গতকাল, ৮ই জুলাই, ছিল গণতন্ত্রের উৎসব। পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে গণতন্ত্রের তাণ্ডব নৃত্যে দিশাহারা রাজ্যবাসী। বোমা-গুলি তো ‘সাধারণ’ ব্যাপার, ব্যালট বাক্স নিয়ে খেলা হল ফুটবলও। শাসকদলের এই সমস্ত কীর্তি কলাপ নিয়ে চারদিক যখন খবর ছড়িয়ে পড়ছে, তখনই রাজ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৩৩। ভোটের দিন এবং তারপর ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসে আক্রান্ত বাম কর্মীরা।
পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে এহেন শাসকদলীয় ‘মস্করা’-র বিরুদ্ধে এবার ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (CPI)। গুনে গুনে ৭০টা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের দাবি জানালেন তারা। CPI-এর উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটি সম্পাদক শৈবাল কুমার ঘোষ আভিযোগ করেছেন, উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় CPI-এর পোলিং এজেন্টদের বুথ থেকে কার্যত ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা। প্রতিটি বুথে চলেছে রিগিং। এর মধ্যে রয়েছে, ব্যারাকপুর ১নম্বর ব্লকের ৫টি বুথ, ব্যারাকপুর ২নম্বর ব্লকের ১১টি বুথ, বসিরহাট ১নং ব্লকের ২৫টি বুথ, বসিরহাট ২নম্বর ব্লকের ৯টি বুথ আর হাসনাবাদ ব্লকের ২০টি বুথ। সেই সমস্ত বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন CPI উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নেতৃত্ব।
CPI-এর উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা কমিটির সহ সম্পাদক শিব শংকর গাঙ্গুলি ইস্টপোস্ট বাংলাকে এই দিন জানিয়েছে, “আমরা ৭০-৭২ টা সিটে উপনির্বাচনের দাবি জানিয়েছি, তৃণমূল কংগ্রেস মূলত এই সমস্ত বুথ দখল করেছে সকাল থেকে। মূলত বসিরহাটের ৫৬ ও ৫৭নম্বর সিট। বসিরহাট ব্লক ২-এর চৈতা গ্রাম পঞ্চায়েতে আটটা রিপোলিং-এর দাবি জানিয়েছি আমরা। মূলত জামবেড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির ২৫৮ নম্বর এবং ১৮নম্বর জেলা পরিষদের সিটে সকাল থেকেই বুথের সামনে বোমাবাজি করেছে এবং গুলি চালিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত গুন্ডারা। এই দুটি অঞ্চল আমাদের অনেক পুরোনো লড়াই সংগ্রামের অঞ্চল। সুষ্ঠ ভাবে ভোট সম্পন্ন হলে ফলাফল আমাদের পক্ষেই হত। এই সমস্ত জায়গায় মূলত জোরপূর্বক আমাদের হারিয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কুলপী গ্রাম পঞ্চায়েত-এ গতকাল কার্যত সকাল থেকেই বুথ দখল করে নেয় শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের গুন্ডারা। স্থানীয় সূত্রের খবর, সকাল এগারোটা থেকে টানা দুপুর দুটো পর্যন্ত বুথের দরজা বন্ধ করে দেয় শাসকদলের লোকজন। সন্ত্রাসের মুখে প্রাণভয়ে কথা পর্যন্ত বলতে পারেননি প্রিসাইডিং অফিসারেরা। দুপুর দুটোর মধ্যে শেষ হয়ে যায় ভোট প্রক্রিয়া।
অন্যদিকে নদীয়া জেলায় দক্ষিণ রাণাঘাট বিধানসভার অন্তর্গত পঞ্চায়েতগুলিতে ভোট পরবর্তী হিংসার কোপে সিপিআইএম নেতা থেকে কর্মীরা। বেশ কয়েকটি বুথে গতকাল রিগিং বাহিনীকে বাধা দিয়েছিল বাম কর্মীরা। অনেকগুলি বুথে রিগিং করতে সক্ষম হয়নি শাসকদল আশ্রিত গুন্ডারা। ফল ভুগতে হচ্ছে আজ। এলাকার বাসিন্দারা ইস্ট পোস্ট বাংলাকে জানিয়েছেন, তৃণমূল বিরোধীদের এবং সিপিআইএম প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গুণ্ডা নিয়ে গিয়ে চলছে হামলা। প্রাণ ভয়ে কার্যত এলাকা ছাড়া প্রচুর বাম কর্মী।