Close

সৌদির চিঠি: ইজরায়েল না ফিলিস্তিন; আপনি কার পক্ষে? (পর্ব ২৪)

আপনি ইজরায়েল না ফিলিস্তিন? কোন পক্ষ নেবেন? এই আলোচনার বিষয় নিয়ে এখন সমগ্র মধ্য পূর্ব সরগরম। সৌদি আরব থেকে লিখছেন পথিকৃৎ সরকার।

আপনি ইজরায়েল না ফিলিস্তিন? কোন পক্ষ নেবেন? এই আলোচনার বিষয় নিয়ে এখন সমগ্র মধ্য পূর্ব সরগরম। সৌদি আরব থেকে লিখছেন পথিকৃৎ সরকার।

সৌদির চিঠি পর্ব ২৩

আপনি ইজরায়েল না ফিলিস্তিন? কোন পক্ষ নেবেন? এই আলোচনার বিষয় নিয়ে এখন সমগ্র মধ্য পূর্ব সরগরম। বাঙালি থেকে আরবি, উপর থেকে নীচে, সবার এক প্রশ্ন আমার কাছে। বোকার মতো তাকিয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই আমারও, কারণ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রচারের ফলে এখানে সবার ধারনা ভারত ইজরায়েলের পক্ষে। আমার সেই ক্ষমতা এবং সাহস এখনও নিজের মধ্যে তৈরি করতে পারিনি যে জোর গলায় জানাবো যে ভারত হয়তো বাণিজ্য, পুরোনো ঋণ অথবা মুসলিম বিদ্বেষী ভাবনা যেকোনো কারনের জন্যই হোক ইজরায়েলের পক্ষ নিতে বাধ্য, কিন্তু ভারতীয়রা ফিলিস্তিনের পক্ষেই থাকবে। আমার এত সাহস হয়নি, অথবা পাইনি, যে কলকাতার নাগরিক সমাজের ফিলিস্তিনের সমর্থনে এবং সহমর্মিতায় মিছিল এবং মার্কিন ও ইজরায়েলি পতাকা পোড়ানোর চিত্র তুলে ধরবো।

আরবি খ্রিষ্টানদের এক বড়ো অংশ ইজরায়েলের পক্ষ নিচ্ছে এটা জানা কথা। আমার এক লেবাননের সহকর্মী রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান, সে পবিত্র বাইবেল অনুযায়ী ওই ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক অঞ্চল ধর্মীয় কারনে ইহুদিদের প্রাপ্য জমি হিসেবে ইজরায়েলের সমর্থন করতো। কিন্তু এখন হেজবোল্লার মাথা চাড়া দেওয়া, এবং কূটনৈতিক ঝামেলার কারনে লেবাননের আভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ঘাটতি এবং দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার জন্য সরাসরি ভাবে সে এবং তাদের দেশবাসী ইজরাইল কে দোষী সাব্যস্ত করছে, এবং আমেরিকার মদতে ইজরাইলকে এক শত্রু দেশ হিসেবে চিহ্নিত করছে। ফিলিস্তিনের সমর্থনে নয়, নিজের পেটে লাথি পড়ার পর নিজের দেশের রাজনৈতিক আদর্শ এবং সবশেষে বাইবেলের কথা রেখে সে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে মতবাদ রাখছে। সে অবাক হয়ে আমার কাছে জানতে চাইছে, যে ভারত ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ে আমেরিকার পক্ষ ছেড়ে রাশিয়ার পক্ষ নিচ্ছে, তাহলে এখন কি অদ্ভুত কারনে আমেরিকার মদতপুষ্ট ইজরায়েলের পক্ষ নিতে পারে! আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে যদি এখন তার সাথে আমি আলোচনা করতে বসি তাহলে হয়তো আমার জেল হয়ে যাবে এই আশায় আর কথা না বাড়িয়ে হেসে এড়িয়ে গেলাম।

খুবই ছেলেমানুষের মতো প্রশ্ন ছিল সেটা জানি। ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো যখন যে এইরকম একটা আগ্রাসী শক্তি কে ভারত কী ফায়দার কথা ভেবে সমর্থন করতে পারে। এক যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষ, আরেক যুদ্ধে একই দেশের একই সরকার কেন আমেরিকার পক্ষ নেবে। আমি কোনো বিশাল রাজনৈতিক বিশ্লেষক হওয়ার মতো সাহস রাখিনা যে ইজরায়েলের আরেক বাণিজ্যিক সাথি সৌদি আরবের মতো এক দেশে বসে এই নিয়ে কোনো মন্তব্য করবো। জামাল খাশোগ্গির দেশে মানুষ যতই ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে ফিলিস্তিনের জন্য চোখের জল ফেলুক, সৌদি রাষ্ট্র এখনও সরাসরিভাবে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, নেবেওনা। তাই আমারো এই ক্ষেত্রে চুপ করে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এখানে আমার এক সৌদি বান্ধবী, যার নিজের মা ফিলিস্তিনি, সে পর্যন্ত হামাসের নাম শোনেনি, আমি আর কেনই বা এই নিয়ে কোনো বক্তব্য থাকবে! এই ব্যাপারে আমি লক্ষ করে দেখেছি, অন্য আরবি দেশ গুলো থেকে যার সৌদি আরবে এসেছেন, যেমন ফিলিস্তিন, সিরিয়া, তারা তাদের ছেলেমেয়েদের তাদের দেশের যুদ্ধ, বিপর্যয়ে জড়িয়ে পড়ার তো দূরের কথা, জানতেও দিতে চান না। তারই তাদের ছেলেমেয়েদের ভীষণ ভাবে সেই সবের থেকে দূরে সড়িয়ে আগলে রাখতে চান।

যাই হোক, এই ব্যাপারে একটি মাত্র কাজ যেটা করা যায় সেটা হচ্ছে সমপূর্ণ যাচাই করা সত্য জেনে রাখা যায়। যত্রতত্র ইজরায়েলের জন্য কান্নাকাটি করে ভুল খবর প্রচার বন্ধ করা যায়। ইজরায়েলের সমর্থনে খবর ছাপার জন্য ফিলিস্তিনি শিশুদের বিদ্ধস্ত ছবি ব্যবহার আটকানো যায়। যেখানে যে কেউ ইজরায়েলের জন্য সহমর্মিতায় কিছু লিখতে চাইছেন, দেখছি সেখানে ছবি হিসেবে প্রমান রাখার জন্য আর কিছু না পেয়ে ফিলিস্তিনের নাগরিক দের আতঙ্ক ভরা চেহারার ছবি দিচ্ছেন! এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, ইজরাইল বনাম হামাস না পড়ে ইজরাইল বনাম ফিলিস্তিন জেনে রাখা যায়। ফিলিস্তিনের লাল ফৌজ হামাস হেজবোল্লার অনেক আগে থেকে মুক্তি যুদ্ধ চালানো সত্ত্বেও মার্কিন প্রচেষ্টায় এই মুক্তিযুদ্ধ কে নির্বোধের মতো ধর্মযুদ্ধ হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশী রা আমাকে এসে জানতে চাইছে আমি ইহুদি না মুসলমান দের পক্ষে। এই ধর্মীয় বিষ খুব চতুর ভাবে ঢুকিয়ে দেওয়া গেছে দুই তরফ থেকেগ, সেই কারনে হামাসের মিসাইল নিয়ে এখন সবাই উত্তেজিত, কেউ ডিএফএলপি, পিএফএলপির মতো বামপন্থী মুক্তিকামী দলগুলোর সংগ্রামের কথা জানতেই দিচ্ছে না। জানতে দিলে, যদি সবাই সেই লেবাননের ছেলেটার মতো ধর্মীয় গ্রন্থ, সরকারি চুক্তি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নিজের পেটের কথা ভেবে পাশের মানুষটার সর্বনাশের কথা নিয়ে ব্যাকুল হয়ে পড়ে!

Leave a comment
scroll to top