Close

সৌদির চিঠি: পাকিস্তানে নির্বাচন (পর্ব ৩৯)

পাকিস্তানে নির্বাচন চলছে, সৌদির শ্রমিকদের হাল কী? কী বলছেন তারা? প্রবাসের চিঠিতে তুলে ধরছেন পথিকৃৎ সরকার।

পাকিস্তানে নির্বাচন চলছে, সৌদির শ্রমিকদের হাল কী? কী বলছেন তারা? প্রবাসের চিঠিতে তুলে ধরছেন পথিকৃৎ সরকার।

সৌদির চিঠি পর্ব ৪০

পাকিস্তানে অভাবনীয় কিছু নিদর্শন ঘটে গেল কত কয়েক দিনে। ইমরান খানের জেল হওয়ার আদেশের পর পাকিস্তানে ভোট নিয়ে তোলপাড় হয়ে গেল দেশ জুড়ে যখন জনগন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ছড়ি ঘোরানোর বিরুদ্ধে যেভাবে রাস্তায় নেমে এসেছেন সেই নিয়ে সবাই অত্যন্ত উৎফুল্ল। সেনা বাহিনীর এবং মার্কিন প্রভাবের বিরুদ্ধে জনতা যেভাবে পথে নেমে এসেছেন তা সত্যিই বিস্ময়কর এবং উৎসাহ দেওয়ার মতো। ভোট আটকাতে চেয়েও জনতার এরুপ সোৎসাহী বৈপ্লবিক প্রদর্শন সত্যিই ঐতিহাসিক। এই নিয়ে সৌদি আরবে পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশী শ্রমিকদের আনন্দ কিছু কম নয়। যবে থেকে এসেছি তবে থেকেই তাদের মধ্যে জনাব ইমরান খানের জন্য শ্রদ্ধা ছাড়া আর কিছু দেখিনি।

সৌদি এসে জেড্ডা শহরে এক প্রবীন বাংলাদেশী ট্যাক্সি চালকের সাথে আলাপ হয়েছিল। রহমত(নাম পরিবর্তিত) মিঞা একজন অত্যন্ত রাজনৈতিক ভাবে সজাগ ব্যাক্তি, সমাজ এবং রাজনীতি নিয়ে আমাকে কত পাঠ পড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আমার প্রায় তিনগুণ বয়স হবেন হয়তো, তবুও আমাকে আপনি বলে সম্বোধন করতেন এবং বেশ উৎসাহের সাথেই আমার সাথে সমস্ত বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠতেন। বাকি আর পাঁচটি বাঙালি শ্রমিকের থেকে ওনার জ্ঞান যথেষ্ট বেশি এবং তেমনই আরো জানার প্রগাঢ় ইচ্ছা। আমি ওনার কাছেই প্রথম ইমরান খানের ব্যাপারে জেনেছিলাম। একজন প্রবাসী বাঙালি শ্রমিক কি সাংঘাতিক ভাবে জনাব ইমরানের ভক্ত হতে পারেন তা দেখে আমার সত্যিই বিষ্ময় লেগেছিল।

রহমতের এতটা স্বতস্ফূর্ত সমর্থনের প্রধান কারন হলো ইমরান খানের আমেরিকার সর্দারির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মানসিকতা এবং প্রতিচ্ছবি। সৌদি আরব যতই আমেরিকার পক্ষপাতীত্ব করুক না কেন, অধিকাংশ বাংলাদেশী এবং পাকিস্তানিরা না বুঝে আমিরেকাকে খারাপ হিসেবে ধরে নিয়েছেন। কিন্তু রহমত আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী চেহারা নিয়ে যথেষ্ট অবগত হয়েই ইমরান খানের পক্ষ নিয়ে পাকিস্তানী তেহরিক ই ইনসাফের সমর্থন হয়েছেন। একজন প্রবীন বাঙালি শ্রমিক আমাকে আমার প্রথম পাকিস্তানের রাজনৈতিক পাঠ পড়িয়ে দিলেন সৌদির মাটিতে বসে! বেশিরভাগ বাঙালী পাকিস্তানপন্থী হয় কিন্তু ইমরান খানের এরম কট্টর অনুগামী আমি পাকিস্তানের বাইরে আর পাইনি।

আমার সাথে যারা কর্মরত, তাদের মধ্যে আমি এমন একজন পাকিস্তানীও পাইনি যিনি ইমরান খানের অনুগামী নয়। একবার আমাদের সিনিয়র শেফ, উত্তর পাকিস্তানের কোনো এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা ইরফান(নাম পরিবর্তিত) শেফ খুব গর্বের সাথে জানাতেন যে তিনি তাঁর গ্রামের প্রথম বাসিন্দা যিনি বিদেশে এসেছেন। ইমরান খান প্রথমবার গ্রেফতার হওয়ার সময়ে উনি ভীষণ ক্ষীপ্ত হয়ে আমাকে বোঝাচ্ছিলেন যে দেশ টা আমেরিকার হাতে বিকিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে তাই ইমরান খানকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে এইভাবে। সমস্ত জনগণের ওনার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভরসা এইসব কথা থেকেই বোঝা যায়। আমার সবচেয়ে মজা লেগেছিল যখন আমার এক পাকিস্তানি গাড়িচালক আমার সাথে এই নিয়ে আলোচনা করছিলেন। আমি ওনাকে বলছিলাম যে আমাদের কোম্পানি তে নতুন ইউরোপীয় ম্যানেজার রা কিরকম কোম্পানির টাকা পয়সা তছরুপ করছে, সে সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠেছিল, “আচ্ছা আমাদের নওয়াজ শরিফের মতো?!”

Leave a comment
scroll to top