যোগী আদিত্যনাথের গড় গোরক্ষপুরে, অক্সিজেনের অভাবে শিশু মৃত্যু ঠেকাতে গিয়ে রাজ রোষে পড়েন ডা কাফিল খান। মানুষের কাছে দেবতায় পরিণত হওয়া একজন ডাক্তারকে রাতারাতি শয়তান বানাবার প্রচেষ্টায় মাঠে নামে শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং প্রশাসন। যদিও তদন্তে তিনি বেকসুর খালাস হন। এর পর নাগরিকত্ব আন্দোলনের সময় সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনে গ্রেফতার করা হয় ডাক্তার খান কে। ২০১৭ থেকেই তিনি বিজেপি-বিরোধী আন্দোলনের একটি প্রতিষ্ঠিত মুখ হয়ে রয়েছেন।
সম্প্রতি ডা খান কলকাতা এসেছিলেন তিনটি বিশেষ কাজে। এরই ফাঁকে আরজি কর, বঙ্গে বন্যা থেকে লোকসভা নির্বাচনের পর উত্তর প্রদেশের রাজনীতি সহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার নিলেন সৌম্য মন্ডল।
সৌম্য: ২০১৭ সালে আপনার সাথে যে ঘটনা ঘটেছিলো, তার পর সাত বছর পার হয়ে গেছে…
ডা কাফিল খান: আট বছর।
সৌম্য: হ্যাঁ, আট বছর, এর মধ্যে আপনার চাকরিও চলে গেছে, অন্যদিকে তদন্তে আপনি বেকসুর খালাসও হয়েছেন। এখন কী পরিস্থিতি? আপনার চাকরি কি ফিরে পাচ্ছেন?
ডা কাফিল খান: বিভাগীয় তদন্তে চিকিৎসায় অবহেলা বা দূর্নীতির কোনো প্রমাণ না থাকার সত্ত্বেও, ২০২১ সালের ৯ই নভেম্বর আমাকে স্থগিত করে দিয়েছে উত্তর প্রদেশ সরকার। অভিযোগ থেকেও রেহাই মেলে।
এ ছাড়াও ১০ই অগাস্ট ২০১৭ সালে যে ঘটনা ঘটেছিলো, তার পর ২২শে অগাস্ট ২০১৭ সালে আমাকে সাসপেন্ড করা হয়েছিলো। প্রায় চার বছর আমি সাসপেন্ড ছিলাম। হাই কোর্টে গেছিলাম, সুপ্রিম কোর্টে গেছিলাম।
শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট আমার সাসপেনসনে স্থগিতাদেশ দেয়। কোর্ট জিজ্ঞাসা করে ছিল নয় জন অভিযুক্তের মধ্যে সাত জনকে আপনি চাকরি ফিরিয়ে দিয়েছেন, একে কেন চার বছর সাসপেন্ড করে রেখেছেন? হাইকোর্ট এটা সরকারকে ব্যাখ্যা করতে বলেছিল।
সৌম্য: কোন নয় জন?
ডা কাফিল খান: বাবা রাঘব দাস মেডিক্যাল কলেজে যখন অক্সিজেন নিয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, তখন নয় জনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছিল। সরকার এদের চাকরি দিয়ে দিয়েছে, এরা প্রতিবাদ করেনি বা অন্য যে কারণেই হোক, সরকার এদের চাকরি ফিরিয়ে দিয়েছে।
হাইকোর্টের বক্তব্য এবং তদন্ত কমিটির পরেও আমাকে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ৯ই নভেম্বর ২০২১ এ যখন আমাকে বের করে দেওয়া হল তার পরেই দুই মাসের মধ্যে আমি মামলা করেছি উত্তর প্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে, যে আমাকে চাকরি থেকে কেন বের করে দেওয়া হল। গত দুই বছর লক্ষ্ণৌ হাই কোর্টে এই মামলা চলছে।
সৌম্য: গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ফল উত্তর প্রদেশে ভালো হয়নি, অন্য দিকে বিরোধীরা ভালো ফল করেছে, কী মনে হয়, পরিস্থিতি বদলাবে?
ডা কাফিল খান: দেখুন আমি মনে করি, দেশে ২০১৪ সালের পর থেকে ধর্ম এবং জাতের নামে যে রাজনীতি চলছে, তাতে একটা ধাক্কা অবশ্যই লেগেছে। ২০২৪ এর ফলে অবশ্যই ধাক্কা লেগেছে।
আপনি ব্যাপারটা এইভাবে দেখতে পারেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে কাজ করছিলেন, কতৃত্ববাদী পদ্ধতিতে, এখন মনে হয় সেটা দেখা যাচ্ছে না। অনেক কিছু তিনি নিয়ে এসেছিলেন, তার মধ্যে অনেক কিছু তাকে ফিরিয়ে নিতে হয়েছে। এমনকি পার্টির ভিতরেও তার বিরুদ্ধে কিছু লোক বলতে শুরু করেছেন।
কিছুদিন আগে আপনি নিশ্চয়ই নিতিন গডকরির মন্তব্য শুনেছেন, আমিও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলাম, ভেতরেও এই ধরনের কথা লোকে বলতে শুরু করেছে। কিছু পরিবর্তন হয়নি এমনটা নয়। অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে।
মানুষের মধ্যে কথা বলার সাহস এসেছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনেও আমি উত্তর প্রদেশে দেখেছিলাম, তার দুই বছর আগেই উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিলো, ঐ সময় জনতা কথা বলতে ভয় পেত।
২০২৪ সালে সাধারণ জনতা, কোনো পার্টির লোক বলছি না, সাধারণ জনতাও বাইরে এসে বলেছিলো, আমাদের কেবল রাম মন্দির চাইনা, আমাদেরও খাবার চাই, ঘর চাই, আমাদেরও কর্মসংস্থান চাই।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব নিয়ে মানুষ রাস্তায় নেমেছে। যার ফলে অর্ধেক আসন বিরোধীদের হাতে এসেছে। আজ এই পরিস্থিতি এসে দাঁড়িয়েছে যে মানুষ বলছে ২০২৭ সালে যে বিধানসভা নির্বাচন হবে, সেখানে সরকার পরিবর্তন হবে।
আর অভ্যন্তরীণ ভাবে, আপনারা হয়তো শুনেছেন উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মহোদয় কীভাবে বিদ্রোহ করেছিলেন এবং বহু সাংসদ, বিধায়ক বিদ্রোহ করছেন।
ধর্মীয় রাজনীতি বেশি দিন চলে না, মানুষকে বুঝতে হবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি, মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত দাবিগুলো শুধু সংখ্যালঘুর বা দলিতের দাবি নয়, এগুলো সবার দাবি।
সৌম্য: এখন আপনি বন্যা কবলিত ডেবরা থেকে ফিরলেন, কী দেখলেন? পরিস্থিতি যদি একটু ব্যাখ্যা করেন।
ডা কাফিল খান: পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আমি বলবো যে, এত খারাপ আমি ভাবিওনি। হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যে প্রাইমারি স্কুলে আমাদের শিবির ছিল, তার উপরে একটা হলে ৮৬ জন থাকছিল! সেখানে মহিলারা ছিল, বাচ্চারা ছিল, বয়স্করা ছিল। আমার নিজের জেলে থাকার দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল।
জেলে আমরা দুই ফুট চওড়া, ছয় ফুট লম্বা জায়গা পেতাম। যেখানে আপনাকে নিজের জিনিস পত্র রাখতে হবে, শুতেও হবে। আপনার কাপড়, আপনার ব্রাশ-মাজন, বাসন সব কিছু ওর মধ্যেই রাখতে হতো।
এই ভাবেই ওরা (বন্যার্তরা) ছোটো ছোটো জায়গা নিজেরা ভাগ করে নিয়েছিল। অবশ্যই তারা খাবার পাচ্ছে, তবে ওরাই বলছিলেন, ঘরের জিনিসপত্র সব ডুবে গেছে, চলে গেছে, বন্যায় সব নষ্ট হয়ে গেছে।
আমার মনে হয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যে দুর্যোগ মোকাবিলা তহবিল আছে, সেখান থেকে ওদের সাহায্য পাওয়া দরকার, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকেও সাহায্য পাওয়া দরকার। আরো অনেক কিছু করা দরকার।
সৌম্য: ডাক্তার হিসেবে আপনি পশ্চিম বঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রককে বা দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগকে কী উপদেশ দেবেন এই বন্যার প্রেক্ষিতে? তাদের কী করা উচিৎ?
ডা কাফিল খান: দেখুন যখনই কোনো বন্যা আসে, তার পর যা দেখা যায়, তা হল, বন্যার জল সরে যাওয়ার পরে বহু রোগ রেখে যায়। যেমন ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া, চামড়ার রোগ, বিশেষত আমরা ওখানে দেখলাম, বহু শিশুর চামড়ার রোগ হয়ে গেছে। চোখে কানে বিভিন্ন রোগ হয়। এই ধরনের রোগের মোকাবিলা করা প্রয়োজন।
আমরা যাই বলি, পশ্চিমবঙ্গকে রুগ্ন রাজ্য গুলোর মধ্যে না ধরা গেলেও, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভালো নয়, যদি আপনি তুলনা করেন দক্ষিণ ভারতের সাথে, এই দেশে থেকেও। মেদিনীপুরে গেছি, দক্ষিণ ২৪ পরগণাতেও গেছি। এখানে ডাক্তার রুগী অনুপাত খুবই খারাপ।
প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, যা যে কোনো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার শিরদাঁড়া হয়, তা একদমই ভালো নয়। আপনাকে একটা ভিডিও দেখাচ্ছি, একটা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র গেছিলাম। আমি দেখে তাজ্জব হয়ে গেছি যে এটা একটা স্বাস্থ্য কেন্দ্র হতে পারে! প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এত খারাপ অবস্থা হওয়া উচিৎ নয়। রাজ্য সরকারকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ করতে হবে। স্বাস্থ্য রাজ্য সরকারের দায়িত্ব।
(একটি ভিডিও দেখাতে দেখাতে) দেখুন এটা স্বাস্থ্য কেন্দ্র? ভুতের বাড়ি মনে হচ্ছে। এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজনই ডাক্তার, একজন নার্স এবং একজন ফার্মাসিস্ট, গোটা গ্রামকে সেবা করার জন্য। দেখুন অবস্থা! পড়তে পারছেন? এটা ত্রিলোচনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র।
আমি মনে করি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, যার সাথে গ্রামের মানুষের প্রথম যোগাযোগ হয়, তাকে ঠিক না করতে পারলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঠিক হনে না।
সৌম্য: কিছুদিন আগে কলকাতায় একজন নারী ডাক্তারকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়, তার পর জুনিয়ার ডাক্তাররা যে আন্দোলনে নেমেছে, সেটা আপনি পর্যবেক্ষণ করছেন?
ডা কাফিল খান: আমি কলকাতায় তিনটি কারণে এসেছি। প্রথম কারণটি হলো আরজি কর আন্দোলন। আরজি করে মহিলা ডাক্তারের সাথে শুধু ধর্ষণ হয়নি, তার উপর নির্যাতন হয়েছে, জানোয়ারের মত মারা হয়েছে, ধর্ষণ করা হয়েছে।
তারপর যা হয়েছে, তাতো আপনারা জানেনই, কী ভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যে আসামি গ্রেফতার হয়েছে, তার তিনিটে বিয়ে হয়েছিল, এবং তিন জন মহিলাই তার বিরুদ্ধে অত্যাচার, মারধোরের মামলা করেছে। তাকে পুলিশ বন্ধু (সিভিক ভলান্টিয়ার) বানিয়ে মেডিক্যাল কলেজে অবাধ ছাড় দেওয়ার কোনো মানে বুঝতে পারছি না। এর জন্য অনেক লোকের শাস্তি হওয়া উচিৎ।
সৌম্য: জুনিয়ার ডাক্তারদের যে আন্দোলন…
ডা কাফিল খান: আরজি কর শুধু জুনিয়ার ডাক্তারদের আন্দোলন নয়। কলকাতায় যে আন্দোলন হতো…আপনি যদি ইতিহাস দেখেন বাংলা থেকে আন্দোলন শুরু হতো গোটা ভারতে…পার্ক স্ট্রিট চলন্ত গাড়িতে একটা ধর্ষণ হয়েছিলো, তার পর আজ তার সব অভিযুক্ত জেলের বাইরে।
সৌম্য: আপনি কী পার্ক স্ট্রিটে ঘটনার কথা বলছেন?
ডা কাফিল খান: হ্যাঁ, পার্ক স্ট্রিট। কিন্তু মানুষ তখন রাস্তায় আসেনি। আমার মনে হয়, প্রতিবাদ করার অর্থাৎ আপনার মনের কাছে আপনার মাথার কাছে যা অন্যায় মনে হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ক্ষমতা বাঙালিদের মধ্যে কমে গেছিল। সেই আন্দোলন দেখা যাচ্ছিল না। আরজি কর সেই আবেগ বাঙালিদের মধ্যে আবার নিয়ে এসেছে।
এই আন্দোলনটা আমি শুধু ডাক্তারদের আন্দোলন হিসেবে দেখিনা। এটা প্রত্যেক সচেতন মানুষের আন্দোলন। যারা মনে করেছে, যা হয়েছে, তা খারাপ হয়েছে।
এত বড় আন্দোলন যা ৪২ দিনের মত চলছে, তা এমনি হয় না। অনেকদিন ধরে একটু একটু করে ক্ষোভ জমতে জমতে একদিন আগুন লাগে। যা কিছু গত কিছু বছরে হচ্ছিল, মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ ছিল, তা বাইরে এসেছে।
সৌম্য: জুনিয়ার ডাক্তারদের বিরুদ্ধে যে সমালোচনা আসছে যে, তারা ডিউটি ছেড়ে আন্দোলন করছে, সেটা নিয়ে কী বলবেন?
ডা কাফিল খান: না, দেখুন, এখন তো তারা জরুরি পরিষেবা দিতে শুরু করে দিয়েছে। ওপিডি-ও মোটামুটি চলছে। আজকেও জানেন কনভেনশন হয়েছে, সেখানে জুনিয়ার ডাক্তাররা জমায়েত হয়েছিল, সাধারণ মানুষকেও তারা ডেকেছিল।
ওদের নেতা আজকে বললেন, এমন নয় যে আমরা পিছু হঠে গেছি। আমাদের যা দাবি সম্পূর্ণ ভাবে আদায় না হওয়া অবধি, আমাদের আন্দোলন চলবে। কিন্তু আমাদের এটাও বুঝয়ে হবে, যে সাধারণ মানুষ ৪২ দিন ধরে আমাদের সাথে ছিল, তাদেরও কতটা সমস্যা হচ্ছে।
যদি কারো অপারেশন করাতে হয়, কতদিন অপেক্ষা করবে, কারো যদি ক্যানসার হয়, কতদিন কেমো থেরাপির জন্য অপেক্ষা করবে? কারাও যদি জটিল রোগ থাকে, অন্তঃসত্ত্বা হন…ঐ প্রাইমারি স্কুলেও (ডেবরা) একজন নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ছিল, আমি তাকে প্রশ্ন করেছিলাম আপনার প্রসব এই স্কুলে হয়ে গেলে কী করবেন আপনি? বাচ্চার কী হবে? আপনার কী হবে? এসব তো আমাদের ভাবতে হবে।
কিন্তু সরকারও তো এমন করেনি যে, আন্দোলনটাকে পুরো পিষে দিয়েছে। (পুলিশ) কমিশনারকে সরাবার যে দাবি ছিল সেটা মেনে নেওয়া হয়েছে, স্বাস্থ্য সচিবকে সরাবার দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। দাবি ছিলো হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়ানোর। আজই আমি সংবাদপত্রে পড়লাম যে ১২,০০০ পুলিশ কর্মীর নিয়োগ সোমবার থেকে শুরু হতে চলেছে।
ধর্ষণ থামাবার প্রধান যে দাবি, আপনারা জানেন যে গোটা ভারতে প্রতিদিন ৯০টা ধর্ষণ হয়। দুই তিন দিন আগে গুজরাতে দশ মাসের একটা বাচ্চার ধর্ষণ হয়েছে। ৬০-৭০ বছরের মহিলাদের সাথেও ধর্ষণ হয়ে যাচ্ছে। এটা পরিবর্তন করা অনেক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আমাদেরকে নিজেদের ঘরের বাচ্চাদেরকে, শুধুমাত্র মেয়েদের নয়, ছেলেদেরও শেখাতে হবে, ভালো স্পর্শ, খারাপ স্পর্শ, সভ্যতা শেখাতে হবে। তার পর আমাদের সমাজ থেকে এই সমস্যা দূর হবে।
সৌম্য: শেষ প্রশ্ন, কাল আপনার বইয়ের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হবে, বইটা এই এই রাজ্যে কতটা জনপ্রিয় হবে বলে আশা রাখেন?
ডা কাফিল খান: দেখুন গোরক্ষপুর হাসপাতালের মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে আমি যে বই লিখেছি, তা দশটি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। প্রত্যেক ভাষাতেই খুব ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছি।
সৌম্য: বাংলা ছাড়া দশ নাকি বাংলা নিয়ে দশ?
ডা কাফিল খান: বাংলা সহ দশটি ভাষায়। পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমি অনেক সমর্থন পেয়েছি। যখন আমি জেলে ছিলাম, আর যখন আমি জেল থেকে বাইরে বেরলাম, এখানকার মানুষ আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে।
এছাড়াও আমি যখন জেলে ছিলাম, তখন সবার আগে এবং সবচেয়ে বেশি প্রতিবাদ দুটো রাজ্যে হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরালা। লোকজন আমাকে না চিনেও, আমার জন্য রাস্তায় নেমেছিল। দল নির্বিশেষে, তা সেটা সিপিআই হোক, সিপিআই (এম) হোক, তৃণমূল কংগ্রেস হোক, কংগ্রেস হোক, এসইউসি হোক, যে কেউ হোক, সবাই আমার জন্য আওয়াজ তুলেছিলো। এই জন্যে আমিও এসেছি। গত কাল গিয়েছিলাম আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে, ওদের সংহতিতে দাঁড়াতে।
আমার মনে হয়, এই বই জনপ্রিয় হবে। আমার নিজের এই বই লেখার একটাই উদ্দেশ্য ছিলো, যে এই কাহিনী প্রত্যেকের কাছে পৌছানো উচিৎ। আজ এই বই হিন্দি, ইংলিশ, উর্দু,মালায়ালাম, তামিল, তেলেগু, কন্নর, আসামি, বাংলা, মারাঠিতে আছে।
আজকেও আমি যখন আপনার সাথে কথা বলছি, গত সাত বছরের যা কথা হল, সব সময় ডা কাফিল খান বা ঐ ঘটনা সম্পর্কে কথা হয়, কিন্তু ঐ ৬৩ জন শিশুর পরিবার নিয়ে কথা হয় না, যারা ন্যায় বিচারের জন্য অপেক্ষা করছে। আমার লড়াই হলো যে এই কাহিনী মানুষের মধ্যে যেন পৌঁছায় এবং ঐ পরিবার গুলোও ন্যায় পায়।
এর প্রভাব দেখুন শাহরুখ খানের যে জওয়ান সিনেমা, সেখানেও এই বই থেকে রেফারেন্স নেওয়া হয়েছিল, যদিও চরিত্র একজন মহিলা করে দেওয়া হয়েছিল।
আপনারা হয়তো জানেন মুম্বাই আর ব্যাঙ্গালোর সাহিত্য উৎসবে বইটা নির্বাচিত তালিকায় ছিলো। অনুবাদও চমৎকার হয়েছে। সেতু প্রকাশনীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে ওনারা সাহস দেখিয়েছেন। অনেক লোকেই এমন বিতর্কিত বই প্রকাশ করতে ভয় পায়, কারণ সরকারের কুনজরে না চলে আসে। কারণ এটা কোনো গল্প নয়, এটা সত্যি, প্রমাণ সহযোগে… চেষ্টা করেছি বইটাকে এমন ভাবে লিখতে, যাতে আপনি, মানে যে পড়ছে, তার যেন মনে হয়, সে ঐ হাসপাতালে দাঁড়িয়ে আছে, আর ঐ বাচ্চাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে।