Close

যাদবপুরে মানবাধিকারের নামে ভুঁয়ো সেনা! কী বলছে মানবাধিকার কর্মীরা?

দুইদিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবাধিকার সংগঠনের নাম করে জড়ো হয় ভুঁয়ো সেনা। কী বলছেন রাজ্যের মানবাধিকার কর্মীরা।

দুইদিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবাধিকার সংগঠনের নাম করে জড়ো হয় ভুঁয়ো সেনা। কী বলছেন রাজ্যের মানবাধিকার কর্মীরা।

দুনিয়া জুড়েই সেনা, আধা সেনা ও পুলিশের সাথে মানবধিকার আন্দোলনের সম্পর্কটা “আদায় কাঁচকলায়”। মানবধিকার কর্মীরা নিরাপত্তা কর্মীদের উপর মানবাধিকার হরণের অভিযোগ তুলে থাকেন। অন্যদিকে নিরাপত্তারক্ষীরাও মানবাধিকার কর্মীদের তাদের কাজের বাধা হিসেবে দেখেন। কিন্তু গত বুধবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে গেল এক তাজ্জব বনে যাওয়ার মত ঘটনা। ক্যাম্পাসে র‍্যাগিং রোখার নাম করে সেনার পোষাকে ঢুকে পড়লেন জনা ৩০ জন মহিলা ও পুরুষ সম্বলিত দল। এই ভুঁয়ো সেনা-র বেশীরভাগই বয়সে তরুণ হলেও, কয়েকজন বয়স্ক নাগরিকও ছিলেন তাদের সাথে। যদিও সেনা কর্তৃপক্ষ উক্ত ব্যক্তিদের সাথে কোনওরূপ সম্পর্ক অস্বীকার করেছে।

এই নকল সেনারা মিডিয়ার কাছে দাবি করেছেন যে, তারা এশিয়ান হিউম্যান রাইটস সোসাইটির সাথে যুক্ত। এনারা নাকি সর্বত্র নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন! এনারা অস্থায়ী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউকে ডেপুটেশনও জমা দিয়েছেন। ডেপুটেশনে তারা ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। একই দাবির কথা সংগঠনটির ফেসবুক পেজেও দেখা যাচ্ছে। সেনা পোষাকে মানবাধিকার আন্দোলন এবং ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার দাবি প্রসঙ্গে ইস্ট পোস্ট বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল রাজ্যের মানবাধিকার আন্দোলনের পরিচিত মুখেদের সাথে।



গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত সুর বললেন “দীর্ঘ দিন ধরে মানবাধিকারের নামে বিভিন্ন প্রতারণা চলছে। বহু ক্ষেত্রে শাসকদল এবং পুলিশের একাংশের সাথে যোগসাজশেই প্রতারণা হয়। পুলিশ কাউকে তুলে নিয়ে গেলে, প্রতারণাকারীরা মানবাধিকার কর্মীর বেশে কার্যত তোলাবাজি করে এবং মানুষকে ঠকায়।” তিনি আরও যোগ করেছেন, “এর আগে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মানবাধিকার কমিশন এইরকম সংগঠন নিয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান চালিয়েছিল এবং এমন বেশ কিছু সংগঠনকে চিহ্নিত করেছিল যারা রীতিমতো তাদের গাড়িতে ভুঁয়ো স্টিকার লাগিয়ে ঘুরতো। মানবাধিকার কমিশন এই সংগঠনগুলির বিষয়ে তালিকা করে পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও বলেছিল কিন্তু পুলিশ ওই কয়েকটি গাড়ি থেকে স্টিকার খুলে নেওয়া ছাড়া আর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।”

এপিডিআর-এর অন্যতম পরিচিত মুখ, মানবাধিকার কর্মী রাংতা মুন্সি ভুঁয়ো সেনা প্রসঙ্গে বলেছেন, “এরা তো কেউ মানবাধিকার কর্মীই নয়। এর সব নিজেরা বলছে যে এরা মানবাধিকার কর্মী। সেই হিসেবে ঠিকই তো আছে। মানবাধিকার কর্মী নয় বলেই এরা নিজেদের আর্মি নিয়ে এসে এরকম বলছে। আরএসএস-এর লোকজন এরা।” তিনি আরও বলেছেন, “যারা মানবাধিকার কর্মী তারা কখনও ‘রাজনৈতিক দল করতে দেওয়া যাবে না’ বা ‘রাজনৈতিক মত প্রকাশের স্বাধীনতার’ বিরোধীতা করবে, এমনটা হয় না। টোটালি কন্ট্রাডিকটরি কথাবার্তা এবং তারপরে আর্মির পোশাক পরে চলে এসেছে। কে তাদের এখানে ডাকলো, কী তাদের পরিচয়, কিছুই জানা গেল না। তারা কে, যে রাজনৈতিক মত প্রকাশের বিরোধীতা করছে?”

শিতাংশু শেখর যিনি ডাকু নামে পরিচিত তিনি বলেছেন, “যে ধরণের বক্তব্য এদের, দেখলাম; আমি বুঝতে পারলাম না কোন ধরণের মানবাধিকার সংগঠন এই ধরণের কাজ করবে!” তিনি আরও বলেছেন, “বেশ কিছু মানবাধিকার সংগঠন আছে যারা পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হয়েছে অনেকদিন ধরে, যারা মানবাধিকারের নাম করে অ-মানবাধিকার-এর কাজকর্মই করছে। আমি লালগড়ে গিয়ে শুনেছিলাম, লালগড়ের ওসি বলেছিলেন যে এইরকম কিছু লোকজন মানবাধিকারের নাম করে জনগণের সাথে ‘পাইয়ে দেওয়ার’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করছে; উপার্জন করছে। মুর্শিদাবাদে এমন একটি সংগঠন এসব কাজ করেছিল। আর এমনই কাজ করেছিল যে পাবলিক এদের ঘিরে ধরে মারতে যায় রীতিমতো। এইরকম দু’নম্বরী আমরা আগেও দেখেছি। কিন্তু এই যে যাদবপুরে যাদের দেখলাম, আমি সত্যিই বুঝতে পারলাম না এরা কারা!”

যদিও যাদবপুরের এই ভুঁয়ো সেনা-র বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মামলা করেছে। এই মামলায় ৯১ সিআরপিসির আওতায় নোটিশ পাঠানো হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউকে। এই নোটিশে ভুঁয়ো সেনা-রা যে ডেপুটেশন জমা দিয়েছিলেন তা প্রশাসনকে জমা দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উপাচার্যকে।

এশিয়ান হিউম্যান রাইটস সোসাইটির ফেসবুক পেজে দেওয়া অফিশিয়াল নম্বরে ফোন করা হয়েছিল ইস্ট পোস্টের তরফ থেকে। যদিও প্রথমবার রিং বেজে গেলেও কেউ তোলেনি। দ্বিতীয়বার ফোন তুলে বলা হয় “ভুল নাম্বার”। গুগুল একাউন্টে দেওয়া মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে বেশ কয়েকবার রিং হলেও, কেউ ফোন তোলেননি। এর পর দুই বার ফোন করা হলে ফোন তুলে কোনো কথা না বলেই কেটে দেওয়া হয়। তারপর থেকে তাদের নম্বরটি সুইচ অফ হয়ে যায়। যদিও গুগুল একাউন্টে সংস্থার নামের নিচে লেখা আছে “টেম্পরারিলি ক্লোজড” অর্থাৎ সাময়িকভাবে বন্ধ।

লেখক

  • সৌম্য মন্ডল

    সৌম্য মন্ডল একজন আর্থ-সামাজিক এবং ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি ইস্ট পোস্ট বাংলায় মুখ্য সম্পাদক হিসাবে কর্মরত। মূলত উদীয়মান বহু-মেরুর বিশ্বের নানা ঘটনাবলীর তিনি বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করেন।

    View all posts

সৌম্য মন্ডল একজন আর্থ-সামাজিক এবং ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি ইস্ট পোস্ট বাংলায় মুখ্য সম্পাদক হিসাবে কর্মরত। মূলত উদীয়মান বহু-মেরুর বিশ্বের নানা ঘটনাবলীর তিনি বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করেন।

Leave a comment
scroll to top