকারীরা নাকি এলাকার বেশ কিছু বাড়ির মতন, তাঁর বাড়িরও টালির চাল ভেঙে দেয়, দুটি ভাড়া খাটানোর মারুতি ভ্যান, একটি টোটোতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
তাঁর ছেলে, যিনি ভাড়ার গাড়ি চালান, শনিবারের সংঘর্ষে মাথা ফেটে গুরুতর আহত। হালদার বলেন, “আমার বাড়িতে কেন হামলা হলো? আমি ভালো মন্দ কিছুই জানিনা। গাড়ি পুড়ে গেছে, ছেলে আহত, কোনো রোজগার হয়নি।”
উদীয়মান আশংকা
ধীরে ধীরে বেলডাঙায় সাম্প্রদায়িক হিংসার প্রভাব কমে যাবে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে মনে করেন স্থানীয় মানুষরা। কিন্তু মুসলিম আলোকসজ্জা শিল্পী কারিগরেরা হিন্দুদের পুজোয় আর আগের মত বরাত পাবেন কি? নতুন আরেকটি ফাঁক দেখিয়ে দিল বেলডাঙা। যদি এইভাবে ডিসপ্লে মেনু বোর্ড সত্যি এত সহজে বদলে দেওয়া যায়, তবে এটাই আগামি দিনে ধর্মীয় হানাহানি সৃষ্টির অন্যতম পদ্ধতি হয়ে উঠবে না তো?