Close

সৌদির চিঠি: সৌদিতে পরিযায়ী শ্রমিকেরা কেমন আছেন? (পর্ব ৩৬)

বাংলাদেশের কাকার সাথে দেখা হওয়ায় তিনি সৌদিতে তাঁর সংগ্রামের কথা জানালেন। কিন্তু তা বুঝতে গেলে জানতে হবে সৌদিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবন।

বাংলাদেশের কাকার সাথে দেখা হওয়ায় তিনি সৌদিতে তাঁর সংগ্রামের কথা জানালেন। কিন্তু তা বুঝতে গেলে জানতে হবে সৌদিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবন।

সৌদির চিঠি পর্ব ৩৫

বাংলাদেশে চরম অব্যবস্থার মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হলো এবং ভারতে রাম মন্দির। এই নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই সবার মধ্যেই চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এই নিয়ে যত কম কথা বলা যায় ততই ভালো, কারন হাওয়া সবদিকে অদ্ভুত ভাবে গরম আছে। আমার বাংলাদেশের কাকা দেখা করে জানালেন যে কিভাবে পঁচিশ বছর আগে উনি সৌদি আরবে ম্যানেজারের কাজ নিয়ে এসেছিলেন। এখন উনি বাংলাদেশের বিরাট ব্যবসায়ী, দেশবিদেশ ঘুরে বেড়াতে হয়। সেই যুগে উনি নাকি এক মাস আটদিন থেকেছিলেন মিডল ইস্টে। উনি ওনার জব অফার দেখে ছেড়ে চলে এসেছিলেন। কেন এমন হয়েছিল সেই নিয়ে জানতে হলে উনি সৌদিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয় নিয়ে আগে বোঝালেন আমায়।

আজকের চিঠিতে তেমন বেশি কিছু লিখে আর আপনাদের সময় বেশি নেবো না, কিন্তু কিছু কেবল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়ে রাখবো। সৌদি আরব এবং বাংলাদেশের মধ্যে নাকি চুক্তি আছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বাকি দেশগুলোর সাথেও এই ধরনের চুক্তি থাকে যে তাদের দেশ থেকে লেবারফোর্স পাঠানো নিয়ে। সেই দেশগুলোর আনস্কিল্ড লেবার, অর্থাৎ অদক্ষ অথবা অনভিজ্ঞ শ্রমিকরা যাতে সৌদির মতো মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে এসে কাজ করেন, সেই নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। খাতায় কলমে দালালদের টাকা নেওয়া হাস্যকরভাবে নিষিদ্ধ থাকলেও সেই বিষয়টা দালাল থেকে খোদ প্রধানমন্ত্রী, কেউই ধার ধারেন না। যেন এক ধরনের টার্গেট দেওয়া থাকে কত লক্ষ শ্রমিক পাঠাতে হবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে।

এই বিষয়টা দেখার জন্য সৌদিতে যেমন বেশ কিছু লেবার কন্ট্রাক্টর এজেন্সি ভালোভাবে ধান্দা বিস্তৃত করে আছে, তেমনি ইন্ডিয়া, বাংলাদেশেও প্রচুর দালাল সংস্থাও গজিয়ে উঠেছে, তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে। তারা সৌদির কোম্পানি গুলোর সাথে হাতে হাত মিলিয়ে নিজেদের ব্যবসা চালায়, যখন যেরকম প্রয়োজন আসে, সেই অনুযায়ী শ্রমিক পাঠায়। সমগ্র গাল্ফে এত নির্মাণ কাজ আর বাকি সমস্ত কাজ হতে থাকে, যেটা ওদের দেশের মানুষরা করতে চায়না, যেটা খুব নিম্ন মানের কাজ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়, মানে সেই দেশের বৃহত্তর কাজকর্ম আমাদের শ্রমিকদের জন্যই বরাদ্দ থাকে। এবার এই এত বড়ো অংকের মধ্যে শ্রমিকদের থেকে কম করে লাখ পাঁচেক বাংলাদেশী টাকা প্রনামী নেওয়া হবে যেটা দুই দেশের সংস্থাদের মধ্যে ভাগাভাগি হবে।

এইবার এত টাকা নেওয়ার আরও ভেতরে ভেতরে কারণ আছে। বেশিরভাগ বাংলাদেশের অদক্ষ শ্রমিক এই দেশে আসেন মক্কা মদিনার পুণ্যার্থী হিসেবে। মানে অবশ্যই শ্রমিক হিসেবেই, কিন্তু মক্কার কাবা কে পাখির চোখ করেই ওনারা সৌদি পাড়ি দেন। এবার যদি হত উমরাহ হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে আর সৌদিতে থেকে যাওয়ার তেমন বিশেষ কোনো কারন বেঁচে থাকে না তাদের জন্য। কারণ নিজেদের বাসা পরিবার, জীবনের সমস্ত সুখ আনন্দ ত্যাগ করে এখানে এসে তাঁদের শুধু ঈশ্বরের নাম নিয়ে তো আর এখানে অত খাটুনির মধ্যে আটকে রাখা যাবে না। কেউ যতই ঈশ্বর ভক্ত হন, পেটের খিদে এবং বাচ্চাদের কান্নার থেকে বড়ো তাগিদ আর কিছু হতে পারে না। এই বিষয়টি সৌদি এবং বাংলাদেশ সরকার, এবং একই সাথে দালালরাও খুব ভালো বুঝেছেন, এবং এমন ব্যবস্থা করেছেন যাতে তাদের টাকা ধার করে দালালদের টাকা মেটাতে হয়, এবং সেই ধার মেটানোর জন্য বছরের পর বছর সৌদিতে থেকে যেতে হয়। বছরের পর বছর তারা সেই দেনার দায়ে চূড়ান্ত অব্যবস্থা এবং অবহেলার মধ্যে জীবন কাটাতে বাধ্য হয়ে পড়েন। এত দুরবস্থার মধ্যে খোদার নামে টেনে আনা যায়, রেখে দেওয়া যায়না!

Leave a comment
scroll to top