Close

সিঙ্ঘম ও NewsClick নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন কি ম্যাকার্থির আত্মা কে জাগিয়ে তুলছে?

মার্কিন কোটিপতি নেভিল রয় সিঙ্ঘম ও ভারতের সংবাদমাধ্যম NewsClick নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন কি দক্ষিণপন্থীদের দমনপীড়নে সহায়তা করবে?

সিঙ্ঘম ও NewsClick নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন কি ম্যাকার্থির আত্মা কে জাগিয়ে তুলছে?

শনিবার ৫ই অগাস্ট, নিউ ইয়র্ক টাইমস “চীনা প্রচার” নিয়ে একটি দীর্ঘ “তদন্তমূলক” প্রতিবেদন প্রকাশ করে যা আন্তর্জাতিক স্তরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এর সাথে এই প্রতিবেদনে ভারতের মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যম NewsClick সহ বেশ কিছু প্রবাসী ভারতীয় বুদ্ধিজীবীদের নাম জড়িয়েছে, যার ফলে ভারতের ইউনিয়ন সরকার তাদের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হয়েছে।

যদিও এই তথাকথিত “তদন্তমূলক” রিপোর্টে এমন কিছুই নেই যা গোপন, যার জন্য “তদন্ত” প্রয়োজন। প্রতিবেদনটির কেন্দ্রে আছেন সাংহাই-স্থিত ৬৯ বছরের মার্কিন নাগরিক জনৈক নেভিল রায় সিঙ্ঘম।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনটি সিঙ্ঘমকে খলনায়ক সাজাতে গিয়ে, তাঁর যে পরিচয় দিয়েছে, সেই পরিচয়ের ফলেই দুনিয়ার একাংশের মানুষের কাছে, বিশেষত বহু বাঙালির কাছে, তিনি প্রশংসার পাত্র হতে পারেন।

কী আছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের “তদন্তে”?

মার্কিন সংবাদপত্রটি অভিযোগ করেছে যে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) বৈদেশিক প্রচারকার্যের কেন্দ্রে রয়েছেন “নেভিল রয় সিঙ্ঘম, একজন ক্যারিশম্যাটিক আমেরিকান কোটিপতি যিনি অতি-বাম উদ্দেশ্যের সমাজতান্ত্রিক হিতৈষী হিসাবে পরিচিত।” 

সিঙ্ঘমের এক অজ্ঞাতপরিচয় ঘনিষ্ঠকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, “মিঃ সিঙ্ঘম দীর্ঘদিন ধরে মাওবাদের অনুরাগী, কমিউনিস্ট মতাদর্শ যা আধুনিক চীনের জন্ম দিয়েছে। তিনি বামপন্থী প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের অধীনে ভেনেজুয়েলাকে ‘অসাধারণ গণতান্ত্রিক স্থান’ বলে প্রশংসা করেন। এবং চীনে যাওয়ার এক দশক আগে, তিনি বলেছিলেন যে বিশ্ব তার (চীনের) পরিচালনা পদ্ধতি থেকে শিখতে পারে।’… মিঃ সিঙ্ঘম একজন দীর্ঘকালীন রাজনৈতিক কর্মী যিনি শিকাগো-ভিত্তিক সফ্টওয়্যার পরামর্শদাতা সংস্থা থটওয়ার্কস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখানে, মিঃ সিঙ্ঘম একজন আকর্ষণীয় ব্যাক্তিত্ব হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন, যিনি একটি সমতাবাদী কর্পোরেট সংস্কৃতি তৈরি করার জন্য গর্ব করতেন। তিনি তাঁর রাজনীতির ব্যাপারে অকুন্ঠ ছিলেন। কোম্পানির একজন প্রাক্তন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর, মাজদি হারুন, মিঃ সিঙ্ঘমের মার্কসবাদী বিপ্লবী চে গুয়েভারার উপর বক্তৃতা দেওয়ার কথা স্মরণ করেন।  মিঃ হারুন বলেন, কর্মীরা মাঝে মাঝে মজা করে একে অপরকে ‘কমরেড’ বলে ডাকতো। ২০১৭ সালে, মিঃ সিঙ্ঘম জোডি ইভান্সকে বিয়ে করেন, যিনি ডেমোক্র্যাট দলের একজন প্রাক্তন রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং কোড পিঙ্কের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।”

নিউ ইয়র্ক টাইমস আরও জানিয়েছে জামাইকায় এই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন “ডেমোক্রেসি নাও!”-এর সঞ্চালক অ্যামি গুডম্যান, বেন অ্যান্ড জেরির আইসক্রিমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বেন কোহেন, এবং নাট্যকার ভি, যিনি পূর্বে ইভ এনসলার নামে পরিচিত ছিলেন ও “দ্য ভ্যাজাইনা মনোলোগস” লিখেছেন। এই অনুষ্ঠান চলাকালীন নাকি নবদম্পতি একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেন বামপন্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে। এই অনুষ্ঠানটিকে সিঙ্ঘম ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগগুলোর প্রমাণ হিসাবে উল্লেখ করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের অভিযোগ সিঙ্ঘম ভারতের অনলাইন সংবাদমাধ্যম NewsClick সহ বিশ্বের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম এবং অলাভজনক বামপন্থী প্রতিষ্ঠানে লগ্নি বা অর্থ সাহায্য করেছেন। যদিও এই সমস্ত বিনিয়োগ বা অর্থ সাহায্যের মধ্যে জালিয়াতি বা বেআইনী কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি নিউ ইয়র্ক টাইমস। সিঙ্ঘম বা যে সমস্ত সংগঠনের সাথে তার আর্থিক সম্পর্ক আছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে, তারাও জানিয়েছে যে নির্দিষ্ট দেশের আর্থিক আইন মেনেই তারা তাদের সংগঠন চালান।

যদিও নিউ ইয়র্ক টাইমসের দাবি “মিঃ সিঙ্ঘমের অলাভজনক সংস্থাগুলোর কোনোটিই বিদেশী এজেন্ট নিবন্ধন আইনের অধীনে নিবন্ধিত হয়নি, যা জনমতকে প্রভাবিত করতে চায় এমন বিদেশী গোষ্ঠীগুলির জন্য প্রয়োজন। এটি সাধারণত বিদেশী সরকারের কাছ থেকে অর্থ বা আদেশ নেওয়া গোষ্ঠীগুলির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।” 

প্রামাণ্য নথিহীন তদন্ত 

যদিও গোটা “তদন্তে” নিউ ইয়র্ক টাইমস কোথাও প্রমাণ করতে পারেনি যে সিঙ্ঘম বা তার সাথে জড়িত বলে দাবি করা সংস্থা গুলো চীনের সরকারের কাছ থেকে এক টাকাও সাহায্য নিয়েছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনটির লেখকেরা জানিয়েছে যে এই সমস্ত সংগঠন ও সংস্থাকে প্রায় ২৭.৫ কোটি মার্কিন ডলার দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে, যদিও মার্কিন এনজিও-দের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত আইনে যেহেতু কারা চাঁদা দিয়েছে সেটা জানা যায় না তাই এই অর্থের উৎস লেখকেরা খুঁজে পাননি।

কিন্তু অর্থের উৎস খুঁজে না পেলেও বা সেই সংক্রান্ত কোনো প্রামাণ্য নথি না থাকলেও এই প্রতিবেদনে সেই অর্থকে চীনা অর্থ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

অভিযুক্ত সংস্থা গুলো কোনো দেশের সরকার বা রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করা বা টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে, তারা জানিয়েছে যে, তারা যা করেন, সেটা তাদের বিশ্বাস বা মতাদর্শগত কারণেই করেন।

মূল আপত্তি কিসে?

নিউ ইয়র্ক টাইমসের আপত্তি তারা বার বার খোলসা করেছে। সিঙ্ঘমের সাথে জড়িত সংস্থা গুলোর বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্ক টাইমসের অভিযোগ তারা চীনা সরকারের “টকিং পয়েন্ট” বা আলোচ্য ইস্যুগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করে। 

শুরুতেই তার উদাহরণও পত্রিকাটি দিয়েছে, অভিযোগ সংস্থাগুলো ইউরোপ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে “অ্যান্টি এশিয়ান হেট ক্রাইম” বা এশিয়ার মানুষদের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষী অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। এই সংগঠন গুলো নতুন করে দ্বিতীয় “ঠান্ডা যুদ্ধ” শুরুর বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করে। এরা প্রচার করে “পশ্চিমাদের চীন-বিরোধী প্রচার, আবহাওয়া পরিবর্তন এবং বর্ণবাদী অন্যায়ের মত বিষয় থেকে চোখ ঘোরাতে ব্যবহৃত হয়।” 

নিউ ইয়র্ক টাইমসের অভিযোগ উক্ত সংস্থা গুলো চীনে উইঘুরদের উপর চীনা সরকারের অপরাধকে অস্বীকার করে। যদিও ঘটনা হল এই যে ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া সহ নানা মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে কার্পেট বোমা বর্ষণ করে লক্ষ-লক্ষ মুসলিমের হত্যাকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় কিছু দেশ চীনের উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার হলেও, বিশ্বের নানা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ও আরব লীগ ভুক্ত দেশ গুলো সরজমিন তদন্ত করে সরকারীভাবে উইঘুর নিয়ে পশ্চিমাদের অভিযোগ মানতে চায়নি, এবং চীনকে ক্লিন চিট দিয়েছে। 

নিউ ইয়র্ক টাইমসের যুক্তি অনুযায়ী কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ গুলোই মুসলিমদের প্রকৃত বন্ধু এবং আরব লীগ ভুক্ত দেশ গুলো মুসলিম বিরোধী?

দারিদ্র্য এবং বেকারত্ব ক্লিষ্ট দেশের মানুষের কমিউনিস্ট পার্টি বা সমাজতন্ত্রের প্রতি আকর্ষণ একটা স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে এতদিন পুঁজিবাদের সমর্থক তাত্ত্বিকেরাও মেনে এসেছিল। কিন্তু নিউ ইয়র্ক টাইমসের তদন্তে দক্ষিণ আফ্রিকায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী শ্রমিক পার্টি নামে একটি পার্টির উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ “আঞ্চলিক দারিদ্র্য এবং বেকারত্ব থাকার পরেও পার্টিটি চীনের বিষয়ে আগ্রহ দেখায়।” আরো অভিযোগ সিঙ্ঘম এই দলের সদস্যদের চীনের ফুদান ইউনিভার্সিটির একাডেমিক লিন বো এর অনলাইন ভাষণ শুনতে আমন্ত্রণ জানান।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের আরো দুটি গুরুতর অভিযোগ এই যে, অভিযুক্ত সংস্থা গুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি একে অন্যের কনটেন্ট শেয়ার করে। এবং চীনা আধিকারিকরাও এদের কনটেন্ট রিট্যুইট করে। এমনকি নিউ ইয়র্ক টাইমসের তদন্তকারীরা গুনেও দেখেছে যে, চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম “সিঙ্ঘমের নেটওয়ার্ক” এর ব্যক্তি বা সংস্থাদের পোস্ট ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ১২২ বার রিট্যুইট করেছে।

এ ছাড়াও সিঙ্ঘমের চীনা যোগ বোঝাতে গিয়ে এই প্রতিবেদনের লেখকেরা উল্লেখ করেছেন যে তাঁর দাতব্য সংস্থাগুলোর থেকে নাকি প্রায় ১৮ লক্ষ মার্কিন ডলার মাকু নামক একটি চীনা কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছিল, যে সংস্থা নাকি সিপিসির হয়ে প্রচার চালায়। 

কিন্তু প্রশ্ন হল যখন বলা হচ্ছে চীনের থেকে অর্থ নিয়ে সিঙ্ঘম সিপিসির প্রচার চালাচ্ছেন, তখন তিনি কেন আবার চীনা কোম্পানিকে অর্থ দিয়ে সেই কাজ করাতে যাবেন? তাহলে কি নিউ ইয়র্ক টাইমস বলতে চাইছে যে মার্কিন অর্থে বলীয়ান হয়ে চীনা প্রচার চলছে? অর্থাৎ চীনের প্রচারযন্ত্র কে মার্কিন অর্থ চালনা করছে?

ভারতের মূলস্রোতের সংবাদ মাধ্যম NewsClick কে নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের আপত্তিটি হল এই যে তারা একটি ভিডিওতে বলেছে “চীনের ইতিহাস শ্রমিক শ্রেণীকে উদ্বুদ্ধ করে চলেছে”। NewsClick ওয়েবসাইটটি ২০১৯ সালে চীন বিপ্লবের ৭০ বছর উপলক্ষে একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যাকে মার্কিন সংবাদমাধ্যমটির আপত্তিজনক মনে হয়েছে।

বিশেষ দিন উপলক্ষে রুশ, চীন, কিউবা ভিয়েতনাম বা নকশালবাড়ি আন্দোলন নিয়ে বহু প্রতিবেদন বাংলার মূলস্রোতের বহু সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতে দেখতে বাঙালিরা অভ্যস্ত। জানা নেই এর পর বাংলা মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যম গুলোকেও রুশ, চীন, ভিয়েতনাম, কিউবার দালাল হিসেবে চিহ্নিত করে নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রবন্ধ প্রকাশ করবে কিনা! আর সেই নিয়ে ভারতের দক্ষিণপন্থী শাসক দলের নেতারা সাংবাদিক সম্মেলন করতে বসবেন কিনা!

যদিও কোনো প্রমাণ নেই, তথাপি যদি ধরেও নেওয়া হয় যে চীন সরকার এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে অর্থ দিয়ে থাকে, তবুও বলতে হয় প্রকাশ্যে ইউরোপীয় বৃহৎ শক্তিগুলো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা সাহায্য প্রাপ্ত মিডিয়া বা এনজিওর সুবিশাল সংখ্যার তুলনায় চীনের দ্বারা সাহায্য প্রাপ্ত বলে অভিযুক্ত সংস্থাগুলোর সংখ্যা নগন্য। শুধু তাই নয়, নিউ ইয়র্ক টাইমসের উল্লেখ করা তথাকথিত চীনা প্রচার যন্ত্র গুলোর মধ্যে কয়েকটি সংস্থা বাদে প্রায় সব গুলোই অপেশাদার, অ্যামেচার ধরনের। 

তবে আসলে সমস্যাটা কোথায়? নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে “কয়েক বছরের গবেষণায় দেখা গেছে যে কীভাবে দেশে জন্মানো এবং বিদেশী-সমর্থিত ভুল তথ্য, মূলধারার রক্ষণশীল আলোচনাকে প্রভাবিত করেছে।”

“ইরাকে গণ বিধ্বংসী অস্ত্র আছে”, “চীনে শি জিনপিং ব্যাঙ্ক বাঁচাতে ট্যাঙ্ক নামিয়ে দিয়েছে”, “শি জিনপিংকে অভ্যুথান করে সরানো হয়েছে”, “পুতিন মারা গেছে”, প্রভৃতি ভুয়ো তথ্য লাগাতার সম্ভ্রান্ত মার্কিন পত্রিকাগুলো থেকে প্রচারিত হতে দেখা যায়। 

নিউ ইয়র্ক টাইমসের এই তদন্ত রিপোর্টটি দেখে এই প্রশ্ন জাগবে যে মার্কিনীরা কি ভুয়ো তথ্য প্রচারের উপর একচেটিয়া অধিকার ধরে রাখতে চাইছে? মার্কিন সংবাদমাধ্যমটির উদ্দেশ্য কি এটাই যে চিহ্নিত শত্রু দেশ গুলোর বিরুদ্ধে তারা একতরফা ভাবে যা খুশি বলবে কিন্তু তার পাল্টা কোনো তথ্য প্রচারের যাতে কোনো সুযোগ না থাকে? 

ইউরোপ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী বিদেশ নীতি  বা আভ্যন্তরীণ বর্ণবিদ্বেষ, দারিদ্র্য, প্রভৃতির বিরুদ্ধে যাঁরা প্রতিবাদ করেন, বিদেশী গুপ্তচর হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ভয়ে তাঁরা যাতে প্রতিবাদ থেকে বিরত থাকে সেই চেষ্টাই কি করছে নিউ ইয়র্ক টাইমস?

ভারতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার হস্তক্ষেপে মার্কিনী ইন্ধন

গত ৭ই অগাস্ট ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতা এবং ইউনিয়ন তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ সিং ঠাকুর নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত তদন্তের উপর ভিত্তি করে একটি সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন। ঠাকুর বলেন “কংগ্রেস-চীন-NewsClick সবার নাড়ির যোগ আছে, রাহুল গান্ধীর নকল প্রেমের দোকানে, চীনা পণ্য স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে।” 

ঠাকুর আরও বলেন NewsClick যে বিদেশীদের দ্বারা মদদপুষ্ট সেটা তারা আগেই জানতেন। সংবাদপত্রে স্বাধীনতার নামে “ভারত-বিরোধী” দের সমর্থনকারী বিরোধীদের সমালোচনা করেন তিনি।  

ঠাকুর ভারত সরকারের পদক প্রত্যাখ্যানকারী বিশিষ্টজনদের, ভীমা কোড়েগাওঁ মামলায় অভিযুক্ত গৌতম নওলাখা, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই), সহ নাগরিক সমাজের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে চীনের সাথে হাত মিলিয়ে “ভারত-বিরোধী চক্রান্তে সামিল হওয়ার” অভিযোগ করেন। যদিও নিউ ইয়র্ক টাইমসের “তদন্তে” গান্ধী, কংগ্রেস, নওলাখা বা সিপিআই এর বিন্দুমাত্র উল্লেখ নেই। 

সাংবাদিক সম্মেলনে ঠাকুর গান্ধীর চীনা যোগের প্রসঙ্গ টেনে বিদেশের মাটিতে “ভারত-বিরোধী” প্রচারের অভিযোগ আনেন। যদিও যে দেশ গুলোতে গান্ধী ভারত-বিরোধী ভাষণ দিয়েছে বলে অভিযোগ, তার প্রত্যেকটি চীন-বিরোধী শিবিরের পশ্চিমা দেশ।

বিজেপির স্যোশাল মিডিয়া শাখার প্রধান অমিত মালব্যের অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২২ সালে অক্টোবর মাসে সংবাদমাধ্যম দ্যা ওয়্যার-এর দফতরে দিল্লী পুলিশ তল্লাশি চালায়। ২০২২ সালে দৈনিক ভাস্করের অফিসে তল্লাশি চালায় আয়কর দফতর। ২০২১ সালে NewsClick দফতরে হানা দেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।

২০২০ সালের অক্টোবরে গ্রেটার কাশ্মীর-এর দফতরে হানা দেয় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২০১৭ সালে NDTV-র দফতরে হানা দেয় সিবিআই, ২০১৮ সালে দ্য কুইন্ট-র দফতরে হানা দেয় আয়কর দফতর। 

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার নিরিখে ২০২৩ সালে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৬১, আগের বছর ভারতের স্থান ছিলো ১৫০। বলাবাহুল্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের এই তথাকথিত তদন্ত রিপোর্ট ভারত সহ রিপোর্টে উল্লিখিত বিভিন্ন সংস্থার উপর সেই দেশের সরকারগুলো চাপ বৃদ্ধি করবে। গণতান্ত্রিক পরিসরকে অনেকটাই সঙ্কুচিত করবে।

লেখক

  • সৌম্য মন্ডল

    সৌম্য মন্ডল একজন আর্থ-সামাজিক এবং ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি ইস্ট পোস্ট বাংলায় মুখ্য সম্পাদক হিসাবে কর্মরত। মূলত উদীয়মান বহু-মেরুর বিশ্বের নানা ঘটনাবলীর তিনি বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করেন।

    View all posts

সৌম্য মন্ডল একজন আর্থ-সামাজিক এবং ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি ইস্ট পোস্ট বাংলায় মুখ্য সম্পাদক হিসাবে কর্মরত। মূলত উদীয়মান বহু-মেরুর বিশ্বের নানা ঘটনাবলীর তিনি বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করেন।

Leave a comment
scroll to top