আমি সৌদির কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং রীতিমতো ভয়ানক তথ্য, অথবা কাহিনী জানিয়ে রাখতে চাই। আজকাল আর আগের যুগের মতো পাসপোর্ট জমা রাখার ব্যবস্থা নেই অবশ্য এখন আর কিন্তু আরো অনেক নতুন আইনের ফাঁক বেরিয়ে গেছে। যেমন আমাদের অনেক জনের এখনো অনেক হিসাব আসা বাকি আছে। এই নিয়ে আলোচনা করতে বসে অনেক অদ্ভুত কাহিনী জানতে পারলাম। আগের দিন আমাদের সোহেল দের কথা শোনালাম। তাদের এরপরের কি পদক্ষেপ হতে পারে তা নিয়ে অনেক জল্পনা চলছে এখনও। তা যাই হোক, এখন বাকি কোম্পানি গুলোর মানুষদের বিষয়ে আসা যাক।
আমাদের যেই এজেন্সির তরফ থেকে ভিসা করানো হয়েছিল, তাদের কিছু কান্ড শুনছিলাম। যেমন একবার সেখানকার এক ভারতীয় দালাল হানিফ একবার এক শ্রমিকের এক্সিট আটকে রেখেছিল। সেই অসহায় মানুষটি বিনা মাইনেতে অনেকদিন অপেক্ষায় বসে থাকার পরেও যখন পেল না তখন কাকুতিমিনতি করা শুরু করলো। তাতেও হানিফের মন গললো না। শেষমেশ ধৈর্য হারিয়ে সেই ব্যাক্তি আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে দিল। জানিয়ে দিল, এরপরেও যদি সে তার প্রাপ্য না পায় তাহলে সে নিজেই নিজের গলা কেটে নেবে। তারপরেও হানিফ নির্মমতার চূড়ান্ত দেখিয়ে বলে দিল, “যা ইচ্ছা করে নাও, এখন কিছু পাবে না, বসে থাকো চুপচাপ”…
সেই শ্রমিক সত্যিই একদিন নিজের গলায় ব্লেড চালালো। বেশি আগের কথা নয়, শুনল কম এই বছরেরই নাকি ব্যাপার। সেই ব্যাক্তি এই কান্ড ঘটানোর পর যখন পুলিশ হাসপাতালের ঝামেলা শুরু হলো, তখন পুলিশ পুরো ঘটনা যাচাই করে দেখলো। ভাগ্যক্রমে তিনি বেশি গভীর কাট মারেননি, তাই কোনো দুর্ঘটনা হওয়ার আগেই পুলিশ আর ডাক্তার মিলে ফেলতে পারলো। কিন্তু যেহেতু সে এই ধরনের এক কান্ড ঘটিয়ে বসেছে ইতিমধ্যেই, তাই মানবতার খাতিরে সৌদি পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তার এক্সিটের ব্যবস্থা করে দিল, এবং একই সাথে, ওই দালালেরও ব্যবস্থা পাকা হয়ে গেল। সেই শ্রমিককে তার সমস্ত হিসেবের সাথে ফেরত পাঠানো হলো, তার সাথে হানিফকেও শাস্তি স্বরূপ ডিপোর্ট করে দেওয়া হলো। একজন শ্রমিক যদি এরকম কেলেঙ্কারি বাঁধানোর কথা ভাবতে পারেন, তাহলে সেটা সত্য না হলেও তার যে মানসিক পরিস্থিতি কতটা বিগড়ে আছে সেইটা আন্দাজ করেই পুলিশ এই ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করে।
এই বিষয়ে আমি ভেবে দেখলাম যে আমারো একটু শিক্ষা নেওয়া উচিত, কারণ এইভাবে নাকি অনেকেই “মুক্ত” হয়েছেন। সৌদিতে কাজ করতে এসে সময় মতো দেশে ফিরতে না পেরে অনেকেই এই পথ বেছে নেন এবং কয়েকজন সত্যিই আত্মহত্যার ভীষণ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হন। অনেক শ্রমিক মানসিক ভারসাম্যতা হারানোর নাটক করেন, অথবা দুশ্চিন্তা এবং অনিশ্চয়তার প্রকোপে আসলে পাগলের মতো হাবভাব করতে থাকেন। সেই অবস্থায় তারা হয়তো নিজেরাই থানায় গিয়ে নিজেদের এমন অবস্থা দেখিয়ে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করেন অথবা অন্য কেউ রিপোর্ট করে দেয় যে এনার লক্ষ্মণ মতিগতি কিছুই ঠিক ঠেকছে না তাই এনার শিগগিরই কিছু একটা ব্যবস্থা না করলে কোনো নতুন দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। অনেকে শুনেছি আরো বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য নাকি একটা দড়িও কিনে নিয়ে আসেন যা দেখে অনেকেই আশঙ্কায় চমকে যেতে পারেন! হয়তো এই কারনেই পুরো সৌদি আরবে এখনও অবধি কোনো লেবার কোয়ার্টারে আমি এখনও কোনো পাখা অর্থাৎ সিলিং ফ্যান দেখলাম না।
সৌদির শ্রমিকদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া বেআইনি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নতুন আইন লাগু হয় গেছে যেখানে সৌদিতে একবার ঢুকে পড়লে নিজেদের মালিকের স্পনসরশিপের অনুমোদন ছাড়া আপনি আর বেরোতে পারবেন না। এরকম পরিস্থিতিতে, নিজেদের স্বাধীনতা এবং মুক্তির আস্বাদ পাওয়ার জন্য মানুষকে আমি সুস্থ থেকে পাগল হতে দেখলাম, ভদ্র থেকে দস্যু হতে দেখলাম, এবং সবচাইতে ভয়ানক, একেবারে নিজেদের প্রান পাখিকে মুক্ত করে দিতেও দেখে নিলাম…