রাত পোহালেই দোল। যদিও আগেই পূর্ণিমার তিথি লেগে গেছে। সারাদিন রোজা রেখে বিকেলে দোল খেলার এক বিরল দৃশ্যর সাক্ষী রইলো কলকাতার বাঙালি। কিন্তু এদিকে সৌদিতেও আলাদা উৎসবের মজা চলছে। হিন্দু বাঙালী রা মিলে নিজেদের মতো এক পারিবারিক দোল উৎসব পালন করে নিলেন। কিন্তু তাই বলে এই নয় যে এ সমস্ত সমপূর্ণ বিনামূল্যে, এমনিই হয়ে যায়। উৎসবে যোগদানকারী প্রত্যেক সদস্যদের তরফ থেকে একশো কুড়ি রিয়াল চাঁদা নেওয়া হয়েছে যা ভারতীয় মুদ্রায় আড়াই হাজার টাকার অধিক হতে পারে। রিয়াদে বসবাসকারী কলকাতার বাঙালিরা হাসি মুখে বিনা প্রশ্নে এইসব উৎসবের সময়ে শয়ে শয়ে রিয়াল বইয়ে দিতে পারেন কিন্তু রমজান মাসে ত্যাগের উপলব্ধি টা আমার হয়ে গেল প্রথম।
রমজান-এর ব্যাপারটা আমি এখানে প্রথম এসে শিখেছিলাম। আমাদের আজমগড়ের একজন ম্যানেজার বুঝিয়েছিলেন যে এক মাস যদি সমস্ত মুসলমান দুইবেলা না খেয়ে যদি সেই সময়কার খাবার গরিব মানুষদের মুখে তুলে দেন, তাহলে নাকি পৃথিবীতে কত পুণ্য হতে পারে। তারপর আবার ইফতারেরও অনেক রেওয়াজ আছে, যেই খেজুরটা খাওয়া হয় তা নাকি গুনে গুনে সাতটাই খেতে হবে। তার একটা বেশিও না, কমও না। সাতটাই নাকি আদর্শ সংখ্যা একদিনের খেজুরের হিসেব অনুযায়ী। তার সাথে জমজম পানি খেয়ে রোজা ভেঙে বিসমিল্লাহ বলে খাওয়াদাওয়া শুরু করতে হবে। কিন্তু অবশ্যই এইসব হবে নমাজের পর। কতবার খেয়ে এলাম মসজিদে এই ধরনের সব নিয়ম কানুন মেনে।
এইবছর অবশ্য সৌদি যুবরাজ কঠোরভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন যাতে মসজিদের ভেতরে কোনো খাওয়া দাওয়া না হয়। মসজিদের বাইরে, মসজিদ চত্বরে সামিয়ানা টাঙিয়ে খাওয়াতে বসাও যত ইচ্ছে, কিন্তু ভেতরে কোনো কিছু নয়, যাতে মসজিদ পরিস্কার থাকে। ঠিকই আছে, কিন্তু এইরকম নিয়ম বাকি আর কত জায়গায় মানা হয় তখন নিয়ে আমার জানা নেই অবশ্য। বাকি জায়গার ব্যাপারে মনে পরলো, এই বছর সৌদি আরবের তরফ থেকে কুড়ি টন খেজুর উপহার পাঠিয়েছে বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য সৌদি আরব টিকে আছে এখনও, তাই ঈদী হিসেবে এতটা খেজুর পাঠিয়ে দেওয়া হলো! যদিও এখন শুনছি বাংলাদেশের ফলের বাজারে স্রেফ আগুন নয়, একেবারে দাবানল লেগে গেছে, এমন চড়া দামে ফল কেনাবেচা হচ্ছে, যে সাধারনের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে একেবারে ইফতারির ফল জাতীয় খাদ্য। বোঝা যাচ্ছে না, গরীবের জন্য কোথায় খাবার বাঁচানো হলো, নাকি কোথায় দান টা হলো নাকি অত্যন্ত বিদঘুটে এক পরিহাস হয়ে রয়ে গেল….