Close

৭৬ বছর ধরে পথচলে কতটা এগোলো ভারত?

ভারত-এর স্বাধীনতার ৭২ বছর। একই সময় স্বাধীন হয়েছে পাকিস্তানও। কাছাকাছি সময়ে মুক্ত হয়েছিল চীন। দুই প্রতিবেশীর সাথে কতটা পথ এগোলাম আমরা?

ভারত-এর স্বাধীনতার ৭২ বছর। একই সময় স্বাধীন হয়েছে পাকিস্তানও। কাছাকাছি সময়ে মুক্ত হয়েছিল চীন। দুই প্রতিবেশীর সাথে কতটা পথ এগোলাম আমরা?

৭৬ বছর আগে ব্রিটিশ শাসন থেকে পাকিস্তান এবং ভারত মুক্ত হয়। তার ২ বছরের মাথায় হয় চীন বিপ্লব। ভারত এবং পাকিস্তানের এক সাধারণ ইতিহাস থাকলেও, দুই দেশের জনসংখ্যার ব্যাপক পার্থক্য আছে। অন্যদিকে জনসংখ্যার দিক থেকে ভারতের তুলনা চলতে পারে চীনের সাথে। তাই ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আমরা প্রতিবেশী দুই দেশের সাথে তুলনা করে দেখে নেব, কোথা থেকে আমরা প্রতিবেশীরা শুরু করেছিলাম, আর এখন কোথায় এসে দাঁড়ালাম।

ভারত স্বাধীন হয়েছে ৭৬ বছর হল। অগ্রগতির হাল কী?


শিক্ষা

ভারতে ১৯৫১ সালে ১৮% মানুষ ছিলো সাক্ষর। নারীদের মধ্যে সাক্ষর ছিলো মাত্র ৮%। ২০২২ সালের হিসেবে ভারতের ৭৭.৭% মানুষ সাক্ষর। এর মধ্যে ৮৪% পুরুষ এবং ৭২% নারীর সাক্ষর। স্বাধীনতার ৭৬ বছর পরেও দেশের বিপুল অংশের মানুষ এখনো অক্ষরজ্ঞান হীন। অন্যদিকে ২০২৩ সালের প্রকাশিত তথ্য হিসেবে পাকিস্তানের সাক্ষর মানুষ ৫৮.৯%।

১৯৪৯ সালে চীন বিপ্লবের সময় সেই দেশে সাক্ষর মানুষের সংখ্যা ছিলো ২০% মত। অর্থাৎ ভারতের কাছাকাছি। ২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী চীনে সাক্ষর মানুষ ৯৯.৮৩%।


মৃত্যুর হার


ভারতে বার্ষিক মৃত্যুর হার ৪০ এর দশকে ছিলো প্রতি এক হাজার জনে ২৫ জন। ২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী ভারতে বার্ষিক মৃত্যুর হার এক হাজার জনে ৯.৪৫ জন।

পাকিস্তান ২০২২ এর হিসাব অনুযায়ী বার্ষিক মৃত্যুর হার প্রতি এক হাজার জনে ৭ জন।

চীনে প্রতি এক হাজার জনে ২১ জনের মৃত্যু হত ১৯৫০ সালে। ২০২২ এর হিসেবে চীনের মৃত্যুর হার বার্ষিক প্রতি হাজার জনে ৭.৩৭জন।


শিশু মৃত্যুর হার

ভারতে ৪০ এর দশকে প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে ১৭৫-১৯০টি শিশুর মৃত্যু হত। ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী প্রতি এক হাজার জনে ২৭.৬৯টি শিশুর মৃত্যু হয়।

২০২৩ সালের হিসেব অনুযায়ী পাকিস্তানে প্রতি হাজারে ৫৫.৭৭টি শিশুর মৃত্যু হয়।

চীনে ১৯৪৯ সালে শিশু মৃত্যুর হার ছিলো হাজার জনে ২৫০ জন। ২০২৩ সালের হিসেবে চীনে শিশু মৃত্যুর প্রতি হাজারে হার ৮.৩৯জন।


মেডিক্যাল কলেজ এবং স্নাতক ডাক্তার


ভারতে ১৯৪৩ সালে ১০টি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ৭০০জন ছাত্র স্নাতক পাশ করত প্রতিবছর। ১৯৫১ সালে ভারতে ২৮টি মেডিক্যাল কলেজ হয়, দেশে মাত্র ১৮০০০ ডাক্তার ছিলো। ২০২০ সালের হিসেব অনুযায়ী ৭০৩টি মেডিক্যাল কলেজ আছে। যার মধ্যে ২৬৩টি বেসরকারি। বাকি গুলি সরকারি বা আধা সরকারি। ২০২২ সালের হিসেব অনুযায়ী ৯০হাজার ডাক্তার ঐ বছর স্নাতক হয়।

পাকিস্তানে ২০১৯ অব্দি ১১৪টি মেডিক্যাল কলেজ আছে। এর মধ্যে ৪৪টা সরকারি, ৭০টি বেসরকারি।

২০১৯ অব্দি চীনে মোট ৪২০ টি মেডিক্যাল কলেজ আছে। ৩৪৫টি সরকারি এবং ৭৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে ২,৮৬,২১৯ জন স্নাতক হয়েছে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে।

শয্যা

প্রতি দশ হাজার মানুষ পিছু ভারতে মাত্র ৫ টি হসপিটাল শয্যা আছে। প্রতি দশ হাজার মানুষ পিছু ৮.৬জন ডাক্তার আছে।


২০১৭ সালের হিসেবে পাকিস্তানে প্রতি দশ হাজার মানুষ পিছু ৬টি শয্যা আছে। প্রতি হাজার জনে ১.১১ জন ডাক্তার আছে ২০১৯ সালের হিসেব অনুযায়ী।

চীনে প্রতি এক হাজার মানুষ পিছু ৬.৭ টি শয্যা আছে ২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী। প্রতি এক হাজার মানুষ পিছু ৩.০৪ জন ডাক্তার আছে।

২০২০ সালের মানব উন্নয়ন রিপোর্ট অনুযায়ী স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় ভারত ১৫৫ স্থান অধিকার করেছে। ভারতের পেছনে ছিলো মাত্র ১২টি দেশ।

গ্রাম, শহর, কৃষি

ভারতে ১৯৫১ সালে, জনসংখ্যার প্রায় ৮২.৩ শতাংশ মানুষ ছিল গ্রামীণ। যেখানে ১৯০১ সালে, ৬৩.৭ শতাংশ ভারতীয় কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিল, ১৯৪১ সাল নাগাদ এই সংখ্যা ৭০ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে প্রক্রিয়াকরণ এবং উৎপাদনে নিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১৯০১ সালে ১০.৩ মিলিয়ন থেকে ১৯৫১ সালে ৮.৮ মিলিয়নে নেমে আসে যদিও জনসংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছেছিলো। ২০২২-২৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী দেশের ৬৫% মানুষ গ্রামে থাকে। ৪৭% মানুষ কৃষি নির্ভর।

পাকিস্তানের ৬৪% মানুষ থাকে গ্রামাঞ্চলে। জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষই কৃষি কাজের সাথে যুক্ত।

চীনে ১৯৪৯ সালে ৮৯.৩৬% মানুষ গ্রামে থাকতো। ২০২২ সালের হিসেব অনুযায়ী চীনের ৩৬.৪৪% মানুষ গ্রামে থাকে। ২৪% মানুষ কৃষির সাথে জড়িত।

পাকা রাস্তা


১৯৪০ এর দশকে ভারতে ১,০৪,৬০৭.৩৬ কিমি বা ৬৫হাজার মাইল পাকা রাস্তা ছিলো। ২০২২ সালের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৪০ লাখ মাইল পাকা রাস্তা আছে।

পাকিস্তানের ১৯৪৭ সালে ২২,২৩৮ কিমি বা ১৩,৮১৮ মাইল পাকা রাস্তা ছিলো, বর্তমানে ১ লাখ ৮৮ হাজার কিমি বা ১,১৬৮১৭.৭৮ মাইল রাস্তা আছে।

চীনে ১৯৪৯ সালে ৮০,৮০০ কিমি রাস্তা ছিলো। ২০২২ এর হিসেব অনুযায়ী ৫২ লাখ কিলমিটার রাস্তা আছে।

রেলপথ

ভারত-এ স্বাধীনতার আগে ৪২হাজার মাইল রেলপথ ছিলো। ২০২২ সালের হিসেব অনুযায়ী ৮০ হাজার মাইলের কাছা কাছি রেলপথ আছে।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তানে ৬৫০০০ কিমি রেলপথ ছিলো। বর্তমানে ১,০৪৩ কিমি রেলপথ আছে।

চীনে ১৯৪৯ সালে ২১,৮০০ কিমি রেলপথ ছিলো। ২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী ১৫৫,০০০কিমি (৯৬,৩১৩ মাইল) রেলপথ আছে চীনে।



উপরের তথ্যগুলো নিতান্তই প্রাথমিক সংখ্যা। এইখান থেকে সম্পূর্ণ ধারণা সম্ভব নয়। যেমন ৩ দেশের গ্রাম শহরের শতাংশের পার্থক্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেশ ভেদে গ্রাম শহরের মান্য বৈশিষ্ট্য এবং উন্নয়নের স্তরের পার্থক্য থাকতে পারে। সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যার পার্থক্য দেওয়া হয়েছে, কিন্তু দেশ ভেদে বেসরকারি বা সরকারি ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রনে সরকার বা ব্যক্তি ব্যবসাদারের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার তারতম্য থাকতে পারে। অথবা কৃষির সাথে যুক্ত মানুষরা ক্ষুদ্র কৃষির সাথে যুক্ত নাকি বৃহৎ কৃষি খামারের সাথে যুক্ত? থাকতে পারে এর তুল্যমূল্য বিচারও।

লেখক

  • সৌম্য মন্ডল

    সৌম্য মন্ডল একজন আর্থ-সামাজিক এবং ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি ইস্ট পোস্ট বাংলায় মুখ্য সম্পাদক হিসাবে কর্মরত। মূলত উদীয়মান বহু-মেরুর বিশ্বের নানা ঘটনাবলীর তিনি বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করেন।

    View all posts

সৌম্য মন্ডল একজন আর্থ-সামাজিক এবং ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি ইস্ট পোস্ট বাংলায় মুখ্য সম্পাদক হিসাবে কর্মরত। মূলত উদীয়মান বহু-মেরুর বিশ্বের নানা ঘটনাবলীর তিনি বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করেন।

Leave a comment
scroll to top