Close

বাবরির নাম নেই! এনসিইআরটি-র বইতে বদলে গেল ইতিহাস

এনসিইআরটি গত সপ্তাহেই প্রকাশ করেছে দ্বাদশ শ্রেণীর নয়া পাঠক্রমের পাঠ্য পুস্তক। তার মধ্যে ইতিহাস বইয়ের পাতা ওল্টালেই বিতর্ক। দ্বাদশ শ্রেণীর নতুন পাঠ্যবইতে বাদ গেল বাবরি মসজিদের নাম। শুধু তাই নয়, এই ‘সংশোধিত’ পাঠ্যপুস্তকগুলির মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বইতেও বদল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ বদল আনা হয়েছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্য পুস্তকের ‘অযোধ্যা’ অধ্যায়ে। এই নিয়ে ২০১৪ সালের পর থেকে চতুর্থ বার সংশোধনী আনা হল এনসিইআরটির দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্য পুস্তকে।

ইতিপূর্বে কেন্দ্রীয় বোর্ডের পাঠক্রমের গৈরিকীকরণ নিয়ে সরব হয়েছিল বিরোধী মহল। এর আগে এনসিইআরটির অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস বইতে বিপ্লবী ভগৎ সিং-কে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। এবার দ্বাদশ শ্রেণীর বই থেকে বাবরি মসজিদের নাম সরে যাওয়ায় বিরোধী মহলে আবারও বিতর্ক।

ইতিহাস বইতে প্রশ্নোত্তরের আকারে লেখা হয়েছে, এখন যেখানে অযোধ্যার রামমন্দির, সেখানে আগে কী ছিল? কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তরে নেই বাবরি মসজিদের নাম। এনসিইআরটি-র নতুন ‘সংশোধিত’ পাঠ্যপুস্তক বলছে, “সেখানে ছিল তিনটি গম্বুজওয়ালা এক স্থাপত্য। যা ১৫২৮ সালে তৈরি করা হয়েছিল রামের জন্মস্থলে। যার দেওয়াল জুড়ে ছিল হিন্দু ধর্মের প্রতীক এবং হিন্দু পুরাণের নিদর্শনের ছড়াছড়ি।”

চোখে পড়ার মতো বদল ‘সংশোধিত’ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্য পুস্তকেও। এর আগের সংস্করণে ‘অযোধ্যা’ অধ্যায়ে যে বিবরণ ছিল চার পাতা জুড়ে, তা নতুন বইতে দুই পাতাতেই শেষ হয়ে গিয়েছে। বাদ গিয়েছে বাবরি মসজিদের নাম সহ আরও অনেক কিছুই। সংশোধিত বইতে বাদ গিয়েছে রামমন্দিরের পক্ষে বিজেপির রথযাত্রার কথা, বাদ গিয়েছে মন্দির নির্মাণে করসেবকদের ভূমিকা। শুধু তাই নয়, বাবরি ধ্বংসকে কেন্দ্র করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ারও নামোল্লেখ নেই। বাদ গিয়েছে বিজেপি সরকারের অনুশোচনামূলক বিবৃতিও। এর বদলে লেখা হয়েছে, ১৯৮৬ সালে ওই ‘তিন গম্বুজ বিশিষ্ট স্থাপত্য’-র তালা খোলার পর যখন ফৈজাবাদ আদালত কিছু মানুষকে প্রার্থনার অনুমতি দেয় তখন হিন্দুরা বস্তুতই অবহেলিত বোধ করেছিলেন। বইয়ে নির্দিষ্ট করে লেখা হয়েছে যে, “হিন্দুরা মনে করেছিলেন, রাম জন্মভূমি এবং ভগবান শ্রীরামকে নিয়ে তাঁদের আবেগকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অপর দিকে মুসলমান সম্প্রদায় চেয়েছিল ওই স্থাপত্যের উপর তাঁদের অধিকার কায়েম করতে।”

বইতে লেখা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের রায়েই অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। বড় বড় করে লেখা হয়েছে ২০১৯সালের সর্বোচ্চ আদালতের রায়। অথচ বাদ গিয়েছে বাবরি ধ্বংসের জন্য ১৯৯২ সালে তৎকালীন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংহের সরকারকে আদালতের ভর্ৎসনার কথা। বাদ গিয়েছে অটল বিহারী বাজপেয়ীর বক্তব্য উন্মোচিত ছবি যাতে বাজপেয়ী বলেছিলেন, “অযোধ্যা হল বিজেপির সবচেয়ে বড় ভুল”।

এই এনসিইআরটি হল কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের অধীন একটি স্বয়ংশাসিত সংস্থা। এই সংস্থা প্রকাশিত বইয়ের পাঠক্রম অনুসরণ করে সিবিএসই বোর্ড। আইসিএসসি এবং আইএসসিও কিছু ক্ষেত্রে এই বইগুলিকে নিজের পাঠক্রমের অংশ হিসেবে গ্রহণ করে। এই দুই বোর্ডের পড়ুয়ারাই চলতি বছর থেকে এই বদলানো ইতিহাস পড়বে যা রাতারাতি লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়ের পরেই বদলে গিয়েছে। যদিও এই সংশোধন সম্পর্কে এনসিইআরটি জানিয়েছে, সাম্প্রদায়িক অশান্তির মতো খারাপ স্মৃতি তারা পড়ুয়াদের জানান দিতে চান না। বরং এই ইতিহাসের মধ্যে দিয়ে আগামীর পড়ুয়াদের মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সঞ্চার হবে।

Leave a comment
scroll to top