Close

প্রথমবার সিএএ-এর অধীনে প্রায় ৩৫০ জনেরও বেশি শরণার্থী ভারতীয় নাগরিকত্ব পেলেন।

কেন্দ্রীয় সরকার বুধবার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ২০১৯ এর অধীনে আবেদনকারী প্রায় ৩৫০ জনেরও বেশি শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্বের শংসাপত্র দিয়েছে

ছবি প্রতিকী, সৌজন্যে pixabay

কেন্দ্রীয় সরকার বুধবার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ২০১৯ এর অধীনে আবেদনকারী প্রায় ৩৫০ জনেরও বেশি শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্বের শংসাপত্র দিয়েছে, অন্তত এমনটাই জানালেন একজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় কুমার ভাল্লা বুধবার দিল্লিতে ১৪ জনকে সশরীরে উপস্থিত থেকে নাগরিকত্বের শংসাপত্র হস্তান্তর করেছেন এবং বাকিদের ডিজিটালি স্বাক্ষরিত শংসাপত্র ইমেলের মাধ্যমে পৌছে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আবেদনকারীরদের মূল দেশ সম্পর্কে সরকার কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি, তবে ধরে নেওয়া হচ্ছে বেশিরভাগ আবেদনকারী পাকিস্তানি হিন্দু।

সিএএ কী ?

২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর ভারতের সংসদে পাস হওয়া একটি আইন। এটি ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের মাধ্যমে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আগত ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরকিত্ব পাওয়ার সুযোগ প্রদান করে। তবে তাদের ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ভারতে প্রবেশ করতে হবে। উল্লেখিত তিনটি দেশে মুসলিম সংখ্যালঘু না হওয়ার, তাদের জন্য এই বিলের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি।

এই আইনের মাধ্যমে প্রথমবারের মত ধর্মীয় পরিচয়কে নাগরিকত্ব লাভের শর্ত হিসাবে যুক্ত করা হয়। সমালোচক এবং মুসলিম গোষ্ঠী সিএএ-র বিরুদ্ধে এখনও প্রতিবাদ করে চলেছে। তাদের দাবি ধর্মিয় পরিচয় কখনো নাগরিকত্বের নির্ধারক হতে পারে না। তবে ভারতীয় নাগরিকরা সিএএ দ্বারা প্রভাবিত হবে না।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ (সিএএ) এর অধীনে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারীদের নিন্মে উল্লেখিত নথি গুলির মধ্যে কমপক্ষে একটির প্রয়োজন। বৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট, আইডি কার্ড এবং জমি ভাড়ার রেকর্ড সহ এমন কোন নথি যা প্রমাণ করে যে তিনি আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের নাগরিক। এছাড়াও আবেদনকারী ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে এসেছেন ,এই মর্মে হলফনামা দিতে হবে।

আবেদনকারীর ভারতে আগমনের সময় ভিসার কপি এবং ইমিগ্রেশন স্ট্যাম্পের মতো ২০টি নথির মধ্যে যে কোনও একটি জমা দিতে পারেন, তাছাড়া গ্রামীণ বা শহুরে সংস্থার নির্বাচিত সদস্য বা রাজস্ব অফিসার দ্বারা প্রদত্ত শংসাপত্র , যা প্রমান করে যে তিনি ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বা তার আগে ভারতে প্রবেশ করেছেন।

যেহেতু পশ্চিমবঙ্গের কোটি কোটি বাঙালি হিন্দু শরণার্থীরা বেশিরভাগি কোনও নথি ছাড়াই কোনোপ্রকার নিজের প্রান বাঁচিয়ে, এক কাপড়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে এসেছে। তাই তারা CAA-এর অধীনে আবেদন করতে অক্ষম। ফলে এই আইনের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ বাঙালি উদ্বাস্তুরা কোনো রকমের সুযোগ সুবিধা পাবে না বলে মনে করছেন উদ্বাস্তুদের একাংশ। প্রসঙ্গত ২০১৬ সালে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায় যে, এই আইন আনা হয়েছে মাত্র ৩১,৩১৩ জন নথিভুক্ত শরণার্থীর জন্য।

এই বিষয়ে এক সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত সাহাকে প্রশ্ন করায় তিনি বলেছিলেন সরকার এই বিষয়ে ভাবছে, পরবর্তীকালে এটি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু সিএএ কার্যকারি হওয়ার এত দিন গড়িয়ে যাওয়ার পরও আধিকারিক ভাবে সরকার এই বিষয়ে কিছু জানায়নি। তাই বর্তমানে কোটি কোটি অসহায় বাঙালি উদ্বাস্তুদের কাছে সিএএ এক নির্বাচনী জুমলা ছাড়া কিছু নয়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র যিনি ভূ-রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে আগ্রহী। তাঁর লেখার মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক ঘটনাগুলিকে ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন।

Leave a comment
scroll to top