গত বুধবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং সফররত প্যালেস্টাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাক্ষীর অধীনে চীন ও প্যালেস্টাইন তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করেছে। উভয় পক্ষ সক্রিয়ভাবে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে আলোচনার প্রচার, সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং বিনিময় বাড়াতে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে অঙ্গীকার করেছে। চীন প্যালেস্টাইনকে মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে, এর জীবিকা ও উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তা করবে এবং প্যালেস্তিনীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও প্যালেস্টাইনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে।
বিশ্বের অভূতপূর্ব পরিবর্তন এবং মধ্যপ্রাচ্যের নতুন অগ্রগতির মুখোমুখি হয়ে, এই দুই দেশের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার করতে এবং প্যালেস্টিনীয় সমস্যার একটি বিস্তৃত, ন্যায্য এবং টেকসই সমাধানের উদ্দেশ্যে কাজ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে শি উল্লেখ করেছেন। শি স্পষ্ট বলেছেন যে এই দুই রাষ্ট্র ভাল বন্ধু এবং ভাল অংশীদার যারা একে অপরকে বিশ্বাস করে এবং সমর্থন করে। চীন, প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) এবং প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দেশগুলির মধ্যে একটি ছিল এবং প্যালেস্টিনীয় জনগণের, তাদের বৈধ জাতীয় অধিকার পুনরুদ্ধারের ন্যায়সঙ্গত কারণকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছে। গত বুধবার প্রকাশিত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি সংক্রান্ত একটি যৌথ বিবৃতিতে, উভয় পক্ষ মূল স্বার্থ এবং মূল উদ্বেগের বিষয়ে পারস্পরিক সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি কেবল পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সমর্থনের ভিত্তিতে চীন-প্যালেস্টাইনের ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বকে পুনর্ব্যক্তই করে না, বরং প্যালেস্টাইন-ইসরায়েল সংঘাত মোকাবেলায় চীনের ক্রমাগত প্রতিশ্রুতিও ঘোষণা করে, যা বিশ্বজনীন বড় পরিবর্তন এবং অশান্তির পটভূমিতে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে চীন, ধারাবাহিক এবং ন্যায়সঙ্গত অবস্থানের সাথে, মধ্যপ্রাচ্যে পুনর্মিলন প্রচারে একটি গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে এবং তারা বলেছে যে চীন-প্রস্তাবিত গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ-এ (জিএসআই) ব্যাপক সমর্থন জিতেছে এবং আরও সুবিধা দিচ্ছে, একই সাথে অঞ্চলভিত্তিক ভাবে এবং বিশ্বব্যাপী।
এটা উল্লেখ্য যে রাষ্ট্রপতি আব্বাস এই বছর চীন দ্বারা আমন্ত্রিত প্রথম আরব রাষ্ট্রপ্রধান, শি বুধবার বলেছেন যে এই সফর দুই দেশের সম্পর্কের দৃঢ়তাকে ব্যক্ত করে। চীন প্যালেস্টাইনকে স্কুল ও রাস্তাসহ ৪০টিরও বেশি প্রকল্প নির্মাণে সহায়তা করেছে, কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন বিশেষজ্ঞ দল, চিকিৎসা সরবরাহ করেছে এবং ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে। সেই সঙ্গে ২০২৩ সালের জুন মাসে নিকট প্রাচ্যে প্যালেস্টিনীয় উদ্বাস্তুদের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থানকে আরও ১ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
একই সাথে প্যালেস্টাইন এক-চীন নীতিকে সমর্থন করে এবং জাতীয় পুনর্মিলন অর্জনের জন্য চীনা সরকারের সমস্ত প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। প্যালেস্টাইন হংকং এবং শিনজিয়াং-সম্পর্কিত বিষয়গুলি সহ চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাহ্যিক হস্তক্ষেপের নিন্দা করেছে। এই উন্নততর সম্পর্ক চীন-প্যালেস্টাইন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন হিসেবে কাজ করবে যা অতীতের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সূচনা করে। চীন সব ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে প্যালেস্টাইনের সাথে কাজ করার এই সুযোগটি কাজে লাগাবে বলে শি জিনপিং জানিয়েছেন।