Close

কলকাতার মমি সহ সমস্ত লুটের মাল ফেরত দেওয়া উচিৎ

আমরা যে আমাদের মিউজিয়মে এ রাখা মমি নিয়ে নাচানাচি কোরে থাকি, তা আসলে লুটের মাল। আমরা দায়িত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আগলে রেখে সামাল দিচ্ছি।

Image by Hulki Okan Tabak from Pixabay

বদমাইশ ব্রিটিশরা ঔপনিবেশিকদের মধ্যে শীর্ষে ছিল। ধূর্ততায় শ্রেষ্ঠ এই ব্রিটিশরা সারা পৃথিবী জুড়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক উপনিবেশ স্থাপন করতে পেরেছিলো ছলে-বলে-কৌশলে। পশ্চিম ইউরোপে সামান্য কয়েকটি দেশ বা রাষ্ট্র বা জাতি এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্য আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশগুলোর প্রায় প্রতিটা দেশে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে। চিরকালের যুদ্ধবাজ, অত্যচারী, লুটেরা, খুনী এই দেশগুলো হলো ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, বেলজিয়াম, হল্যান্ড, প্রভৃতি।

কমবেশি ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণে এই হার্মাদরা উপনিবেশগুলোকে লুটপাট করে ছিবড়ে করে দিয়েছে। এই লুটের মাল বা সম্পদের ওপর ভিত্তি কোরেই এদের বর্তমান রমরমা, চোখ-ধাঁধাঁনো, ঝাঁ-চকচকে অবস্থা। বিপ্রতীপে উপনিবেশগুলোর এক সামগ্রিক করুণ অবস্থা। তাই, বর্তমানে সারা পৃথিবীর পুরোনো উপনিবেশগুলোর প্রায় সবকটাই এই লুটের মাল ফেরত ও আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবী জানাতে শুরু কোরেছে। এ বিষয়ে ঔপনিবেশিকদের চূড়ান্ত অনীহা সত্ত্বেও।

এই লুটের মাল মূলতঃ তিনভাগে বিভক্ত।

প্রথমভাগে, নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণমুদ্রা, রৌপ্য মুদ্রা, তাম্রমুদ্রা, সোনা, রূপা, হীরেজহরত,প্রভৃতি।

দ্বিতীয়ভাগে আছে, প্রত্নতাত্ত্বিক, নৃতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক নিদর্শন তথা বস্তুগুলো।

তৃতীয়ভাগে, প্রাকৃতিক, বনজ, খনিজ সম্পদ লুটপাট।

ইউরোপ প্রায় সবকটা দেশের সবকটা মিউজিয়মেই এইসব লুটের মাল প্রদর্শিত হোচ্ছে,বহু বছর ধরে, তথাকথিত গর্বের সঙ্গে। প্রদর্শনযোগ্য বস্তু বিনিময়ের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ঔপনিবেশিকরা পরোক্ষ ঔপনিবেশিকদের মিউজিয়ম সমৃদ্ধ কোরেছে, এই লুটের মাল ভাগাভাগি করে।

আশার কথা, এইসব ঔপনিবেশিক দেশগুলোতে কিছু মানুষজন আছেন যাঁরা এই ঔপনিবেশিকতা তথা ঔপনিবেশিক লুটপাটের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি, তারই উদাহরণ হিসাবে, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে আফ্রিকা থেকে লুট করা এক প্রত্নতাত্তিক সামগ্রী এক সুচারু অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হয়।

তবে, এই লুটের মাল সম্ভবতঃ প্রথম ফেরত দেওয়া হয় আমাদেরই। ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ভেংকটরামন্ তার অবসর গ্রহণের ঠিক পূর্বে বিরাট এক পারিবারিক দলবল নিয়ে পর্তুগাল পরিভ্রমণে যায়। ফেরত আসার সময়, তদানীন্তন পর্তুগালের রাষ্ট্রপতি ভারতের গোয়া থেকে লুট করা কিছু মাল ফেরত দেয়। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬টি বড়ো বড়ো সিল করা ক্রেটে সেসব ফেরত আসে। যদিও, ক্রেটগুলো কতো বড়ো ছিলো এবং ফেরত দেওয়া লুটের সামগ্রীর কোনো তালিকাও আমারা পরে পাইনি।

কিন্তু, সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা, আমরা এই ঔপনিবেশিক লুটের এক মাল সামাল দিচ্ছি গতো দেড়শো বছর ধরে। অমানুষ ব্রিটিশরা মিশরকে বগলদাবা করার পর থেকেই প্যাঁচ কষতে থাকে, পিরামিডের ভিতরের জিনিসপত্র লুট করার জন্য।

বলা বাহুল্য, তৈরি হওয়ার পর থেকে কয়েক হাজার বছর ধরে পিরামিডগুলো সিল করা অবস্থায় সুরক্ষিত ছিলো। কোনোদিন কেউ ওগুলো ভেঙে ভিতরে ঢোকার কথা স্বপ্নেও ভাবেনি। মানুষের মুখোশ পরা ব্রিটিশগুলোই এই অপরাধ প্রথম সংঘটিত করে। 

প্রথমবারের মতো, তারা একটি পিরামিড্ ভেঙে ঢোকে। তিনটে মমি ও অন্যান্য জিনিষপত্র লুট করে। সেই অন্যান্য জিনিসপত্রের হদিশ পাওয়া যায় না।

তিনটি মমির একটি পাচার করে নিজস্ব লন্ডন মিউজিয়মে। দ্বিতীয়টি তারা রাখে কায়রো মিউজিয়মে, স্বান্তনা পুরষ্কার হিসাবে। তৃতীয়টি তারা চালান করে ভারতে। সেখানে তাদের রাজধানী কলকাতাকে তারা তাদের এক শো-পিস্ হিসাবে গড়ে তুলছিলো। তারই অঙ্গ হিসাবে, এশিয়ার আধুনিক প্রথম মিউজিয়ম্ সুবিশালরূপে বানায়। এখানেই তারা তৃতীয় মমিটি রাখে।

সুতরাং, আমরা যে আমাদের মিউজিয়মে এ রাখা মমি নিয়ে নাচানাচি কোরে থাকি, তা আসলে লুটের মাল। আমরা দায়িত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আগলে রেখে সামাল দিচ্ছি। মানুষজনকে দেখাচ্ছি আমাদের সংগ্রহ বলে। ব্রিটেন এর থেকে আমাদের লুট হওয়া মাল ফেরত দেওয়ার দাবী পেশ করার আগে এই লুটের মাল অবিলম্বে নিঃশর্তে মিশরকে ফেরত দিয়ে দেওয়া উচিত।

(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

লেখক, ফটোগ্রাফার, বাংলা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একজন সংগঠক।

Leave a comment
scroll to top