বুধবার, ২০শে মার্চ মৌলালি যুবকেন্দ্রে হয়ে গেল উদ্বাস্তুদের কনভেনশন। কনভেনশনের মূল প্রস্তাব ছিলো সাম্প্রতিককালে ভিত্তিবর্ষ ধরে ভারতে স্থায়ী ভাবে বসবাস করা সকলকে নাগরিক হিসেবে মেনে নেওয়ার জন্য নতুন আইন। কারণ তাদের বক্তব্য সিএএ অকার্যকর, এতে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব সম্ভব নয়।
কনভেনশনে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতৃত্ব এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রদীপ ভট্টাচার্য, প্রাক্তন বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা, সিপিআইএম নেতা এবং প্রাক্তন সাংসদ সুজন চক্রবর্তী, সম্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদ বা ইউসিআরসি নেতৃত্ব মধু দত্ত, সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের নেতা মহঃ কামারুজ্জামান প্রমুখ। এই কনভেনশনের মূল উদ্যোগতা ছিলেন জয়েন্ট একশন কমিটি ফর বাঙালি রিফিউজি-র সাধারণ সম্পাদক সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস।
গত ১১ই মার্চ প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ সালের নাগরিক আইন সংশোধনীর রুলস। ঠিক তার নয় দিনের মাথায় উক্ত আইনের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে অনুষ্ঠিত হল কনভেনশন। উদ্যোগতা এবং বক্তাদের দাবি রুলে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে এই আইনে উদ্বাস্তুদের নাগতিকত্ব হবে না। কারণ যে যে নথিপত্র চাওয়া হয়েছে, সেটা উদ্বাস্তুদের কাছে নেই। সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, সমস্ত উদ্বাস্তু নাগরিক সুবিধা ভোগ করছেন, তারা সবাই নাগরিক। তাদের নতুন করে নাগরিকত্বের প্রয়োজন নেই। আমরা চাই সরকার এটা মেনে নিক, স্বীকৃতি দিক।
প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের প্রয়োজনীতা রয়েছে কেন? ঘোষণা করে দিলেই হয়। যে বাচ্চার জন্ম হয়েছে এখানে, তাকে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হবে? এ ছাড়াও ভট্টাচার্য বলেন, আমি যখন মতুয়া উদ্বাস্তুদের জন্য লড়েছি, তখন কংগ্রেস হিসেবে নয়, মানবিকতার জন্য লড়েছি। আমি যদি ভোটে দাঁড়াই, যদি আপনারা জেতান, তাহলে আবার আমি সংসদে আপনাদের বক্তব্য নিয়ে সোচ্চার হব।
দেশভাগের পরে উদ্বাস্তুদের মূলত নেতৃত্ব দিয়েছিলো ইউসিআরসি। এই সংগঠনের তরফে মধু দত্ত উদ্বাস্তু মতুয়াদের নাগরিকত্বে দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব নিশর্ত হওয়া উচিৎ, আমরা সকলকে সিএএতে আবেদন করতে বারণ করছি, আমরা কেউ আবেদন করছিনা। তার পর যা হবে লড়ে নিতে হবে। মহঃ কামারুজ্জামানও মতুয়া উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের দাবিকে সমর্থন জানান। তার যুক্তি, দেশ ভাগ করার সময় তো জনগণের মতামত নেওয়া হয়নি!
আক্ষেপের সুরে আয়োজক সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, সিএএ এর বিরুদ্ধে এতগুলো মামলা হয়ে গেল, কিন্তু উদ্বাস্তদের নাগরিকত্বের বিষয়টা কী হবে এই নিয়ে কেউ কিছু বলছে না!
যদিও দিনের শেষে এটা স্পষ্ট নয় যে আগামী লোকসভা নির্বাচনে উদ্বাস্তুদের নিঃশর্ত নাগরিকত্বের জন্য নতুন আইনের বিষয়টি বাম কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে রাখবে কী না?