Close

মাথায় হাত! রাজ্যে পঞ্চায়েতের নিয়োগে নাগরিকত্ব কাঁটা!

রাজ্যে পঞ্চায়েতের নিয়োগে নাগরিকত্ব কাঁটা! বিজ্ঞপ্তিতে সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগ অনুযায়ী নাগরিক হওয়ার কথা বলা হয়েছে। যা আশঙ্কা জাগিয়েছে চাকরি প্রার্থীদের একাংশের মধ্যে।

রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরে নিয়োগের নোটিশ দেখে চক্ষু চড়কগাছ আবেদনকারীদের একাংশের। নদীয়ার কল্যাণীর বাসিন্দা বছর ২৩ এর হারাধন বিশ্বাস(নাম পরিবর্তিত) পঞ্চায়েত দফতরের ওয়েবসাইটে যোগ্যতার প্রথম শর্তটি দেখে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বিশ্বাসের জন্ম ভারতে হলেও, প্রামাণ্য নথিপত্রের অভাবে, তাঁর পক্ষে পূর্বপুরুষের নাগরিকত্বের প্রমাণ দেওয়া সমস্যার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বাসের অভিযোগ, “এই নিয়মে তো নমশূদ্র উদ্বাস্তু বাড়ির প্রার্থীরা কেউই চাকরি পাবে না।”

গত ২৭শে ফেব্রুয়ারী ১৮টি পদে ৬,৬৫২ জনকে নিয়োগের নোটিশ দেয় রাজ্য সরকার। কিন্তু সরকারি পোর্টালের পদের সাথে দেওয়া ডাউনলোড অপশনে গেলে দেখা যাচ্ছে, সেখানে শুরুতেই লেখা আছে সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগ অনুযায়ী নাগরিক হতে হবে। 

পঞ্চায়েতের পোর্টালে যা বলা হয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন হল ভারতে সরকারি চাকরি করতে গেলে তাকে অবশ্যই দেশের নাগরিক হতে হবে, এটা তো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে কেন আপত্তি?

জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি ফর বেঙ্গলি রিফিউজিসের সাধারণ সম্পাদক সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাসের ব্যাখ্যা, আগে শুধু মাত্র নাগরিক হওয়ার কথা বলা থাকতো। কিন্তু এইভাবে নির্দিষ্ট করে সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগ অনুযায়ী নাগরিক হওয়ার কথা লেখা থাকতো না। এর অর্থ এখন আর ভোটার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে গ্রাহ্য হবে না। প্রার্থীর জন্ম কোথায়, তার বাবা মায়ের জন্ম কোথায়, ইত্যাদির উপর নাগরিকত্ব নির্ভর করবে। 

দামাল বাংলার আহ্বায়ক মানিক মন্ডলের (ফকির) দাবি, নাগরিকত্ব কেন্দ্রের বিষয়। রাজ্যের হাতে এই বিষয়ে ক্ষমতা নেই। “আমি বার বার বলেছি এনআরসি প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। রাজ্য সরকার এসবের বিরোধিতা করলেও, আমলারা অতসব বোঝেনা, তারা কেন্দ্রের আইন অনুযায়ী কাজ করছে। তাই ওরকম বিজ্ঞপ্তি এসেছে।”

একই মত নিখিল ভারত বাঙালি উদ্বাস্তু সমিতির সভাপতি আশীষ ঠাকুরের। ঠাকুর বলেন, এনআরসি ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আগে ভোটার কার্ড থাকলেই সে গ্রাহ্য হত। এখন নিজের জন্ম সার্টিফিকেট এর সাথে বাবা-মায়েরটাও চাইবে। বাবা-মায়ের জন্ম সার্টিফিকেট বা নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট না থাকলে সংবিধানের ৬বি অনুযায়ী তার পূর্বপুরুষের সংবিধান গ্রহণের আগে ভারতে বসবাসের প্রমাণ দিতে হবে।”

ঠাকুর আরো বলেন, “বাঙালি উদ্বাস্তুরা দেশের ২২টা জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের মেধার জোরে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এই ধরনের সরকারী পদক্ষেপ তাদের সমস্যায় ফেলার জন্য করা হয়েছে। এর ফলে কাগজপত্রের অভাবে বাঙালি-অবাঙালি নির্বিশেষে দলিতরা সমস্যায় পড়বে।”

পঞ্চায়েত এবং গ্রাম উন্নয়ন দফতরের সচিব বিশ্বজিৎ দত্তকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।

প্রসঙ্গত ১৯৮৬ এবং ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনীর ফলে ভারতের জন্মসূত্রে নাগরিকত্বকে শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কারো নাগরিকত্বের জন্য নিজের জন্মের সার্টিফিকেটের সাথে, পূর্বপুরুষের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্যে প্রয়োজন। বাবা-মায়ের জন্ম সার্টিফিকেট বা সংবিধান গ্রহণের আগে পুর্বপুরুষের ভারতে বসবাসের প্রমাণ চাওয়া হতে পারে।”

এত দিন নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে ভোটার কার্ডকেই গ্রাহ্য করা হত। এইবার কি সেই নিয়ম বদলাতে চলেছে ২০০৩ বা ১৯৮৭ সালের সংশোধনী অনুযায়ী? এই প্রশ্নই দুশ্চিন্তায় ফেলেছে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে আগত উদ্বাস্তু পরিবারের সন্তানদের।

প্রসঙ্গত ২০১৬ সালে বাবুল ইসলাম বনাম ভারত সরকার মামলা সহ একাধিক মামলায় গুয়াহাটি হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে যে ভোটার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়।

লেখক

  • সৌম্য মন্ডল

    সৌম্য মন্ডল একজন আর্থ-সামাজিক এবং ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি ইস্ট পোস্ট বাংলায় মুখ্য সম্পাদক হিসাবে কর্মরত। মূলত উদীয়মান বহু-মেরুর বিশ্বের নানা ঘটনাবলীর তিনি বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করেন।

    View all posts

সৌম্য মন্ডল একজন আর্থ-সামাজিক এবং ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি ইস্ট পোস্ট বাংলায় মুখ্য সম্পাদক হিসাবে কর্মরত। মূলত উদীয়মান বহু-মেরুর বিশ্বের নানা ঘটনাবলীর তিনি বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করেন।

Leave a comment
scroll to top