ইউক্রেনে চলমান রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের মধ্যেই সোমবার, ২০শে মার্চ, চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ঐতিহাসিক মস্কো সফরে এলেন। শি-র মস্কো সফরের আগে এক সরকারি বিবৃতিতে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর পুরানো বন্ধু শি-র সাথে এক দশক পর পুনরায় সাক্ষাৎ হওয়া নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। পুতিনের বক্তব্য চীনা সংবাদমাধ্যম পিপলস ডেইলি তে প্রকাশিত হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, ২০১৩ তে প্রথমবার চীনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর শি প্রথম বিদেশ সফর করেছিলেন রাশিয়াতেই। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে ২০১৩ থেকেই রাশিয়া আর চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করে তোলার লক্ষ্যে শি এবং পুতিন একযোগে কাজ করে গেছেন।
বহুমেরুর বিশ্ব, বহুপাক্ষিকতা ও বিশ্ব শান্তির লক্ষ্যে চীন ও রাশিয়ার উদ্যোগ দুই রাষ্ট্রকেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে কৌশলগত ঐক্যমতে পৌঁছতে সাহায্য করেছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
দনবাসে সফররত পুতিন শি-র মস্কো সফরের আগে দেওয়া বার্তায় রাশিয়া আর চীনের মধ্যে থাকা “অভূতপূর্ব বোঝাপড়া” নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। পুতিন বলেছেন রাশিয়া আর চীন বহুদিন ধরেই উদ্যোগ নিয়ে চলেছে এমন একটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা পদ্ধতি গড়ে তুলতে যা কখনই তৃতীয় কোন রাষ্ট্রের ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াবে না।
শি তাঁর প্রত্যুত্তরে রাশিয়াকে ‘বন্ধু প্রতিবেশী’ উল্লেখ করে বলেছেন যে চীন এবং রাশিয়ার মজবুত বোঝাপড়া দশ বছর আগেই এক নতুন আঙ্গিকে শুরু হয়েছিল, রাজনৈতিক সেই বোঝাপড়াকেই মান্যতা দিয়ে দুই রাষ্ট্রই বিশ্ব শান্তির জন্য কাজ করে যাবে। তিনি বলেন যে চীন এবং রাশিয়ার মেনে চলা জোটহীন, বিরোধীতাহীন, তৃতীয় পক্ষকে আঘাত করা থেকে বিরত থাকা, ইত্যাদি নীতিই বিশ্বে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
রাষ্ট্রপতি শি আরও বলেন যে তিনি আশা করেন, সফরে রাষ্ট্রপতি পুতিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে গভীর মতবিনিময় হবে, নতুন যুগের চীন-রুশ কৌশলগত সমন্বয় ও বাস্তব সহযোগিতার পরিকল্পনা তৈরি হবে। তিনি বিশ্বাস করেন, এ সফর নিশ্চয় ফলপ্রসূ হবে। নিশ্চয় নতুন যুগে চীন-রুশ সার্বিক কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্কে নতুন শক্তি যুক্ত হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে শি-র মস্কো সফর এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হচ্ছে, যার ফলে এই সফর এক অন্য মাত্রা পেয়ে যাচ্ছে। তাদের মতে চীন এবং রাশিয়া বহুদিন ধরেই একে অন্যকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয়ে কৌশলগত সমর্থন দিয়ে আসছে।
চীন যেমন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উন্নতির লক্ষ্যে নিজের “ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড” উদ্যোগে রাশিয়ান সমর্থন পেয়েছে তেমনই রাশিয়ার আঞ্চলিক উন্নতির লক্ষ্যে গড়ে তোলা “ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন” চীনের থেকে সমর্থন পেয়েছে।
গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত হওয়া একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল যে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে হওয়া সামরিক অশান্তির মধ্যস্থতা করার লক্ষ্যে উদ্যোগ নিতে চায় চীন। ইউক্রেনে মার্কিন-পশ্চিমা জোটের হস্তক্ষেপের বিরোধীতা করে চীন বলে যে ইউক্রেনের সাথে অশান্তি থামাতে রাশিয়ার আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলির মতে রাশিয়া ইউক্রেন অশান্তির মধ্যস্থতার লক্ষ্যে বর্তমানে শি-র মস্কো সফরের পর হয়ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভোলোডিমির জেলেনস্কির সাথেও দেখা করতে পারেন।