বাংলায় আজকাল এক নতুন রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে দেখলাম। চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলনের সাথে জড়িত বিচারপতির বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে অনেক সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ সঞ্চয় হয়ে তারা ছি বিচারব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক নোংরামি নিয়ে বীতশ্রদ্ধ। এই বিষয়ে অনেকের অনেক রকম মত থাকলেও বারবার ঘুরেফিরে চাকরিপ্রার্থীদের দুর্দশার কথাটাই শুধু চোখে ভেসে আসছে। রাজনীতি এবং দূর্নীতির ঘোর প্যাঁচ নিয়ে মানুষ ক্ষেপে থাকছে কিন্তু সেই হতাশা ভরা শয়ে শয়ে হাজারে হাজারে যুবদের মুখ গুলোই প্রধান বিষয়। এই নিয়ে আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা প্রচুর, যা এই প্রসঙ্গের আরেক চেহারা সামনে এনে দেয়।
চাকরি নিয়ে হাহাকার কাকে বলে, তা আমি ছোটোবেলা থেকে নানা পরিস্থিতিতে দেখে আসছি। কলকাতায় আমার বাড়ির কাছে প্রচুর কারখানা ছিল যা নিজের চোখে বন্ধ হতে দেখেছি, লক্ষাধিক পরিবারকে একেবারে সর্বশান্ত হতে দেখেছি। চাকরি এবং ভাতের খিদে কাকে বলে, তা নিয়ে যথেষ্ট দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার নিজের এবং আমাদের। মহামারীর সময়ে আমি কলেজ পাস করে দেশে একটাও ভদ্রস্থ চাকরি না পেয়ে শেষমেশ একরকম বাধ্য হয়েই বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার ভাগ্য ভালো ছিল তাই আমি চেনা একজনের মাধ্যমে সেই কোম্পানির কাছে সরাসরি ভাবে ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি পেয়েছিলাম, আমাকে কোনো দালাল ধরে নিয়ে যায়নি।
এইবার আমি এই দালাল চক্রের অবস্থা সব বুঝতে পারছি। আমাদের যারা চাকরি ছেড়েছিলেন তারা অনেক অহঙ্কারের সঙ্গে ছেড়েছিলেন এই বলে যে পুরো মধ্য প্রাচ্যে ওদের চাকরির অভাব হবেনা, ইতিমধ্যেই ৩-৪টে চাকরির ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। দুবাইতে আমারো নাকি ব্যবস্থা করে রেখেছে। এখন শুনছি তাদের কাতারে যেই জায়গায় ব্যবস্থা হয়েছিল সেখানে নাকি হঠাৎ করে তা বাতিল হয়ে গেছে। যে সমস্ত শূন্যপদে ওদের নিযুক্ত হওয়ার কথা ছিল, তা নাকি খালি হয়নি, সেই পুরোনো কর্মীরা চাকরি ছাড়বেন না। এইবার তাই তাদের আর নিয়োগ করা সম্ভব নয়, তারা যেন নিজেদের অন্য ব্যবস্থা দেখে নেয়, এবং আশাহত করার জন্য তারা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
তারা এখন এদিক ওদিক পাগলের মতো ইন্টারভিউ দিয়ে বেড়াচ্ছেন। কলকাতায় রিপন স্ট্রিট অঞ্চলে এক ইন্টারভিউ দিতে গেলেন এই সপ্তাহে। মধ্যপ্রাচ্যের জন্য যখন কাজের ব্যবস্থা করা হয়, এইভাবে পালে পালে শ্রমিক নিয়ে যাওয়ার সমস্ত নিয়োগ ব্যবস্থা এবং দালাল সংস্থা কলকাতার মৌলালী থেকে পার্ক সার্কাস অঞ্চলেই অবস্থিত। তা সেখানে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে তারা জানলেন, তিরিশ হাজার টাকার চাকরির জন্য এক লক্ষ দশ হাজার টাকা দালালকে দিতে হবে। যারা ইতিমধ্যেই ভালো পোস্টে কাজ করে এসছেন এত বছর ধরে, তাদের এক পোস্ট কমিয়ে কাজে লাগতে হবে। তারা তাদের গ্রাম থেকে ভোরবেলা এত কষ্ট করে এসে সারাদিন ধরে অপেক্ষা করে এই ধরনের জবাব পেলে আর কি মাথার ঠিক থাকে। রমজান মাসের আগে এখনও পাকা চাকরি জোগাড় করতে পারলেন না তারা, সেই দুশ্চিন্তা নিয়েই আবার শিয়ালদহ রওনা হলেন সন্ধ্যার ট্রেন ধরে গ্রামে ফেরার জন্য।