জারি করার কয়েকদিনের মধ্যেই গৌতম আদানির-মালিকানাধীন আদানি গোষ্ঠী গত ১লা ফেব্রুয়ারি নিজেদের ২০,০০০ কোটি টাকার ফলো-আপ অফার (এফপিও/FPO) প্রত্যাহার করে। গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম জানিয়েছেন যে তাঁর সংস্থা এই এফপিও-তে লগ্নিকারীদের অর্থ ফেরৎ দেবে। আদানির এফপিও প্রত্যাহার করার ঘটনা গোটা শেয়ার বাজারে আলোড়ন তোলে কারণ হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ সংস্থার রিপোর্টে ব্যাপক হারে শেয়ার বাজারে কারচুপি করে নিজের সংস্থার শেয়ারের দর কৃত্রিম ভাবে বাড়ানোর দায়ে অভিযুক্ত গোষ্ঠীটির সমস্ত কোম্পানির শেয়ারের দর ২৫শে জানুয়ারি থেকে তীব্র গতিতে ভূপতিত হলেও, এই এফপিও কিন্তু সফল ভাবে বিক্রি হয়।
কিন্তু হঠাৎ সফল ভাবে বিক্রি করার পরও কেন আদানি কে হঠাৎ এফপিও প্রত্যাহার করতে হল? নিজেদের বিবৃতিতে আদানি গোষ্ঠী জানিয়েছে যে বাজারের অস্থিরতার ফলে যাতে শেয়ার হোল্ডারদের কোনো সমস্যায় না পড়তে হয় তাই তারা এই এফপিও তারা প্রত্যাহার করছে ও সমস্ত লগ্নিকারীর অর্থ ফেরৎ দেওয়ার বন্দোবস্ত করছে।
“অভূতপূর্ব পরিস্থিতি এবং বর্তমান বাজারের অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানির লক্ষ্য হল এফপিও-র আয় ফেরৎ দিয়ে ও সম্পূর্ণ লেনদেন বন্ধ করে তার লগ্নিকারী সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষা করা”, আদানি গোষ্ঠী ২রা ফেব্রুয়ারি একটি বিবৃতিতে জানায়।
আদানি গোষ্ঠীর মূল কোম্পানি আদানি এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেড (এইএল) এর এই এফপিও-র মূল্য ছিল ২০,০০০ কোটি টাকা যা ভারতের এযাবৎকালের বাজারে সর্ববৃহৎ অঙ্ক। বলা হচ্ছে বাজারে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার দরে ব্যাপক পতন হওয়া সত্ত্বেও এই এফপিও সম্পূর্ণ রূপে বিক্রি করা সম্ভব হয় কারণ এতে বৃহৎ শিল্পপতিরা, উচ্চ-সম্পদশালী ব্যক্তিরা গৌতমের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে লগ্নি করে।
খুচরো লগ্নিকারীদের মধ্যে মাত্র ১২% এই এফপিওতে লগ্নি করে, অপ্রতিষ্ঠানিক লগ্নিকারীরা ৩.৩২ গুণ অতিরিক্ত ক্রয় করে, আর যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানিক লগ্নিকারীরা ১২৬% অতিরিক্ত ক্রয় করে। খুচরো লগ্নিকারীদের প্রতি শেয়ারে ৬৪ টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছিল এবং এই এফপিও কেনার জন্যে ৫০% অগ্রিম ও বাকি অঙ্ক কিস্তিতে দেওয়ার সুযোগের কথা আদানি গোষ্ঠী জানায়।
আদানির এফপিও প্রত্যাহার সংক্রান্ত ঘোষণা
প্রায় ৬০ বছর বয়সী গৌতম সরাসরি আদানি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সঙ্কট মোকাবিলা করার কাজ করেন না; সেই কাজে এ যাবৎকাল অবধি গোষ্ঠীর অন্যান্য কতৃপক্ষ কে এগিয়ে দেওয়া হত। কিন্তু কিছুদিন আগেই ইজরায়েল আর মিশরের সাথে বন্দর গড়ার চুক্তি করে উৎফুল থাকা গৌতম কে কয়েক দিনের মধ্যেই উদ্বেগ ভরা চাউনি নিয়ে একটি ভিডিও বার্তায় তাঁর গোষ্ঠীকে রক্ষা করার কাজে এগিয়ে আসতে হয়।
আদানির এফপিও প্রত্যাহার নিয়ে ভিডিও বার্তায় গৌতম বারবার তাঁর গোষ্ঠীর আর্থিক ও ব্যবসায়িক হাল যে ভাল ও সুদৃঢ় অবস্থায় রয়েছে তার উপর জোর দিতে হয়েছে। আর সাথে সাথে তিনি লগ্নিকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে যে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ সে কথাও ঘোষণা করতে হয়েছে।
তাঁর ভিডিওতে গৌতম ঘোষণা করেন, “গতকাল বাজারের অস্থিরতা বিবেচনা করে, আমাদের বোর্ড দৃঢ়ভাবে মনে করে যে এফপিও নিয়ে এগিয়ে যাওয়া নৈতিকভাবে সঠিক হবে না।”
তিনি আরও বলেন যে তাঁর মতে আদানি গোষ্ঠীর সাফল্যের পিছনে রয়েছে লগ্নিকারীদের “আস্থা ও বিশ্বাস”।
গৌতম বলেন , “আমি আমার সমস্ত সাফল্যের জন্যে তাদের (লগ্নিকারীদের) কাছে ঋণী। আমার জন্য, আমার লগ্নিকারীদের স্বার্থ সর্বোচ্চ, এবং বাকি সব কিছুই গৌণ। তাই, সম্ভাব্য লোকসান থেকে লগ্নিকারীদের রক্ষা করতে আমরা এফপিও প্রত্যাহার করেছি।”
আদানির এফপিও প্রত্যাহার সংক্রান্ত ঘোষণা যে তাদের গোষ্ঠীর ব্যবসায় কোনো প্রভাব ফেলবে না সে কথা লগ্নিকারীদের মনে ভরসা জোগাতে জোর দিয়ে গৌতম বলেন, “এই সিদ্ধান্ত (এফপিও প্রত্যাহারের) আমাদের বিদ্যমান ক্রিয়াকলাপগুলির পাশাপাশি আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনাগুলিতে কোনও প্রভাব ফেলবে না৷”
তিনি জানান, “আমরা প্রকল্পগুলির সময়মত বাস্তবায়ন এবং বিতরণের উপর নজর দিয়ে যাব। আমাদের কোম্পানির মৌলিক বিষয়গুলো খুবই শক্তিশালী, আমাদের ব্যালেন্স শীট স্বাস্থ্যকর, এবং সম্পদ শক্তিশালী।”
যেহেতু হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের তদন্ত রিপোর্টে দেখানো হয়েছে যে আদানি গোষ্ঠীর কোম্পানিগুলোর অতি মাত্রায় মূল্যায়নের ফলে তাদের ডাউনসাইড ৮৫%, তাই এই গোষ্ঠী কে দেওয়া ঋণ নিয়ে বিদেশী ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থাগুলো প্রচণ্ড চিন্তিত হয়, কারণ আদানি গোষ্ঠী বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিজের উচ্চ দামের শেয়ার বন্দক রেখে ঋণ নেয়, যে শেয়ারের মূল্য কৃত্রিম ভাবে এই গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত বেনামি লগ্নিকারী সংস্থাগুলো বাড়ায় বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঋণদাতাদের আশ্বস্ত করতে তাই গৌতম বলেছেন, “আমাদের ঋণের দায়বদ্ধতা পূরণের একটি অনবদ্য ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে।”
এ ছাড়াও, গৌতম জানান যে বাজার স্থিতিশীল হলে তাঁর গোষ্ঠী নতুন ভাবে নিজেদের পুঁজির বাজারের রণনীতি স্থির করবে।
গৌতম বলেন, “একবার বাজার স্থিতিশীল হলে, আমরা আমাদের পুঁজিবাজার কৌশল পর্যালোচনা করব… আমাদের প্রতিটি ব্যবসা মূল্য সৃষ্টি করতে থাকবে।”
আদানির এফপিও প্রত্যাহার কেন?
মোটামুটি হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের তদন্ত রিপোর্ট পেশ করার পর থেকে আদানি গোষ্ঠীর সব কোম্পানিরই শেয়ার দর দ্রুতগতিতে পড়ে যায়। দেশের সব চেয়ে বড় বাজার জাতীয় স্টক এক্সচেঞ্জে (এনএসই) যেখানে ২১শে ডিসেম্বর ২০২২-এ এইএল-এর শেয়ার দর ছিল ৪,১৯০ টাকা করে, ৩রা ফেব্রুয়ারি ২০২৩-এ সেই শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য হয় ১,০১৭.৪৫। বর্তমানে (৩রা ফেব্রুয়ারি ২০২৩) এইএল-এর শেয়ারের দর হল ১,৫৩১ টাকা।
যদিও ৩রা ফেব্রুয়ারি আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার দর কিছুটা স্থিতিশীল হয়, এবং নিফটি ৫০ এ আন্তঃদিন বাণিজ্যে ১.৩৮% ও বোম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জের (বিএসই) সেনসেক্সে ১.৫২% বৃদ্ধি পায়, তবুও এই গোষ্ঠীর সকল শেয়ারের দরে চূড়ান্ত হারে পতন হয়েছে।
নিচের গ্রাফে এইল কোম্পানির জানুয়ারি থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত শেয়ার দরের উত্থান ও পতন দেখানো হয়েছে
নিচের গ্রাফে এইল সংস্থার শেয়ার দরের উত্থান ও পতনের শতাংশ হার দেখানো হয়েছে
যেহেতু আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের তদন্ত রিপোর্ট বিরূপ প্রভাব ফেলে শেয়ার বাজারে ও খুচরা লগ্নিকারীরা এই সংস্থার শেয়ার কেনার থেকে বিক্রি করতে বেশি উৎসাহী হয়, তাই নানা ভাবে নিজেদের এফপিও কে পতনশীল বাজারেও বিক্রি করানো গৌতমের কাছেই একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে উঠে আসে।
যদি আদানি গোষ্ঠী নিজের এফপিও বিক্রি করতে অক্ষম হত, তাহলে এর পরে বাজারে সংস্থার শেয়ারের দর আরও দ্রুত পড়ে যেত। তাই অন্যান্য উচ্চ-সম্পদশালী ব্যক্তিদের, নানা ধরণের বৃহৎ শিল্পপতিদের নিজের প্রচেষ্টায় এফপিও বেচায় আদানির মান বেঁচেছিল, কিন্তু সেই এফপিও-তে অবশ্যই কোনো লগ্নিকারী বেশিদিন ভরসা রাখতে পারবে না বলেই বাজারের ধারণা ছিল।
এর পরে যদি এই বৃহৎ লগ্নিকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হত, তাহলে আদানি গোষ্ঠীর উপর রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক চাপও বৃদ্ধি পেত। ফলে যে করেই হোক গৌতম কে তাঁর গোষ্ঠীতে লগ্নি করা সব অর্থ সুরক্ষিত ভাবে ফেরত দিতে হয় আর তার কারণ হিসাবে লগ্নিকারীদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলতে হয়।
আদানির এফপিও প্রত্যাহার কী সংস্থা কে দীর্ঘকালীন সুরক্ষা কবচ প্রদান করবে?
হয়তো গৌতম ও তাঁর বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের তদন্তের ফলে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে তা সাময়িক এবং ভারতের ইউনিয়ন সরকারে ক্ষমতাশীল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে কথিত ‘ঘনিষ্ঠতা’ থাকার কারণে এই সংস্থার বিরুদ্ধে কারচুপির কোনো তদন্ত হবে না। কিন্তু বিজেপি বা মোদীর সাথে তাঁর যাই সম্পর্ক থাক না কেন, বাজারের লেনদেন হয় লগ্নিকারীদের মর্জির উপর নির্ভর করে।
লগ্নিকারীরা এর আগেও দেখেছেন যে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের তদন্ত রিপোর্টগুলো তথ্য-ভিত্তিক ও তার ফলে বড় বড় অনেক সংস্থার অবস্থা শেয়ার বাজারে খারাপ হয়েছে। ফলে গৌতমের মৌখিক আশ্বাস ও তাঁর সংস্থার জাতীয়তাবাদের মোড়কে নিজেকে অভিযোগের থেকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা লগ্নিকারীদের, বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানিক লগ্নিকারীদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এর মধ্যে, যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ভাই জো জনসনকে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে লগ্নিকারী ভুয়া সংস্থা হিসাবে চিহ্নিত ইলারা ক্যাপিটালের শীর্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছে। ভারত সফরে এসে যে ভাবে তৎকালীন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী আদানি গোষ্ঠীর কারখানায় যান ও ব্যবসা করতে উৎসাহ দেখান, তার পিছনে কী কারণ ছিল সেই নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমগুলো নানা প্রশ্ন তুলেছে।
আদানির গোষ্ঠীর কিছু কোম্পানি কে ——এইএল, আদানি পোর্টস ও অম্বুজা সিমেন্ট——এনএসই অতিরিক্ত নজরে রেখেছে। অন্যদিকে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের তদন্ত রিপোর্ট, তার ফলে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার দরে ব্যাপক পতন ও জারি করার কয়েক দিনের মধ্যেই আদানির এফপিও প্রত্যাহার দেখে বিচলিত হয়ে এস অ্যান্ড পি ডৌ জোন্স ইনডাইসেস থেকে এইল কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এস অ্যান্ড পি ডৌ জোন্স জানিয়েছে, “শেয়ার কারচুপি ও হিসাবের প্রতারণার অভিযোগের ফলে চালানো মিডিয়া অ্যান্ড স্টেকহোল্ডার অ্যানালাইসিস-এর কারণে আদানি এন্টারপ্রাইজেস (এক্সবোম: ৫১২৫৯৯) কে ডৌ জোন্স স্থায়িত্ব সূচক থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।”
যেহেতু বারবার দাবি করা হচ্ছে যে বিজেপির নেতৃত্বাধীন ইউনিয়ন সরকার স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) ও জীবন বীমা কর্পোরেশন (এলআইসি) প্রভৃতি বৃহৎ সরকারি সংস্থান কে নাকি জোর করে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে লগ্নি করতে বলে, তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই এই সংস্থাগুলোর কতৃপক্ষও দাবি করেছে যে তাদের আদানি গোষ্ঠীতে লগ্নির ঝুঁকি বেশি নেই।
তবে আদানি গোষ্ঠীর কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগের ঋণ বনাম ইক্যুইটি অনুপাত প্রচুর বেশি, যার ফলে পাওনাদারদের চাপে পড়লে এই সব কোম্পানির দেউলিয়া হতে বেশি দেরি হবে না। নিচের গ্রাফে দেখানো হয়েছে কী ভাবে আদানি গোষ্ঠীর নানা সংস্থার ঋণ তার ইক্যুইটির তুলনায় বেশি।
আদানির এফপিও প্রত্যাহার কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে?
আদানির এফপিও প্রত্যাহার করার ঘটনার পিছনে গোষ্ঠীটির রক্ষণশীল রণকৌশল নেওয়ার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। যদিও এই ২০,০০০ কোটি টাকার এফপিও প্রত্যাহার করা নিয়ে গৌতম লগ্নিকারীদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলেছেন, এটাও ঘটনা যে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের তদন্ত রিপোর্টে দেখানো হয়েছে যে এই গোষ্ঠীর বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারই তাদের নিজস্ব বেনামি সংস্থা কিনে কৃত্রিম ভাবে দর বাড়িয়েছে।
ফলে, যদি এফপিও-র কারণে এইএল-এ লগ্নি করা বৃহৎ শিল্পপতি ও উচ্চ-সম্পদশালী ব্যক্তিদের আর্থিক ক্ষতি হত, তাহলে এই গোষ্ঠীর সকল শেয়ারের মালিকানা নিয়ে তদন্তের দাবি বৃহৎ কর্পোরেট সংস্থাগুলোর তরফ থেকেও উঠতো। যদিও স্টক এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি) এখনো সরকারি ভাবে আদানির বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত শুরু করেনি, কিন্তু বৃহৎ কর্পোরেটদের থেকে অভিযোগ উঠলে চাপে পড়ে সেটা করতে হত, আর তার ফলে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের তদন্তের অভিযোগ ——যে আদানি গোষ্ঠীর বেশির ভাগ তালিকাভুক্ত কোম্পানিই নিজের বাজারে ছাড়া ২৫% শেয়ারের মালিকানা প্রোমোটারদের বাইরে কাউকে দেয়নি——যদি প্রমাণিত হয় সেক্ষেত্রে অন্তত চারটি আদানি গোষ্ঠীর কোম্পানির শেয়ার বাজারের তালিকার থেকে নাম কাটা যেত ও আরও বড় একটা কেলেঙ্কারিতে গোষ্ঠীটিকে ও ইউনিয়ন সরকারকে ফাঁসতে হত।
ফলে আদানির এফপিও প্রত্যাহার একটি কৌশল হিসাবেই আত্মপ্রকাশ করেছে যার মধ্যে দিয়ে একদিকে গোষ্ঠীটি নিজের কাছের বৃহৎ শিল্পপতি ও উচ্চ-সম্পদশালী ব্যক্তিদের লগ্নি কে সুরক্ষিত ভাবে ফেরৎ দিয়ে সমঝোতার রাস্তা খোলা রাখলো, অন্যদিকে নিজেকে সেবি বা অন্য কোনো সংস্থার তদন্তের চাপ থেকেও মুক্ত রাখলো।
এখন দেখার বিষয় হল হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে যে ভাবে গোটা বিশ্বে আদানি গোষ্ঠী ধাক্কা খেয়ে চলেছে, তা সোমবার, ৬ই ফেব্রুয়ারি, বাজার খোলার পরেও বহাল থাকবে কি না। যদি আদানির এফপিও প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত বাজারে সংস্থার প্রতি ন্যূনতম ভরসা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়, তাহলে আদানি গোষ্ঠী নিজের কোম্পানির শেয়ারের দর কে আরও হ্রাস পাওয়ার থেকে বাঁচাতে পারবে আর সেটা না হলে বাজারের অস্থিরতা যেমন বাড়বে তেমনি এই গোষ্ঠীতে লগ্নি করা অর্থ ডুবলে অনেক বৃহৎ সরকারি সংস্থাও চরম বিপদে পড়বে।