Close

মায়ানমারে সামরিক জুন্টা, লাল চীন এবং গেরুয়া ভারত

১১ এপ্রিল, সকাল সকাল নিজের দেশের মানুষের উপর বিমান হামলা চালায় মায়ানমারের সামরিক জুন্টা সরকার। ১৩৩ জনের মৃত্যু ঘটেছে।

Vintage Map Myanmar,Bangladesh, Close-up macro image of South East Asia map . Selective focus on Bangladesh

মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, সকাল সকাল নিজের দেশের মানুষের উপর বিমান হামলা চালায় মায়ানমারের সামরিক জুন্টা সরকার। মায়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় সাগাইং অঞ্চলের কান্ত বালু পৌর শহরে এই বিমান হামলা চালানো হয়। দেশটিতে ক্ষমতাচ্যুত প্রশাসকদের জাতীয় ঐক্যের সরকারের মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী অং মাও মিন জানিয়েছেন যে এই হামলার ফলে ১৩৩ জনের মৃত্যু ঘটেছে।

জাতিপুঞ্জে মায়ানমারের কুটনৈতিক মিশন বিবৃতি জারি করে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে এবং নিহতদের সন্ত্রাসী বলে দাবি করেছে।


২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পরে এটাই সবচেয়ে বড় হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে ২০২২ সালে অক্টোবর মাসে উত্তর মায়ানমারের কাচিন রাজ্যে বিমান হামলায় ৮০ জনকে হত্যা করে মায়ানমারের সামরিক জুন্টা

২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী নতুন করে সামরিক অভ্যুত্থান হলেও ১৯৬২ সাল থেকে মায়ানমার মূলত সামরিক জুন্টারই নিয়ন্ত্রাধীন। ২০০৮ সালে সেনার রচিত সংবিধানের ভিত্তিতেই ২০১৫ সালের নির্বাচনে সুকি ক্ষমতায় আসেন। মায়ানমারের সংসদের দুই কক্ষে সেনার জন্য ২৫% আসন সংরক্ষিত।

ট্রাম্প প্রশাসন ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও, মায়ানমার নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন হয়নি কখনো। অন্যদিকে ট্রাম্পের আগে ওবামা প্রশাসন এশিয়ায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজের কৌশলগত আধিপত্য ধরে রাখতে মায়ানমারকে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে এসেছে।

অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাসিস্ট্যান্স অফ পলিটিক্যাল প্রিজনারস (AAPP) এর হিসেব অনুযায়ী সামরিক অভ্যুত্থানের পর হিংসার কারণে ৩,০০০ জন নাগরিক মারা গেছেন।

নতুন করে সেনা অভ্যুত্থানের পর গৃহযুদ্ধের মাত্রা তীব্র হলেও ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকেই মায়ানমারের বিভিন্ন জনজাতির সশস্ত্র দলের সাথে সরকারের গৃহযুদ্ধ চলেছে। সাড়ে পাঁচ কোটি জনসংখ্যার মায়ানমারে ১৩৫ জনজাতির মানুষ বসবাস করে। যাদের মধ্যে ভারতে বা চীনে বসবাসরত নাগা, মিজো বা চীনারাও আছেন। জনসংখ্যার ৬৮% বার্মিজ জনজাতির অংশ। সামরিক জুন্টা হোক বা আং সাং সুকির ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক লীগ, সংগঠন গুলো মূলত বার্মিজদেরই। শান্তিতে নোবেল জয়ী সুকি ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা, এবং সেই গণহত্যায় সুকির সোচ্চারে মায়ানমারের সেনার পাশে দাঁড়ানো দুনিয়াকে হতবাক করেছিলো। ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের পর পশ্চিমা সমর্থিত ন্যাশনাল ইউনিটি সরকার ও তাদের সশস্ত্র শাখা পিপলস ডিফেন্স ফোর্স এই গৃহযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। পশ্চিমাদের অভিযোগ চীন ভারত রাশিয়ার সহযোগীতা রয়েছে মায়ানমারের সামরিক জুন্টার পেছনে।


চীন এবং মায়ানমারের মাঝে ২,০০০ কিমি সীমান্ত আছে। অন্যদিকে ভারতের এবং মায়ানমারের ১,৬০০ কিমির মত সীমান্ত আছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সাথে মায়ানমারের ২৮০ কিমির সীমানা রয়েছে। বিদ্রোহীদের দমন করতে মায়ানমারের বোমাারু বিমান আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন করে প্রতিবেশী দেশে গুলোতে বোমাা ফেলে, এমন অভিযোগ উঠেছে বার বার।

২০২৩ সালের ১০ই জানুয়ারী তিয়াও নদী পেরিয়ে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের ফারাকওয়ান গ্রামে মায়ানমার সেনা বোমাা ফেলে যায় বলে অভিযোগ জানায় স্থানীয় গ্রামবাসীরা। গ্রাম কাউন্সিলের সভাপতি রাম, দুটি বোমা পড়ার কথা জানায়। কেউ হতাহত না হলেও, একটি পণ্যবাহী ট্রাক ধ্বংস হয় বলে জানা যায়। তিনটি ফাইটার জেট দুটি হেলিকপ্টার হামলা চালায় বলে জানায় গ্রামবাসীরা। যদিও ভারতের সীমানার মধ্যে কোনো বোমা পড়েনি বলে জনিয়েছিল আসাম রাইফেলস। অন্যদিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ভারত সরকার।

মানবাধিকার সংগঠন ফরটিফাই রাইটস ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ১২ই জানুয়ারী একটি বিবৃতি জারি করে মায়ানমারের জুন্টা সরকারকে ভারতের আকাশ সীমা ব্যবহার না করতে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথিউ স্মিথ বিবৃতিতে বলেন, নিজের আকাশসীমায় জুন্টার অনুপ্রবেশ সহ্য করা উচিত নয় নয়াদিল্লীর। বেসামরিক ও সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে নিজস্ব ক্ষমতায় সবকিছু করা উচিত।

২০১৫ সালের মার্চ মাসে মায়ানমারের যুদ্ধ বিমান চীনের সীমানার ভিতরে বোমা ফেলে, যার ফলে ৪ জন চীনা নাগরিকের মৃত্যু হয়।

১৫ই মার্চ ২০১৫ তে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, চীন সরকার মায়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। চীন জানায় এরকম কান্ড মায়ানমার সরকার বার বার করছে, যা তারা মেনে নেবে না। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেচিয়াং বলেন “চীন-মায়ানমার সীমান্তের স্থিতিশীলতাকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করার এবং আমাদের জনগণের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা দৃঢ়ভাবে রক্ষা করার দায়িত্ব ও ক্ষমতা আমাদের রয়েছে।”

চীনের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের উপপ্রধান ফান চ্যাঙলঙ অবিলম্বে এই বিষয়ে মায়ানমারকে ব্যবস্থা নিতে বলেন, চ্যাঙলঙ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন “অন্যথায়, চীনের সামরিক বাহিনী চীনের জনগণের জীবন, সম্পত্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষার জন্য দৃঢ় ব্যবস্থা নেবে।”

উলটো দিকে মায়ানমারের দাবি যে “চীনা ভাড়াটে সৈন্যরা” মায়ানমারের বিদ্রোহীদের সাথে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছিল। “সন্ত্রাসী হামলা”-র জন্য চীনের ভূখণ্ড ব্যবহার করা প্রতিরোধ করতে চীনকে সহযোগীতার আহ্বান জানায় মায়ানমার।

ঐ বছরই অর্থাৎ ২০১৫ সালে ভারতীয় সেনা বর্ডার পেরিয়ে মায়ানমারে ঢুকে ৩০ জন ন্যাশনাল স্যোশালিস্ট কাউন্সিল অফ নাগাল্যান্ডের বিদ্রোহীকে হত্যা করে আসে বলে দাবি করে। যদিও পরে নাগা বিদ্রোহীরা ভারতীয় সেনাকে চ্যালেঞ্জ জানায় অন্তত একজনের মৃতদেহ দেখাতে। নাগা বিদ্রোহীরা মোদী সরকারের এই প্রথম সার্জিক্যাল স্ট্রাইকটি ভুয়ো বলে দাবি করে। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে ভারতীয় সেনার মায়ানমারের সীমানা পেরিয়ে অপারেশন চালিয়ে আসা বর্তমানে অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিনত হয়েছে।

দীর্ঘ দিন ধরে ভারত অভিযোগ করে আসছে যে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের জনজাতির সশস্ত্র বিদ্রোহীরা মায়ানমারের জনজাতির বিদ্রোহীদের কাছ থেকে সাহায্য পায় এবং চীন মায়ানমারের বিদ্রোহীদের মাধ্যমে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহীদের সাহায্য করে থাকে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের কর্মকর্তারা বলেছেন যে একাধিক নিরাপত্তা সংস্থা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে সতর্ক করেছে যে ভারতের অন্তত চারজন মোস্ট ওয়ান্টেড নেতা দক্ষিণ চীনের কুনমিং শহরে সম্প্রতি অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সংগ্রহের জন্য ছিলেন।

বর্মার কমিউনিস্ট পার্টি যারা ২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর আবার সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেছে, তারা চীনের মদতপুষ্ট বলে অভিযোগ উঠেছে। ১৯৮৯ সালে বর্মার কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে বেরিয়ে আসা মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স আর্মি (MNDAA), যারা ২০০৯ সাল থেকে মায়ানমার সরকারের সাথে সশস্ত্র সংঘর্ষে যুক্ত তারাও চীনের মদতপুষ্ট বলে অভিযোগ উঠেছে বারবার। প্রসঙ্গত ১৯৮৯ সালে বার্মা নাম পরিবর্তন করে মায়ানমার করে দেয় দেশটির সেনা প্রশাসন। যুক্তি ছিলো শুধু বার্মিজ দের দেশ নয় বাকি জনজাতি গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এই নাম পরিবর্তন। ঐ বছর বার্মিজ কমিউনিস্ট পার্টির অন্যান্য জনজাতির সদস্যরা বিদ্রোহ করে MNDAA গঠন করে সেনা প্রশাসনের সাথে শান্তি চুক্তিতে বসে, যা ২০০৯ অব্দি স্থায়ী হয়। অন্য দিকে বার্মিজ কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের একটা বড় অংশকে চীনে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হতে হয়। ২০১৮-১৯ সাল থেকেই বার্মিজ কমিউনিস্টরা লেফটিস্ট ইউথ অরগানাইজেশান(YLO) নামে “মাও-সেতুং চিন্তাধারার প্রচার শুরু করে বলে জানা যায়। ২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের সাথেই বার্মিজ কমিউনিস্ট পার্টি সেনাশাসন বিরোধী জনযুদ্ধ শুরুর ঘোষণা দেয়। বার্মিজ কমিউনিস্ট পার্টি এবং পার্টি ভেঙে বেরিয়ে আসা অংশ উভয়ের সাথেই চীন যোগাযোগ রাখে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।”

২০১৯ সালে মায়ানমারের সেনা বিদ্রোহী তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি কাছ থেকে দামি বিমান বিধ্বংসী মিসাইল সহ ব্যাপক পরিমানে চীনা অস্ত্র উদ্ধার করে। আরাকান আর্মি এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিকেও চীনারা অস্ত্র সাহায্য করে বলে অভিযোগ করে মায়ানমারের সেনা আধিকারিকরা। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে চীন সরকার। চীনের দাবি তারা শুধুমাত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রকেই অস্ত্র দিয়ে থাকে, কখনোই কোনো অরাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অস্ত্র সরবারাহ করেনা।

জাস্টিস ফর মায়ানমার নামে একটি সংগঠন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে অভিযোগ করে যে চীনারা মায়ানমারের সামরিক জুন্টা সরকারকে অস্ত্র বিক্রি করে এবং এই সামরিক অভ্যুত্থানকে সমর্থন করে।

যদিও চীনের দাবি মায়ানমারকে অস্ত্র বিক্রি বা সামরিক সহযোগিতার অর্থ এই নয় যে তারা সামরিক অভ্যুত্থানকে বা জুন্টার আভ্যন্তরীণ নীতিকে সমর্থন করে। চীনাদের দাবি চীন ছাড়াও রাশিয়া, ভারত, ইউক্রেন, ইজরায়েলের সাথে মায়ানমারের জুন্টা সরকারের সামরিক সহযোগীতা এবং অস্ত্র কেনা বেচার সম্পর্ক আছে।

গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, চীনের রাষ্ট্রদূত চেন হাই বলেছেন যে “ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি এবং তাতমাদউ (মায়ানমার সেনা) উভয়ই চীনের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে। চীন যেমন পরিস্থিতি দেখতে চায়, বর্তমানে মায়ানমারের পরিস্থিতি একদমই সেরকম নয়।।”

চীনের দাবি, বাইরের হস্তক্ষেপ নয়, ঘরোয়া আলোচনার মাধ্যমে তারা একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ মায়ানমারের প্রত্যাশা করে।

চীন সরকারিভাবে ঘোষণা করে জুন্টা বিরোধী আন্দোলনের দাবি যুক্তিযুক্ত। মায়ানমারে চীনা দূতাবাসের বাইরে “নাগরিক অসহযোগ আন্দোলন” এর পক্ষ থেকে বিক্ষোভ দেখানো হলে, তার প্রতিক্রিয়ায় চীনা রাষ্ট্রদূত চেন হাই বলেন “আমরা তাদের আকাঙ্ক্ষা বুঝি। এবং আমরা তাদের যুক্তিসঙ্গত দাবিও শুনেছি। মায়ানমারের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে কথাবার্তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিপুঞ্জের মাধ্যমে মায়ানমারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে চীন রাশিয়ার ভেটো দিয়ে তা আটকে দেয়। পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা মায়ানমারের জুন্টা সরকারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এ বিষয়ে চীনের যুক্তি হল এই যে নিষেধাজ্ঞা আসলে শাসকের যা ক্ষতি করে, তার থেকে বেশী সাধারণ মানুষের জীবনকে দূর্বিষহ করে দেয়, তাদের দারিদ্রের দিকে ঠেলে দেয়। কোনো দেশকে একঘরে করে দেওয়া হলে সেই দেশ আরো বেশী রক্ষণশীল হয়ে যায়, দেশ আমলাতন্ত্রের দিকে ঝুকে যেতে পারে।

চীনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন “নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক গৃহীত যেকোনো পদক্ষেপ এমন হতে হবে যাতে মায়ানমারের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতায় অবদান রাখা যায়, মায়ানমারকে শান্তি ও পুনর্মিলন উপলব্ধি করতে সাহায্য করা যায় এবং দ্বন্দ্বের তীব্রতা এবং পরিস্থিতিকে আরও জটিল করা রদ করা সম্ভব হয়।”

চীনের দাবি মায়ানমারের জনগণের উপনিবেশবাদ বিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস আছে ফলত, তারা কখনোই তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করবে না। চীন প্রতিবেশী মায়ানমারের সাথে পঞ্চশীল নীতির ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।

অন্যদিকে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে মায়ানমারের সরকারে যেই থাকুক তার সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখা জরুরী ভারত সরকারের। ভারত সরকারের লুক-ইস্ট নীতির বাস্তবায়নের জন্যেও পূর্ব এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রবেশের স্বার্থে মায়ানমারকে প্রয়োজন।

মায়ানমারের প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত গৌতম মুখোপাধ্যায়ের মতে, ঐতিহাসিক ভাবে মায়ানমারের জনসংখ্যাতত্ব এবং সামরিক দিকে দিয়ে চীনের চাপ। মায়ানমারের সেনার কাছে চীনকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকার যথেষ্ট কারণ আছে।

মায়ানমারের সেনা প্রশাসনের চীনকে নিয়ে এই উদ্বেগকে কাজে লাগিয়ে ভারত মায়ানমারকে নিজের কাছে টানতে চাইবে, সেটাই স্বাভাবিক। ভারত কখনোই চাইবে না মায়ানমারের প্রশাসন সম্পুর্ণ ভাবে চীনের পক্ষে চলে যাক।

ভারত মায়ানমার কালাদান প্রকল্পটি ২০১৪ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তা ২০২৩ সালেও শেষ হবে কিনা নিশ্চিত নয়। এই প্রকল্পটি কলকাতা বন্দর থেকে মায়ানমারের রাখাইননের সিত্তে বন্দর, সেখান থেকে কালাদান নদী পথে মায়ানমারে চীন প্রদেশের পালেতোয়াকে যুক্ত করে, সেখান থেকে সড়ক পথে মিজোরাম। যা সড়কপথে শিলিগুড়ির মাধ্যমে উত্তর পূর্বাঞ্চলের পৌছানোর তুলনায় এক সহজ, সস্তা বিকল্প হতে পারে।

অন্যদিকে, ভারতের এই প্রকল্প রুপায়ণে দেরি হওয়া এবং উল্টো দিকে চীন-মায়ানমার ইকোনমিক করিডোর প্রকল্পের দ্রুত রূপায়ণ স্বাভাবিক ভাবেই মায়ানমারের সাথে সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে। এই প্রকল্প চীনকে তার বহু কাঙ্ক্ষিত বঙ্গোপসাগরে পৌছে দেবে। তবে এতদিনের দেখে আসা মার্কিনীদের নিষেধাজ্ঞারাজের বদলে নতুন পরিস্থিতিতে ভারত চীনের বানিজ্য বিস্তারের নীতি নতুন কোনো ভালো ফলাফল দিতে পারে কিনা সেটা বুঝতে আরো কিছুটা সময় লাগবে।

সৌম্য মন্ডল একজন আর্থ-সামাজিক এবং ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি ইস্ট পোস্ট বাংলায় মুখ্য সম্পাদক হিসাবে কর্মরত। মূলত উদীয়মান বহু-মেরুর বিশ্বের নানা ঘটনাবলীর তিনি বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করেন।

Leave a comment
scroll to top