তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটে বিপর্যস্ত হতে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সংসদের দুই কক্ষের সাথে মার্কিন ঋণ সিলিং সম্পর্কিত সমঝোতায় পৌছতে ব্যর্থ হয়েছেন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন।
১লা জুনের মধ্যে সংসদকে মার্কিন ঋণ সিলিং বৃদ্ধি করা অথবা বিলোপ করার জন্য আইন পাস করতে হবে। মার্কিন ঋণ সিলিং বাড়াতে না পারলে বাইডেন সরকার তার ব্যয় মেটাতে ব্যর্থ হবে এবং অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত দেশটিতে একটি বড় বিপর্যয় হবে বলে আশংকা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
মার্কিন ঋণ সিলিং হল সেই সর্বোচ্চ অর্থ যা কোষাগার থেকে কেন্দ্রীয় সরকার তার খরচ চালানোর জন্য ধার নিতে পারে। ফেডারেল কর্মচারীদের বেতন প্রদান, মার্কিন সেনাবাহিনী, সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান, ইত্যাদিতে এই ঋণ ব্যবহার করা হয়। ঋণের সীমা বাড়ানোর জন্য হোয়াইট হাউসের ইউএস হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস এবং সেনেটের অনুমোদন প্রয়োজন।
বর্তমানে মার্কিন ঋণ সিলিং এর সর্বোচ্চ সীমা হল ৩১.৪ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার যা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই লঙ্ঘন করা হয়ে গেছিল। তখন মার্কিন কোষাগার তার “বিশেষ ব্যবস্থা”র ক্ষমতা প্রয়োগ করেছিল সঙ্কটে জর্জরিত বাইডেন সরকারকে নগদ প্রদান করতে। কিন্তু সঙ্কট মোচনে বাইডেনের এখন সংসদের দুই কক্ষেরই অনুমোদন প্রয়োজন।
বাইডেনের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জটি রিপাবলিকানদের কাছ থেকে আসে। তারা বাইডেনের ডেমোক্র্যাট প্রশাসনের ব্যয়ের বিরোধিতা করে। রিপাবলিকানরা সরকারি খরচ কমানোর দাবি জানিয়ে আসছে, যা বাইডেনের প্রশাসন মেনে নিতে নারাজ।
কোষাগারের সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস এবং সেনেটকে সরকারকে ঋণ সিলিং এর সর্বোচ্চ সীমা বাড়ানোর অনুমতি দিতে রাজি না হলে মারাত্মক পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করেছেন বলে জানা গেছে।
পশ্চিমা বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে যে ইয়েলেন আমেরিকার বড় বড় কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহীদের ব্যক্তিগতভাবে ফোন করছেন এবং মার্কিন ঋণ সিলিং এর সর্বোচ্চ সীমা বাড়াতে সরকারের ব্যর্থতার বিপজ্জনক পরিণতি সম্পর্কে তাদের অবহিত করেছেন।তিনি এবিসি নিউজের অনুষ্ঠান ‘দিস উইক’-কে বলেছেন ঋণ সীমা বাড়াতে ব্যর্থ হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি “সাংবিধানিক সঙ্কটের” দিকে যাবে।
ঋণ সিলিং এর সীমা বাড়ানোর জন্য উভয় হাউসের নেতাদের সাথে ঐকমত্যে পৌঁছাতে বাইডেনের ব্যর্থতা ওয়াশিংটনকে কেবল দেউলিয়া করে দেবে না বা তার কর্মী ও বিভাগগুলিকে দুঃস্থ করবে না, বরং পুরো আমেরিকান আর্থিক ব্যবস্থা এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ ৫০ হাজার কোটি ডলারে মার্কিন ঋণ বন্ড বাজারে লেনদেন করা হয়।
মুডি’স অ্যানালিটিক্স অনুমান করেছে যে ঋণ সিলিং সীমা দীর্ঘায়িত লঙ্ঘনের ফলে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট দেখা দেবে। প্রকৃত জিডিপি ৪% হ্রাস পাবে এবং ৭০ লক্ষের বেশি মানুষ কাজ হারাবেন। এটি মার্কিন বেকারত্বকে বাড়িয়ে তুলবে ৮℅ পর্যন্ত। স্টক মার্কেট ২০% পড়ে যাবে, যার ফলে মার্কিনিদের ১০ লাখ কোটি ডলার নিমেষে উবে যাবে।
মার্কিন ঋণ সিলিং এর সীমা বাড়ানোর ব্যর্থতার কারণে বাইডেন সরকার আরও যে বড় সঙ্কটের মুখোমুখি হবে তা হল রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের যুদ্ধে অর্থায়ন করতে অপারগ হবে। ওয়াশিংটন ডিসি ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকারকে অর্থায়ন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের দেউলিয়াত্ব ইউরোপকেও তীব্রভাবে প্রভাবিত করবে যা ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের কারণে এই মুহূর্তে একটি সঙ্কট জনক আর্থিক পরিস্থিতিতে রয়েছে।