গত শনিবার ৬ই মে, তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক হয় লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার আ্যবেতে,এবং রানী ক্যামেলিয়াকে মুকুট ধারণ করিয়ে নিজের ক্ষমতা ভাগ করে নেন। জনগনের দেওয়া রাজস্বে ব্রিটিশ রাজপরিবার অস্তিত্ব রাখে এই ২০২৩ সালেও।
এই ঘটনাটি একজন ভারতীয় ট্যুইটার ব্যবহারকারী রিট্যুইট করে কোহিনূর সহ অন্যান্য মূল্যবান ভারত থেকে লুট করা সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।
“রাজ্যাভিষেক তো শেষ, এবার আমরা কি আমাদের কোহিনূর ফেরত পেতে পারি ?” বলে ব্রিটিশ সরকারকে ট্যুইট করে এক ভারতীয়।
আরো কয়েকজন ভারতীয় কোহিনূর ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে বলে ব্রিটিশ সরকারকে। টানা বেশ কয়েকদিন কোহিনূর ট্রেন্ডিং চলে। কোহিনূরকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি বহু পুরনো হলেও, সম্প্রতি কোহিনূরকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ভারত সরকারের তরফে, মিডিয়ে সূত্রে এমনটাই খবর।
এই ১০৮. ৯৩ ক্যারেট বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কাট হীরা, কোহিনূর নামে পরিচিত এর পারসি শব্দার্থ “আলোর পাহাড়”। বিভিন্ন রাজা-বাদশা ও শাসকের হাতঘুরে এখন স্থান পেয়েছে “টাওয়ার অফ লন্ডনে”।
ত্রয়োদশ শতাব্দীর কাকাতিয়া রাজবংশ অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে এটি আবিষ্কার করে। এরপর ষোড়শ শতাব্দীতে কোহিনূর মালওয়ার রাজাদের অধিকারে ছিল এবং পরবর্তীকালে মোঘল সম্রাট বাবরের রাজদরবারে কোহিনূর স্থান পায়। এবং শাহাজাহান নির্মিত ময়ূর সিংহাসনে এর সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করে।
মোগল সাম্রাজ্য যখন পতনের দিকে তখন আফগানিস্থানের আফছারিদ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা নাদের শাহ্কে আমন্ত্রণ জানানো হয় মোঘল সাম্রাজ্যের গৌরবময় দিন ফিরিয়ে আনার জন্য।
অনেকের মতে অনুযায়ী কোহ-ই-নূর নামটি নাদের শাহ্- র দেওয়া। এরপর নাদের শাহ্কে প্রতিশ্রুত অর্থ না দিলে, মোঘলদের কাছ থেকে কৌশলে কোহিনূর আফগানিস্তানে নিয়ে আসে। নাদের শাহ্ হত্যার পর তার পৌত্রর হাত ধরে কোহিনূর আহমেদ শাহ দূরানির মালিকানায় আসে এবং তার পৌত্র শাহ শুজা দূরানির থেকে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে,রনজিৎ সিং-র হাত ধরে পুনরায় ভারতবর্ষে আসে।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের এক গবেষনা অনুযায়ী, দুলীপ সিং শেষ লাহোরের চুক্তির মাধ্যমে এই কোহিনূর হীরা ১৮৩৮ সালে,লর্ড ডালহৌসীর হাতে আসে।
এরপর ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে রানী ভিক্টোরিয়া ভারত সরকার আইন দ্বারা ভারতকে সম্পূর্ণ ব্রিটিশ অধিকৃত করলে, কোহিনূর টি সম্পূর্ণ ভাবে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে আসে যা আজও আছে।
তবে এই কোহিনূর কে ঘিরে বিস্তর মত বিরোধ আছে পন্ডিতদের মধ্যে, অনেকের মতে এই হীরা নাকি ‘অভিশপ্ত’ কোহিনূর হীরা অভিশপ্ত, না ‘অভিশপ্ত’ বলে ভারতীয়দের মনে ভীতি সৃষ্টি করেছে তা নিয়েও যথেষ্ট জল্পনা রয়েছে।
কোহিনুর হীরা আসলে কাদের অধীনে? তা নিয়ে নানা তর্কবিতর্ক আজও বর্তমান, ভারতবর্ষসহ পাকিস্তান, কাবুল, আফগানিস্তান ও হীরার মালিকানা দাবি করেছে।
ঔপনিবেশিকতার সময় এরকম বহু বিদেশি দ্রব্য নিজেদের দেশের বলে দাবি করায়,ইংল্যান্ড প্রতিবার বিতর্কের মুখে পড়েছে।