গত রবিবার, ৫ই মার্চ, পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলার পক্ষে ইজরায়েল প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানইয়াহুর সাফাই বিশ্বে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।পারমাণবিক কেন্দ্রগুলি অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়। সেই কারণে সেখানে যেকোনো ধরণের সামরিক অভিযান বিশাল পারমাণবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে যা একটি নির্দিষ্ট দেশ নয় বরং গোটা বিশ্বকে ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (IAEA) প্রধান রাফায়েল গ্রসির তেহরান সফরে করা একটি মন্তব্যকে সমালোচনা করে নেতানইয়াহু পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলার পক্ষে সাফাই দেন, দ্য টাইমস অব ইজরায়েল তাদের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
গত শনিবার, ৪ঠা মার্চ, ইরানের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক চলাকালীন গ্রসি বলেন যে কোনো পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা অনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক আইন বিরোধী। জেনেভা কনভেনশন ১৯৪৯ এর প্রোটোকল একের ধারা ৫৬ এবং প্রোটোকল দুইয়ের ধারা ১৫ অনুসারে কোনো পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালানো যায়না। প্রাথমিকভাবে গ্রসি এই মন্তব্য করেছিলেন ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধে ইউক্রেনের ঝাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রে সামরিক সংঘাতকে উদ্দেশ্য করে।
পরে সাংবাদিকরা যখন ইরানের পারমাণবিক স্থলগুলির উপর ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাগাতার হুমকি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তখন গ্রসি জানান যে আন্তর্জাতিক আইনের ধারা সবধরণের পারমাণবিক কেন্দ্রের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
তারপরেই গত রবিবার একটি মন্ত্রীসভার বৈঠকে নেতানইয়াহু গ্রসির করা মন্তব্যকে সমালোচনা করেন। তিনি ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে করা গ্রসির বক্তব্যকে ‘মূল্যহীন’ দাবী করে প্রশ্ন তোলেন পারমাণবিক কেন্দ্রে সামরিক অভিযান কোন আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থী?
তিনি ইরানকে অভিযুক্ত করে বলেন যে ইরান প্রকাশ্যে ইজরায়েলকে ধ্বংসের হুমকি দেয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “ইরান কি গণবিধ্বংসী অস্ত্র দ্বারা আমাদের হত্যা করতে অনুমতিপ্রাপ্ত ? আমাদের উপর কি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে নিজেদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে ? আমরা অবশ্যই নিজেদের রক্ষা করব আর কোনকিছুই তা আটকাতে পারবে না।”
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ইজরায়েলকে অভিযুক্ত করে ইরান বলে যে ২০২১ এ তাদের ভূগর্ভস্থ নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রে ইজরায়েলই হামলা চালায়। হামলায় কেন্দ্রটির সেন্ট্রিফিউজগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর আগেও ২০২০ সালে ইরান ইজরায়েলের উপর অভিযোগ এনে বলে যে তাদের একজন সর্বোচ্চ সামরিক পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে ইজরায়েল কৌশলগত হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে।
২০১৫ সালে ইরান তার উপর থাকা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কমানোর জন্য একটি চুক্তির সাথে ঐকমত পোষণ করে। চুক্তিটি (Joint Comprehensive Plan of Action) হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউকে, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া, জার্মানি এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে (P5+1)। এই চুক্তির শর্তানুযায়ী, ইরান নিজেদের সংবেদনশীল পারমাণবিক কার্যক্রমে রাশ টানতে (ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ) ও নিজেদের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি মেনে নিয়েছিল।
২০১৮ তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে চুক্তিভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর ইরানের উপরও চুক্তির বাধ্যবাধকতা উপেক্ষা করে নিজেদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণের কাজ চালিয়ে যেতে থাকে বলে অভিযোগ ওঠে। চুক্তিতে এই অচলাবস্থার মাঝেই গ্রসি গত শুক্রবার, ৩রা মার্চ, ইরানে আসেন। শনিবারের বৈঠকের পর গ্রসি সাংবাদিকদের জানান যে ইরান তাদের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে পুনরায় নজরদারি ক্যামেরা বসাতে ও পর্যবেক্ষণ বাড়াতে রাজি হয়েছে।