Close

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন চীন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে চীন উদ্বেগ প্রকাশ করল। যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনকে উপেক্ষার জন্যও দুষল চীন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাইওয়ানের রাষ্ট্রপতির 'ট্রানজিট' কে নিয়ে চীন হুমকি দিল যুক্তরাষ্ট্রকে, বললেন চীন-তাইওয়ান একীকরণ অবশ্যম্ভাবী।

মঙ্গলবার চীন সরকারের দ্য স্টেট কাউন্সিল ইনফরমেশন অফিস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটিতে ২০২২ সালকে মার্কিন দেশে মানবধিকারের জন্য একটি বিপর্যয়কর বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম লিখেছে, ‘২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘন রিপোর্ট’ বিশ্বের কাছে দেশটিতে ঘটমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের বাস্তবতা প্রকাশ করেছে। এই ১৮ হাজার অক্ষরের রিপোর্টে বিভিন্ন উদাহরণ এবং বাস্তব সূচকের মাধ্যমে গত এক বছরে মার্কিন নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতা বঞ্চিত হওয়ার বাস্তব অবস্থা তুলে ধরেছে। 

এই রিপোর্টটিতে বলা হয়, বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোতে সবচেয়ে বেশি গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। ২০২২ সালে এমন ৩০২টি ঘটনা ঘটেছে, যা ১৯৭০ সালের পর সবচেয়ে বেশি। এখন গুলির আঘাত যুক্তরাষ্ট্রে শিশু মৃত্যুর শীর্ষ কারণ।

রিপোর্টটিতে আরও বলা হয় যে বর্তমানে দেশটির নাগরিকদের নিরাপত্তা নেই। এই অবস্থায় মার্কিন নির্বাচন ধনী মানুষদের খেলায় পরিণত হয়েছে, বর্ণবৈষম্য আরো বাড়ছে। ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান বেড়েই চলেছে। মার্কিনি মানবাধিকার সম্বন্ধে সেই দেশটির জনগণেরই আস্থা ভেঙ্গে পড়ছে।

এনবিসি’র ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর প্রকাশিত গণজরিপের ফল অনুযায়ী, ৭২ শতাংশ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভোটার, ৬৮ শতাংশ রিপাবলিকান পার্টির ভোটার এবং ৭০ শতাংশ নিরপেক্ষ ভোটার মনে করেন, দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে।

রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে যে মার্কিনিদের নিজেদের দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে হতাশাগ্রস্ত হওয়ার দু’টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে: একটি হল অর্থ, আরেকটি হল রাজনৈতিক পার্টির দ্বন্দ্ব। রিপোর্টটি আরও বলেছে যে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনীতিকে অপহরণ করছে অর্থ এবং ‘অর্থের সঙ্গে প্রতিশোধের’ সম্পর্ক রয়েছে। রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়, ২০২১ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে কোটিপতিদের রাজনৈতিক অবদান ফেডারেল রাজনৈতিক প্রকল্পের মোট অবদানের ১৫ শতাংশ। ফরচুন ম্যাগাজিন উল্লেখ করেছে যে যুক্তরাষ্ট্রে অল্প সংখ্যক অতি ধনী শ্রেণীর মানুষ তাদের অর্থনৈতিক মর্যাদা দিয়ে সরকারি নীতি ব্যবহার করতে পারে যাতে এসব নীতি তাদের সেবা করে এবং এইসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জনগণের শক্তির অভাব দেখা যাচ্ছে। ম্যাগাজিনটির মতে এই অবস্থায় জনগণকে আদৌ কেউ গুরুত্ব দেয় কীনা তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

রিপোর্টটি বলেছে যে রাজনীতির মেরুকরণ ইতোমধ্যে মার্কিন রাজনীতির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে, বিশেষত গত কয়েক বছর দুই রাজনৈতিক দলের দ্বন্দ্ব ও বৈরিতার অনেক অবনতি হয়েছে। রিপোর্টটি জানাচ্ছে এর ফলে সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে এবং দেশের রাজনীতি ভালোভাবে কাজ করতে পারছে না। গভট্র্যাক (govtrack) ওয়েবসাইটের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মার্কিন কংগ্রেসে আইন প্রণয়নকারীর সংখ্যা ৪২৪৭ থেকে মাত্র ২০৮১টিতে নেমে এসেছে। এই পরিসংখ্যান উল্লেখ করে রিপোর্টটি বলে যে যখন রাজনৈতিক স্বার্থ ও গ্রুপের স্বার্থ শীর্ষে থাকে, তখন জনস্বার্থ অগ্রাধিকার পায়না।

রিপোর্টটি যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার অবস্থার ক্রম অবনতির দিকে ইঙ্গিত করে বলে যে সরকার এই পরিস্থিতি উপেক্ষা করছে এবং মানবাধিকারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে। রিপোর্টটি ২০শে মার্চ ইরাক যুদ্ধের ২০তম বার্ষিকীর কথা উল্লেখ করে বলে যে মার্কিন রাজনৈতিক মহল এ বিষয়ে আত্মসমালোচনা করেনি, বরং অব্যাহতভাবে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে হাঙ্গামা ও যুদ্ধ সৃষ্টি করছে এবং একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যাচ্ছে, যার ফলে বিশ্বশান্তি ও উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

Leave a comment
scroll to top