ক্রেমলিন সূত্রের খবর যে গত শুক্রুবার, ৩১শে মার্চ, রাশিয়ার নতুন বিদেশনীতি অনুমোদন করেছেন রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন। নতুন বিশ্ব পরিস্থিতির সাপেক্ষে রাশিয়ার নতুন বিদেশনীতি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। বর্তমানে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান চলার ফলে বিশ্বের কূটনৈতিক মঞ্চে যে ধরণের মেরুকরণ হয়েছে তাতে রাশিয়ার নতুন বিদেশনীতি বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
রাশিয়ার নতুন বিদেশনীতির মূল ধারনাটির লক্ষ্য হল বহুমেরু বিশ্ব প্রতিষ্ঠা, যা বহুপাক্ষিকতা এবং সমস্ত দেশের সার্বভৌম সমমর্যাদার উপর প্রতিষ্ঠিত। শুক্রবার, রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের সঙ্গে পুতিনের বৈঠকে রাশিয়ার নতুন বিদেশনীতি কে অনুমোদন দেন রুশ রাষ্ট্রপতি।
পুতিন এই বৈঠকে রাশিয়ার নতুন বিদেশনীতির গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলেন, “আন্তর্জাতিক বিষয়ে আমূল পরিবর্তনগুলি আমাদেরকে রাশিয়ান ফেডারেশনের বৈদেশিক নীতি ধারণা সহ কৌশলগত পরিকল্পনার আমাদের প্রধান নথিগুলিকে, যা আমাদের কূটনীতির নীতি, কাজ এবং অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে, গুরুত্ব সহকারে সংশোধন করতে বাধ্য করেছে।”
রাশিয়ার নতুন বিদেশনীতি সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন ” ধারণাটিতে আমরা ভারসাম্যপূর্ণ এবং ন্যায্য বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নীতি ব্যাখ্যা করেছি।এর মধ্যে রয়েছে বহুকেন্দ্রিকতা, রাষ্ট্রেগুলির সার্বভৌম সমতা, তাদের নিজেদের উন্নয়নের মডেল বেছে নেওয়ার অধিকার এবং দুনিয়ায় সাংস্কৃতিক এবং সভ্যতার বৈচিত্র্য। বহুমেরু বিশ্বের প্রচারকে নতুন বিদেশনীতির কাঠামোগত কর্মসূচি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।”
রাশিয়ার নতুন বিদেশনীতির ২৫ নং ধারা বলে যে রাশিয়া বা তার মিত্ররা আক্রান্ত হওয়ার আশংকা তৈরি হলে, রাশিয়া আক্রান্ত হওয়ার অপেক্ষা না করেই, সামরিক হস্তক্ষেপ করতে পারে। ল্যাভরভ এই বিষয়ে বলেন, “রাশিয়া এবং তার মিত্রদের উপর সশস্ত্র আক্রমণ প্রতিহত বা প্রতিরোধ করার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহারের একটি অনুচ্ছেদ রয়েছে (বিদেশনীতির দলিলে)। এইভাবে, আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করি যে আমরা রাশিয়ান জনগণের অস্তিত্ব এবং অবাধ বিকাশের অধিকার রক্ষা করব।”
এর আগে, ২০১৬ সালে রাশিয়া বিদেশনীতি ঘোষণা করে। সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াই, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার, আন্তর্জাতিক স্তরে রাশিয়ার উপস্থিতি বৃদ্ধি, রুশ জাতীর সার্বভৌমত্ব রক্ষা ছিল বিদেশনীতির কেন্দ্রীয় বিষয়।
বর্তমান বিদেশনীতি নিয়ে বলতে গিয়ে ল্যাভরভ বলেন, “এটি সম্পূর্ণরূপে নব্য ঔপনিবেশিক অনুশীলন এবং যে কোনো ধরনের আধিপত্যবাদকে প্রত্যাখ্যান করে।” এই বিদেশনীতিতে রাশিয়া গণপ্রজাতন্ত্রী চীন ও ভারতের মতন দেশের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক কে ও রণনৈতিক অংশীদারিত্ব কে নিবিড় করার উপর জোর দিয়েছে।
ল্যাভরভ বলেন, “একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসাবে, আমাদের মহান প্রতিবেশী – গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, ভারত প্রজাতন্ত্র, ইসলামিক বিশ্বের দেশগুলির পাশাপাশি আসিয়ান, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দেশগুলির সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা উন্মোচন করার নীতিটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”
এর আগে রাষ্ট্রপতিকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান যে এই দলিলে “নিঃশর্ত অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে বিদেশে আমাদের ব্যক্তি ও সংস্থার অধিকার নিশ্চিত করা, স্বদেশীদের সমর্থন প্রদান, রুসোফোবিয়া (রুশাতঙ্ক) মোকাবেলা, বিশ্বে রুশ ভাষার অবস্থান শক্তিশালী করা, ঐতিহাসিক সত্যের জন্য লড়াই, আমাদের সংস্কৃতি রক্ষা, খেলাধুলাকে অরাজনৈতিককরণ এবং ক্রীড়া সহযোগিতার নতুন ধরণ প্রতিষ্ঠা করা”।
স্পষ্টতই রাশিয়ার নতুন বিদেশনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একমেরু বিশ্বে নিজের অস্তিত্ব জাহির করার বদলে এই বার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা আধিপত্যের বিশ্ব ব্যবস্থাটাকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। বেসরকারি সন্ত্রাসবাদের বদলে আক্রমণের লক্ষ্য বস্তু হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশের সরকার গুলোর সামরিক আগ্রাসন।