শনিবার, ১৮ই মার্চ, নিউ দিল্লীতে আয়োজিত ‘বিশ্ব মিলেট সম্মেলন ২০২৩’ এর মঞ্চে পৃথিবীর খাদ্য সংকট দূরীকরণে মিলেটকে চিহ্নিতকরণ ও তাকে বিশ্বের সামনে উন্নীত করার জন্য ভারতের অগ্রণী ভূমিকাকে সাধুবাদ জানাল বিদেশী প্রতিনিধিরা।
বিশ্ব মিলেট সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বানিজ্যমন্ত্রী পিযুষ গয়াল, কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র তোমার ছাড়াও বিদেশের (গাম্বিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, সুরিনাম, সুদান, মরিশাস) বহু প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ভারতের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র (ICAR) ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কৃষি কেন্দ্রগুলির প্রতিনিধিরাও সশরীরে বা ভিডিওর মাধ্যমে বিশ্ব মিলেট সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র তোমার অন্যান্য দেশের কৃষিমন্ত্রী ও প্রতিনিধিদের সম্মেলনের সাথে যুক্ত থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করে বলেন যে আন্তর্জাতিক স্তরে মিলেটকে লাগাতার প্রচার করার জন্য এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্যসংকটের মোকাবিলায় মিলেটকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প খাদ্যশষ্য হিসেবে তুলে ধরার জন্য ভারত মোদীর নেতৃত্বে একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে।
ইথিওপিয়ার রাষ্ট্রপতি সালেহ্ ওয়ার্ক জেউডে ও গায়ানার রাষ্ট্রপতি মহম্মদ ইরফান আলী ভিডিও বার্তার দ্বারা বলেন যে বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সামনে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা ও খাদ্য সংকট দূরীকরণ একটি চ্যালেঞ্জ। তারা বলেন যে এই খাদ্য সংকট দূরীকরণের জন্য মিলেট একটি অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠবে কারণ এই খাদ্যশষ্যটি প্রতিকূল পরিবেশে এবং কম জলের যোগানেও উৎপাদিত হতে পারে। মিলেটকে বিকল্প খাদ্যশষ্য হিসেবে তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারতের লাগাতার প্রচার ও পরিশ্রমকে তারা ভূয়সী প্রশংসা করে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী এরপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে কৃষিক্ষেত্রে মিলেট চাষীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে একটি ডাকটিকিট ও একটি মুদ্রার উদ্বোধন করেন। তিনি জানান যে ভারতের লাগাতার প্রচার ও পরিশ্রমের জন্যই জাতিসংঘ ২০২৩ সালকে আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি জানান যে মিলেটের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য গত ইউনিয়ন বাজেটে মিলেটকে “শ্রী অন্ন” বলা হয়েছে।
প্রতিকূল পরিবেশে মিলেটের উৎপাদনকে ইঙ্গিত করে মোদী বলেন যে ভারতের ২.৫ কোটি কৃষক মিলেট চাষের সঙ্গে যুক্ত এবং এরা প্রায় সবাই ক্ষুদ্র কৃষক। মিলেটের উৎপাদন বাড়লে তা যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্ভুত খাদ্য সংকটকে দূর করতে পারবে সেরকম এই ক্ষুদ্র কৃষকদের আয়ও বৃদ্ধি করবে। তিনি মিলেটের উপকারিতা সম্বন্ধে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এও বলেন যে মিলেট চাষ করা যায় রাসায়নিক মুক্ত ভাবে, তাই তা পরিবেশের ক্ষতিও কম করে।
তিনি যোগ করেন যে মিলেট চাষের সাথে জড়িত কৃষকদের আয় বৃদ্ধি হলে গ্রামীন অর্থনীতির উন্নতি হবে। তাছাড়া মিলেট চাষের সাথে বিভিন্ন স্বাবলম্বী গোষ্ঠী জড়িত হওয়ার ফলে মিলেট জাত দ্রব্যের প্যাকেটকরন ও বিক্রি বাড়বে, ফলে সেই দ্রব্যাদির সরবরাহ সংক্রান্ত পরিকাঠামো শক্তিশালী হবে ও কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়াও ভারতের জি২০ (G20) সভাপতিত্বের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদি জানান যে “এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ” আদর্শকে মাথায় রেখেই ভারত মিলেটকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে উন্নীত করার জন্য পরিশ্রম করেছে কারণ বিশ্বকে জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্য সঙ্কট সমস্যাকে মোকাবিলা করতে হবে একটি পরিবারের মতোই। তিনি বিশ্বকে আহ্বান জানান গোটা বিশ্বে মিলেট চাষকে আরও শক্তিশালী করে তোলার জন্য একটি সুগঠিত পদ্ধতি গড়ে তোলার, যেখানে গোটা বিশ্ব একসাথে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে।