Close

সৌদির চিঠি: শুরু হল রমজান (পর্ব ৪৪)

সৌদিতে একই সাথে হিন্দু-মুসলমান শ্রমিকেরা তোড়জোড় করছে রমজান এবং বসন্ত উৎসবের। সৌদির লিখছেন পথিকৃৎ সরকার।

সৌদিতে একই সাথে হিন্দু-মুসলমান শ্রমিকেরা তোড়জোড় করছে রমজান এবং বসন্ত উৎসবের। সৌদির লিখছেন পথিকৃৎ সরকার।

সৌদির চিঠি পর্ব ৪৩


শুরু হয়ে গেল সৌদিদের পবিত্র রমজান। এবং একই সাথে, নিঃশব্দে হিন্দুদের বসন্ত উৎসব পালনের তোড়জোড়ও শুরু হয়ে গেছে। আমি গত বছর রিয়াধের কলকাতার বাঙালী সংগঠনের সংস্পর্শে আসতে পারিনি তাই তখন অত জানতাম না, কিন্তু এইবার সমস্ত আয়োজন মন দিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। এই বছর এই মাসের বাইশ তারিখ চেষ্টা করা হচ্ছে এক ছোট করে হোলি পার্টি আয়োজন করার কিন্তু রমজান শেষে ইফতারের আগে কতটা সম্ভব তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। অনেকে ভাবছেন কোনো রেস্তোরাঁ থেকে খাবার আনিয়ে নিয়ে নিজেদের মধ্যে সেই বারের বিজয়া সম্মেলনীর মতো আনন্দোৎসব করবেন, কিন্তু অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে সেটা রমজানের মাসে ইফতারির আগে আদেশ সম্ভব কিনা।

এখন সেই নিয়ে সবাই বেশ উৎসাহিত, দুইদিন আগে দেখছি আবির খুঁজতে বেরিয়েছেন কয়েকজন। এই সাদা কালোর দেশে আবিরও পাওয়া যায়?! এই নিয়ে সত্যিই বিস্মিত হয়েছিলাম আমি তারপর দেখলাম ঠিক জোগাড় হয়ে গেল এশিয়ান মার্কেট থেকে। এইখানে এই এশিয়ান মার্কেট ব্যাপারটাও আমার কাছে অদ্ভুত লেগেছিল। আমরা সবাই তো এশিয়ান। দেশটাই তো এশিয়াতে আছে। তাহলে আবার আলাদা করে এশিয়ান মার্কেটের কি প্রয়োজন?? পরে বিশ্লেষণ করে জানতে পারলাম যে ফিলিপিনো, ইন্দোনেশিয়ার বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ করে এই ধরনের বাজার প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল, যেখানে এখন ভারতীয়, পাকিস্তানি, বাংলাদেশী, নেপালি এবং শ্রীলঙ্কার দৈনন্দিন সামগ্রী পাওয়া যায়।

যাই হোক আমি নিজে এইসবে আর যোগ না দিলেও সমস্ত আয়োজন, উৎসাহ দেখে ভালোই লাগে। এইভাবে এই দূর বিদেশে নিজেদের একরকমের পাড়া বানিয়ে নিজেদের সাংস্কৃতিক উৎসব পালন করার মজার থেকে গর্ব আরো বেশি যেন। আমার এইসবে একটু অস্বস্তি বোধ হতো কারন সবাই বেশ উঁচু পদে চাকরি করা পরিবার নিয়ে সংসার করা বেশ প্রতিষ্ঠিত মানুষজনের মধ্যে আমি একা লেবার এবং ব্যাচেলর! আমি খবর নিয়ে জেনেছিলাম যে সৌদি আরবে নিজের পরিবারকে নিয়ে এনে রাখার খরচা কত হতে পারে। মোটামুটি ছয় হাজার রিয়াল বেতন হলে তবেই তা করা উচিৎ, তার কম বেতন নিয়ে নিজের বউ বাচ্চাকে নিয়ে এলে তা নিতান্তই বোকামি হতে পারে।

কিন্তু এই নিয়ে নতুন এক খবর শুনছি। সরকারি তরফ থেকে নাকি গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে যে পরিবার নিয়ে আসার যে প্রধান খরচা, ডিপেন্ডেন্ট ভিসার খরচা টা হয়তো মাফ করতে পারে। প্রতি মাসে একটি ডিপেন্ডেন্ট ভিসা, মানে পরিবারের একজন সদস্যর জন্য টাকা লাগে চারশো রিয়াল। সেইটার ওপর তাদের যাবতীয় যা মাসকাবারি খরচা। সন্তান থাকলে তাদের স্কুলের খরচ, যা মটেও তেমন সস্তা নয়। সৌদি রাজা অনেক রকম সাবসিডি দিতে থাকে রোজকার জীবনের সমস্ত খরচা নিয়ে, তার মধ্যে বেশ কিছু সাবসিডির লাভ বাইরের ব্যাক্তিরা এবং তাদের পরিবারের সদস্য রাও ভোগ করতে পারেন, কিন্তু তারা স্থানীয়দের মতো বেশিরভাগ সুবিধা বিনামূল্যে লাভ করেন না। সেই কারনে, সব বিষয়ের জন্য আমাদের পরিবারের জন্য যেমন খরচা করছি, তারপর আবার ভিসার টাকাও দিচ্ছি, যেই কারনে অনেকেই নিজেদের পরিবার নিয়ে আসতে চায় না। সেই জন্য, যদি ডিপেন্ডেন্ট ভিসার দামটা মাফ করে দেওয়া হয়, তাহলে আখেরে বিদেশী কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরা বেশি পরিমাণে এই দেশে থাকতে এসে, এই দেশেই খরচা করবেন। এই চিন্তা নিয়ে এখন জল্পনা চলছে, দেখা যাক সবশেষে সবার এই দোয়া ফলে যায় কিনা!

লেখক

Leave a comment
scroll to top