শহর কলকাতা যখন যৌবনের আগুন ঝরে পড়া আন্দোলনে মগ্ন ঠিক তখন, কলকাতা শহর থেকে অনতিদূরে উত্তর চব্বিশ পরগনার সোদপুর লোকসংস্কৃতি ভবনে জড়ো হয়েছেন কমবেশি ৭০ জন অশীতিপর বৃদ্ধ। কেন না, পেনশনের দাবিতে। গতকাল সোদপুর ইপিএফ পেনশনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ১৪ তম বার্ষিক সম্মেলন ছিল। সারা ভারত জুড়ে গত প্রায় ১০ বছর ধরে যে পেনশনার্স আন্দোলন চলছে, সেই আন্দোলনের একটি অন্যতম অংশ এই ইপিএফ পেনশনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সম্মেলনের ফাঁকে সাংবাদিকদের জন্য বরাদ্দ সময়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মুখোমুখি কথা হয় ইস্ট পোস্ট বাংলার।
পেনশনার্সদের লিভিং কস্ট ও বাজার দর অনুযায়ী স্বাস্থ্য সুবিধা, মহার্ঘ ভাতা সহ বর্ধিত পেনশনের দাবি প্রায় ১০ বছর পুরনো দাবি। ২০১৪ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার অনুযায়ী ন্যূনতম পেনশন হাজার টাকা ধার্য করেছিলেন, কিন্তু তারপর পেরিয়ে গেছে প্রায় দশ বছর। এই দশ বছরে এই প্রদয় মূল্য তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের। পেনশনার্স আন্দোলনকারীদের বক্তব্য মাত্র হাজার টাকায় দুইজন বৃদ্ধ মানুষের ভাত ডালের যোগান করাই অসম্ভব। তার সাথে রয়েছে বর্তমানের ব্যয়বহুল চিকিৎসা।
আন্দোলনকারীরা ইস্ট পোস্ট কে জানিয়েছেন, স্যোশাল সিকিউরিটি মন্ত্র ও কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা গঠিত তিনটি কমিটি বর্ধিত পেনশন দেওয়ার অনুমোদন দিলেও বহুদিন ধরে এই তিন কমিটি কার্যত চুপচাপই রয়ে গিয়েছে। ইপিএফ পেনশনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়েছে, “ইপিএফ অছি পরিষদ কেবল মিটিং করেই তাদের দায় এড়াতে পারে না, এই সমস্যা সমাধানে তাদের ভূমিকা যথেষ্ট ইতিবাচক হওয়ার প্রয়োজন আছে।”
ইপিএফ পেনশনার্স অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্য গোটা রাজ্য জুড়ে মাত্র ৩৬৪০০ প্রার্থীর পেনশন অনুমোদন পেয়েছে। সংগঠনের প্রতিনিধিরা ইস্ট পোস্টকে জানিয়েছেন, “আমরা দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যথাক্রমে ডেপুটেশন এবং অনশন কর্মসূচি করেথি কিন্তু কিছুতেই কোনও লাভ হয়নি,… ২০১৪ সালেই ভারতে পেনশনার ছিল ৭২ লাখ যা বর্তমানে নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য অনুযায়ী ১ কোটি ছাড়িয়েছে।”
কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বর্তমানে ইপিএফ অ্যাসেট ৭৮০০৩০৮.৯০ লক্ষ কোটি টাকা এবং যার সুদ বাবদ সরকারের সংরক্ষণ বছরে ৫১৭৮০.৮২ লক্ষ কোটি টাকা। সংগঠনের প্রতিনিধিদের বক্তব্য এই টাকায় সহজেই ১ কোটি মানুষকে তাদের দাবি মতো পেনশন দিতে পারে সরকার। এই মুহূর্তে লিভিং কস্ট ও মূল্যবৃদ্ধির পরিমাণ যাচাই করে পেনশনার্স রা দাবি জানিয়েছেন তাদের মাসিক ৭৫০০ টাকা সহ মহার্ঘ ভাতা এবং চিকিৎসা সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসা সুবিধা বলতে তারা উল্লেখ করেছেন ‘ইএসআই’ বা ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের অধীনে চিকিৎসার ব্যবস্থা।
অত্যন্ত দুঃখের সাথে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, ” এর মাঝে আমরা বহু সাথীকে হারিয়েছি, অনেকে চিকিৎসার অভাবে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। এ দাবি আমাদের জীবনের দাবি, সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার দাবি। আমরা হয়তো বেশিদিন বাঁচবো না কিন্তু এই দাবি মানুষের জন্য নায্য দাবি। এ দাবি একবিংশ শতকের দাবি।” এই মুহূর্তে ভারতের বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র সহ বড় বড় রাজ্যে তাদের আন্দোলন চলছে বলে তারা দাবি করেছেন। একই সাথে সাধারণ জনতার সমস্যার সাথেও তারা নিজেদের যুক্ত করেছেন। তাদের নিজস্ব দাবির সাথে তারা বর্তমান সময় হাসপাতালে চিকিৎসা সহ ওষুধের দাম কমানোর মতো দাবি যুক্ত করেছেন। তাদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষ আমাদের দাবির সাথে যুক্ত না হলে এই সব কিছু অমূলক।