Close

শিবপুর IIESTর মুখে সেলোটেপ লাগাতে চাইছে BJP, অভিযোগ

গত সোমবার রাষ্ট্রপতি দৌপদী মূর্মু IIEST শিবপুর-এর বোর্ড অফ গভর্নরসের চেয়ারপারসন হিসেবে মনোনিত করেছেন তেজস্বীনি আনন্থা কুমারকে।

গত সোমবার রাষ্ট্রপতি দৌপদী মূর্মু IIEST শিবপুর-এর বোর্ড অফ গভর্নরসের চেয়ারপারসন হিসেবে মনোনিত করেছেন তেজস্বীনি আনন্থা কুমারকে।

ক্রমেই যেন সঙ্ঘ পরিবারের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠছে শিবপুর ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সাইন্স এন্ড টেকনোলজি বা শিবপুর IIEST, এমনটাই দাবি অধ্যাপক এবং সদ্য প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীদের একাংশের। এই অভিযোগ আগে উঠলেও সম্প্রতি শীর্ষ পদে এক ভারতীয় জনতা পার্টি নেত্রীর মনোনয়নকে কেন্দ্র করে নতুন করে আশংকায় ভ্রু কুঁচকেছেন শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের একাংশ।

গত সোমবার রাষ্ট্রপতি দৌপদী মূর্মু IIEST শিবপুর-এর বোর্ড অফ গভর্নরসের চেয়ারপারসন হিসেবে মনোনিত করেছেন তেজস্বীনি আনন্থা কুমারকে। তেজস্বিনীর এই নিয়োগ প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষা মহলে।

কে শিবপুর IIEST-এর এই নতুন চেয়ার পার্সন?

তেজস্বীনি আনন্থা কুমার হলেন কর্ণটকের রাজ্য বিজেপির সহসভাপতি। তাঁর স্বামী প্রয়াত আনন্থা কুমার বিজেপির টিকিটে দক্ষিণ ব্যাঙ্গালোর থেকে ছয় বার সাংসদ হয়েছিলেন। অটল বিহারি বাজপেয়ী এবং নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রীসভায় ক্যাবিনেটেও স্থান পেয়েছিলেন তিনি।

তেজস্বীনি আনন্থা কুমার, ছবি সূত্র: উইকিমিডিয়া

নতুন চেয়ারপারসনের মনোনয়ন নিয়ে সন্দিহান শিক্ষা মহল। যদিও “আচরণবিধি” এবং অথরিটির “দমন পীড়ন”-এর কারণে অনেকেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলে জানিয়েছেন।

নতুন চেয়ার পার্সন তেজস্বীনি কারিগরি বিদ্যায় স্নাতক এবং ইন্ডোলজি বা ভারতবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। তিনি অদম্য চেতনা ফান্ডেশন নামে একটি এনজিওর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ফলত তার যোগ্যতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

IIEST শিবপুর-এর এয়ারোস্পেস বিভাগের একজন অধ্যাপকের মতে, শিক্ষা ক্ষেত্রগুলোর মাথায় রাজনীতিবিদ দের বসানো আসলে, শিক্ষা বা গবেষণার উৎকর্ষ নিয়ে ভাবনার বদলে প্রতিষ্ঠান গুলোর উপর দলিয় নিয়ন্ত্রণ কায়েমের ইচ্ছার প্রতিফলন।

তিনি বলেন “এর আগে আমরা চেয়ার পার্সন হিসেবে পেয়েছি রাধা কৃষ্ণনকে, যিনি ইসরোর চেয়ারম্যান ছিলেন, ড. আত্রে যিনি ডিআরডিও এর একটি ইন্সটিটিউশনের ডাইরেক্টর ছিলেন। নতুন যিনি চেয়ারম্যান হলেন তেজস্বিনী ম্যাডাম, তার প্রোফাইল থেকে জানা যায়, তিনি একাডেমিয়া, রিসার্চ বা টেকনিক্যাল কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত কেউ নন। তিনি একজন সমাজসেবি। ফলত তিনি আমাদের সমস্যা কতটা অনুধাবন করতে পারবেন, সেই বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে।”

২০১৮ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর দক্ষিণ ব্যাঙ্গালোরের কেন্দ্রটি থেকে ২০১৯ এর নির্বাচনে তেজস্বিনীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা এক প্রকার নিশ্চিত হলেও, হঠাৎ ঐ কেন্দ্রে বিজেপির তরুণ নেতা তেজস্বী সূর্যকে প্রার্থী করে বিজেপি। ফলত রাজ্য বিজেপিতে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সম্প্রতি ২০২৪ সালে কংগ্রেসের হয়ে তিনি ঐ কেন্দ্রে লড়বেন কিনা সেই নিয়ে জল্পনা চলেছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও তেজস্বিনী সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন যে বিজেপি ছাড়ার কোনো পরিকল্পনা তার নেই।

প্রসঙ্গত নতুন চেয়ার পার্সনই শুধু নয়, ডিন অফ স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়ও সঙ্ঘ পরিবার ঘনিষ্ঠ। মুখোপাধ্যায় ২০১৮ সালে এবিভিপির রাজ্য সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে তিনি এবিভিপির রাজ্য সহ সভাপতি ছিলেন। এবিভিপির রাজ্য সহসভাপতি থাকার সময় তিনি চিফ ওয়ার্ডেন ছিলেন, এর পরেই তিনি ডিন অফ স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার পদে বসেন। নিজের স্যোশাল মিডিয়াও তিনি এবিভিপির প্রচার করে থাকেন।



স্থাপত্যবিদ্যার এক অধ্যাপক বলেন, “এই রাজনীতিকরন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না হওয়াটাই কাম্য। আমরা কলেজ থেকে ডিমড ইউনিভার্সিটি থেকে IIEST হয়েছি। চিন্তাভাবনা বিনিময়, জ্ঞানের প্রসার, ভিন্ন মত প্রকাশ এসব আমাদের অংশ হয়ে উঠেছিলো। এটাকে যেন রাতারাতি অস্বীকার করা চলছে, জোরের সাথে চাপিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টার হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন,”যে কোনো কিছুকেই, যেটা নিজেদের মনঃপুত হচ্ছে না, সেটা যদি উচিৎ কথাও হয়, সেটা একেবারেই সরকারের বিরুদ্ধে নয়। নিজেদের স্বার্থরক্ষার জন্যেই যদি সেই বক্তব্যকে সরকার বিরোধী বক্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তাহলে তো খুব মুশকিল। এত মেপে কথা বলা, লোকে লিখতে গেলে ভাবে। কথা গুলোও ভাবনা চিন্তা করে বলতে হয়। সব কিছুর উপর একটা অলিখিত সেলোটেপ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে কেউ মুখ খুলতে না পারে। খুব দম বন্ধ করা একটা পরিবেশ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। “

“গত দশ বছর যা চলছে, তা প্রতিষ্টানটাকে একটু একটু করে নষ্ট করছে। যারা এখানে কাজ করছেন তারা মাইনে ছাড়া আত্ম মর্যাদা সহ সমস্ত ক্ষেত্রে খুব গ্লানিতে ভুগছেন।” অধ্যাপক আক্ষেপের সাথে যোগ করেন।

প্রসঙ্গত গত জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের পোশাক পরে প্রতিষ্টানটিতে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের জন্মদিন পালনের ঘটনায় বিতর্ক ছড়ায়। যেখানে ১৯৫ জন কর্মচারীকে ৫৫০ টাকার বিনিময়ে আরএসএস এর পোষাক কিনে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ।

যদিও স্থাপত্যবিদ্যার প্রাক্তনী সপ্তদীপা চৌধুরীর অভিযোগ “উগ্রহিন্দুত্ববাদীরা প্রকাশ্যে ক্যাম্পাসে অনুষ্টান করতে পারলেও, চটুল গান চালিয়ে নাচা নাচি করতে পারলেও, ছাত্র ছাত্রীরা কোনো অনুষ্ঠান করতে চাইলে, বা নিজেদের দাবি নিয়ে কথা বলতে চাইলে তখন তাদের আটকানো হয়। সিসিটিভির মাধ্যমে সব সময় নজর রাখা হয়। বহিরাগত হিন্দুত্ববাদীদের আনাগোনা লেগে থাকলেও কলেজের প্রাক্তনীদের কলেজে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়।”

ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রাক্তন ছাত্র স্বর্ণাভ চক্রবর্তীর অভিযোগ “গতবার ১লা বৈশাখে ছাত্র ছাত্রীরা মঙ্গল শোভা যাত্রার আয়োজন কতে চাইলে, অথরিটি সেই অনুষ্ঠানের কর্মসূচি নির্ধারণ করে দিতে চায়, ঐ অনুষ্ঠানে লালন, নজরুলের গান বাদ দেওয়া সহ বিভিন্ন আপত্তিকর দাবি জানায়।”

নতুন চেয়ার পার্সন প্রসঙ্গে স্বর্ণাভ বলেন “এটা গৈরিকীকরণ ছাড়া আর কিছু না। অবশ্য যে প্রতিষ্ঠানের ডিন অফ স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার এবিভিপি এর পদে থাকা একজন, সেখানে এটাই স্বাভাবিক। কলেজের মান এই কারণেই কমছে।”

CCTV মোড়া ক্যাম্পাসে সমস্যা কোথায়? কী বলছে ভুক্তভোগীরা?

সৌম্য মন্ডল একজন আর্থ-সামাজিক এবং ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি ইস্ট পোস্ট বাংলায় মুখ্য সম্পাদক হিসাবে কর্মরত। মূলত উদীয়মান বহু-মেরুর বিশ্বের নানা ঘটনাবলীর তিনি বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করেন।

Leave a comment
scroll to top