প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকারের হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্থানের নীতি কি তামিলনাড়ুর তামিলদের বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে?
গত ১০ই জানুয়ারি দ্য হিন্দু গ্রুপের চেয়ার পার্সন মালিনি পার্থসারথি ট্যুইটারে একটি পোল খুলে জিজ্ঞাসা করেন যে – যদি বেছে নিতে বলা হয় তবে তামিলনাড়ুর তামিলরা নিজেদের প্রাথমিক পরিচয় হিসেবে কোনটা বেছে নেবে, ভারতীয় নাকি তামিল?
আজ ১৭ই জানুয়ারি অবধি ফলাফলে দেখা গেল ৩১% অংশগ্রহণকারী ভারতকে বেছে নিয়েছে অন্যদিকে ৬৯% বেছে নিয়েছেন তামিলকে। ট্যুইটারে ভোটে অংশগ্রহণ করেছে ৪৮,৯৭৩ জন। যদিও এই ফলাফল সন্দেহের উর্ধ্বে নয়, বা সামগ্রিক ভাবে তামিলনাড়ুর জনমত কে প্রতিফলিত করে না।
তবুও সংখ্যাগরিষ্ঠ তামিল যারা মন্তব্য করেছেন তাঁরা তামিল পরিচয়ের পক্ষেই মতামত দিয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালের মে মাসের শেষের দিকে দ্রাবিড়নাডু হ্যাশট্যাগ ট্যুইটারে ট্রেন্ডিং এ আসে। দ্রাবিড়নাড়ুর অর্থ দ্রাবিড়দের জন্য আলাদা দেশ! গরুর ব্যবসা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ নিয়ে ইউনিয়ন সরকারের একটি নোটিশ সেই বছরের ২৫শে মে জারি হওয়ার প্রতিবাদে এই দ্রাবিড়নাড়ু হ্যাশট্যাগটি চালু হয়। বাঙালি হিন্দু বাড়িতে মাছ, ডিম, মুরগি, খাসির মতনই তামিলনাড়ু এবং কেরলে ধর্ম নির্বিশেষে গরুর মাংস প্রাত্যহিক খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে পড়ে। সুতরাং তাঁদের খাদ্যাভ্যাসের উপর ইউনিয়ন সরকারের হস্তক্ষেপ হিসেবে তামিলরা নতুন বিধিনিষেধটিকে দেখে।
২০২১ সালে তামিলনাড়ু সরকার এবং শাসকদল দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাঝগাম (ডিএমকে) “কেন্দ্র সরকার” শব্দটির বদলে ইউনিয়ন সরকার শব্দটা ব্যবহার করলে তামিলনাড়ু বিধানসভায় বিজেপি দলনেতা নাইনার নাগেন্দ্রন এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন যে ব্যাপারটাউদ্দেশ্য প্রনোদিত কি না? জবাবে মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্তালিন জানান যে ১৯৫৭ সালে তাঁদের নির্বাচনী ইস্তেহারেও “ইউনিয়ন সরকার” কথাটা ছিল। তাঁরা (ডিএমকে) ইউনিয়ন সরকার কথাটিই ব্যবহার করবেন সরকারি ভাবে।
১৯৫৬ সালে বিজি খের সংসদে হিন্দিকে জাতীয় ভাষা করা সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট পেশ করেন। যার প্রেক্ষিতে বাংলা, আসাম, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু সহ বিভিন্ন রাজ্যে হিন্দি আগ্রাসন বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে সংবিধানের এক নম্বর ধারায় ভারতকে রাজ্যগুলোর ইউনিয়ন হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও কেন্দ্র সরকার শব্দটাই বহুল প্রচলিত। ভারতের সংবিধানে রাজ্য ও ইউনিয়ন সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বন্টিত হলেও এই অভিযোগ বার বার উঠেছে যে ক্রমাগত ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন হয়ে চলেছে। মোদী সরকারের এককেন্দ্রিক নীতির ফলে তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য রাজ্যগুলোর এই অভিযোগ অন্যমাত্রা পেয়েছে বলে মনে করেন বিরোধী রাজনীতিবিদ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।