Close

“সব জ্বালিয়ে দিল”, গরিবের কান্না চাপা পড়লো শিবপুরের সাম্প্রদায়িক হিংসার উন্মাদনায় 

হাওড়ায় রাম নবমীর মিছিল কে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় সর্বস্বান্ত হলেন এলাকার গরিব শ্রমজীবী মানুষ। আগুন নিভলেও শেষ হয়নি সর্বনাশ।

“সব জ্বালিয়ে দিল”, গরিবের কান্না চাপা পড়লো শিবপুরের সাম্প্রদায়িক হিংসার উন্মাদনায় 

ছবি সত্ত্ব: সৌম্য মন্ডল/ইস্ট পোস্ট বাংলা

শিবপুরে হাওড়া জুট মিলের গেটে সব্জি বেচেন হায়দার আলী (৫২)। অনেকক্ষণ ধরে এক দৃষ্টিতে রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পদপিষ্ট হওয়া শশাগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আলী জানালেন যে বৃহস্পতিবার, ৩০শে মার্চ, তাঁকে রাস্তায় ঠেলা ভ্যান নিয়ে দাঁড়াতে দেয়নি পুলিশ। বলা হয়েছিল গলির ভিতর দাঁড়াতে, কারণ রাম নবমীর মিছিল যাবে। বললেন তাঁর ঠেলা ভ্যানে শশা, লেবু, প্রভৃতি ছিল কিন্তু রাম নবমীর মিছিল থেকে আক্রমণকারীরা সেই সব জ্বালিয়ে দিয়েছে, পাল্লা আর বাটখারাও বাঁচেনি তাঁর। বলতে বলতে, প্রৌঢ়ের কান্নায় গলা ধরে গেল। বৃহস্পতিবার রাম নবমীর মিছিল থেকে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক হিংসার এইরকম নানা ঘটনার সাক্ষী রইলো হাওড়ার শিবপুর অঞ্চল।

নষ্ট হয়ে যাওয়া সব্জির স্তুপের সামনে হায়দার আলী
নষ্ট হয়ে যাওয়া সব্জির স্তুপের সামনে হায়দার আলী ছবি সত্ত্ব: সৌম্য মন্ডল/ইস্ট পোস্ট বাংলা

কলকাতার অফিসে বসে যখন হাওড়ার শিবপুরে রাম নবমীর মিছিল কে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হিংসার খবর পেলাম তখন সন্ধ্যা ৭.৩০ বাজতে চলেছে। হাওড়ার শিবপুর অঞ্চলের বাসিন্দাদের টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা অঞ্চলে যেতে বারণ করেন কারণ তখনো নাকি সেখানে ক্রমাগত বোমা পড়ছে।

হাওড়ার শিবপুরের সাম্প্রদায়িক হিংসা পিড়িত অবাঙালি প্রধান অঞ্চলটি পশ্চিমবঙ্গের প্রধান প্রশাসনিক দফতর নবান্ন থেকে মাত্র ২ কিমি দূরত্বে। বিগত বছরগুলোতেও ঠিক রাম নবমীর দিনেই সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটে গেছে এই অঞ্চলে। এক সময়ের শিল্প শহর হাওড়ায় কিছু ধুকতে থাকা চালু এবং বন্ধ কারখানার অবাঙালি শ্রমজীবী মানুষ বাস করেন এই অঞ্চলে।

গঙ্গার উপর দিয়ে কলকাতার সাথে হাওড়া কে সংযুক্ত করা দ্বিতীয় হুগলি সেতু পেরিয়ে ম্যাজিক ভ্যান থেকে যখন নামলাম তখন ঘড়িতে রাত ৯টা বাজছে।একদম স্বাভাবিক মন্দিরতলা মোড়, যেন কিছুই হয়নি; রাস্তায় মানুষ আর যান চলাচল স্বাভাবিক। অথচ এখান থেকে মাত্র ২০ মিনিটের হাঁটা পথের দূরত্বেই নাকি সাম্প্রদায়িক হিংসা হয়েছে! অথচ অফিস ফেরত যাত্রীরা মাজ্যিক ভ্যানের চালকের সাথে খুচরো নিয়ে ঝগড়া করছেন, দাঙ্গা নিয়ে কেউ কিছুই বলছেন না।

মন্দিরতলা মোড় থেকে শিবপুর থানার দূরত্ব ২ কিমির মতন। মন্দিরতলা মোড় থেকে ভেতরের গলি পথে শিবপুর থানা অবধি যাওয়ার পথে গলির ভিতর ঢাক বাজিয়ে দুটি ছোটো অন্নপূর্ণা প্রতিমা নিয়ে চলা দলকে দেখা গেল। কে বলবে যে এখানেই আসে পাশে এমন কোনো সাম্প্রদায়িক হিংসা হয়েছে, যা জাতীয় স্তরে সংবাদমাধ্যমের নজর কেড়েছে?

শিবপুর থানা যখন হাঁটা পথে আরও তিন-চার মিনিট বাকি তখন পরিপাটি পাঞ্জাবি, ফেজটুপি পড়া কয়েকজন যুবকের একটা দলকে দেখা গেল। সাম্প্রদায়িক হিংসা নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা জানান যে, মসজিদে নামাজ পড়তে এসেছিলেন, তারা এই এলাকার নন এবং তাদের এলাকায় কিছুই হয়নি।

শিবপুর থানার কাছাকাছি আসতেই সংখ্যালঘু যুবকদের ছোটো ছোটো জটলা দেখা গেল। তারা কেউ সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলতে রাজি নয়। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বললেন “ওরা পুরো প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল, গাড়িতে রড, বোতল, বন্দুক, তলোয়ার ভরে নিয়ে এসেছিল”, অন্য যুবকেরা তাকে থামিয়ে দিয়ে আগে গিয়ে দেখতে বললো, আর জানালো যে এখনো ঝামেলা চলছে।

অলোকা সিনেমার সামনে জিটি রোডের উপরে উঠতেই আলো আধারিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে ক্রিকেট হেলমেট পরে লাঠি হাতে পুলিশের ছোট-ছোট দলকে টহল দিতে দেখা গেল। সারা রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কাঁচের টুকরো, ছেঁড়া জুতো, ইত্যাদি। হালকা বৃষ্টির কারণে আগুন নিভেই এসেছিল প্রায়। কোথাও হাল্কা, ধিক ধিক আগুন জ্বলছিল, কোথাও আবার ধোঁয়ায় ভরে গেছিল আকাশ। বোঝা গেল খানিক আগেও আগুন জ্বলছিল এই স্বয়ং অঞ্চলে।

শিবপুরে রাম নবমীর মিছিল কে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হিংসায় জ্বলে যাওয়া বাইক
রাস্তায় জ্বলে যাওয়া বাইক। ছবি সত্ত্ব: সৌম্য মন্ডল/ইস্ট পোস্ট বাংলা

থানায় গিয়ে ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অরুপ কুমার রায় কে পাওয়ে গেল না। পুলিশ কর্মীরা জানালেন যে উনি রাস্তায় আছেন। রায়কে ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি।

থানা থেকে জিটি রোড ধরে ফজির বাজারের দিকে যত এগোনো হল ততই ঘটে যাওয়া হিংসার চিত্র স্পষ্ট হতে থাকল। রাস্তার দুই ধারে পোড়া বাইক, পোড়া দোকান, রিকশা, ভ্যান, ছড়ানো ছেটানো ফল, সব্জি, তরমুজ, ইত্যাদি পড়ে। ফুটপাতে ক্রমশই র‍্যাফের সংখ্যা বেড়ে চলেছিল।

দাঙ্গা বিধ্বস্ত জিটি রোড
দাঙ্গা বিধ্বস্ত শিবপুরের রাস্তা। ছবি সত্ত্ব: সৌম্য মন্ডল/ইস্ট পোস্ট বাংলা

শ্রমিক মহল্লার গলি থেকে জিটি রোডের দিকে যেতে কয়েকজন ১৫/১৬ বছরের কিশোরকে আসতে দেখলাম। তাদের মধ্যে একজনকে দেখেই সে যে গুরুতর আহত তা বোঝা গেল। জিজ্ঞাসা করতে তাঁরা জানালো যে তাঁরা কোনো ঝামেলা দেখেনি এবং অঞ্চলে ছিল না। তারপর হঠাৎ সেই আহত কিশোর জিজ্ঞাসা করল – আমরা কি সামনে যেতে পারি? মেন রোডে উঠতে পারি? কোনো ভয় নেই তো? জিটি রোডে পরিস্থিতি স্বাভাবিক শুনে সে প্রতিবেদককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলে, এই খবরটুকুই তাঁর জন্যে অনেক।

কিশোরের দল কে কাটিয়ে একটু এগোতেই রাস্তার ধারে, একটি মন্দিরের গলিতে জটলা করে দাঁড়িয়ে ছিল একদল যুবক। প্রতিবেদককে হিংসার চিহ্ন গুলোর ছবি তুলতে দেখে তাঁরা ছবি তোলার উদ্দেশ্যের কথা জিজ্ঞাসা করে। পরিচয় দিতেই তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, ছবি তুলে কী লাভ? ছবি, ভিডিও সব আমাদের কাছে আছে। যুবকদের খুব আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল। জানা গেল ইনারা সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে অংশগ্রহণ করেছেন।

তাঁদের মধ্যে একজন হলেন মাধব রাও (৩৬), তিনি একটি গ্যারেজ চালান। রাও বললেন “সবই তো ভালই ছিল। বেলা ৪টা অবধি সব কিছুই ভাল ছিল। মিছিলটা (রাম নবমীর মিছিল) যখন এল তখন ওদের (সংখ্যালঘু মুসলিমদের) আজানের টাইম।… মিছিল হলে স্লোগানতো হবেই। আজানের জন্য আমরা পাঁচ মিনিট চুপ ছিলাম। আজান শেষের পরে যখন আবার জয় শ্রীরাম স্লোগান দেওয়া শুরু হল, তখন দেখলাম শ্রী জৈন হাসপাতালের কাছের মসজিদের আসে পাশের বাড়ির ছাদ থেকে বড় বড় পাথর আর বোতল ছোড়া হতে থাকে। প্রথমে ওরাই শুরু করল। ওরা চার্জ করলে আমরাও কি চার্জ করবো না দাদা? আমরা কি চুড়ি পরে বসে আছি? ওরা চারটে চার্জ করলে আমরা আটটা চার্জ করবো। এটাই হবে।”

রাম নবমীর মিছিলে অংশগ্রহণকারী মাধব রাও। ছবি সত্ত্ব: সৌম্য মন্ডল/ইস্ট পোস্ট বাংলা

রাস্তার ধারে আরেক বছর ১৬/১৭-র কিশোরকে জিজ্ঞাসা করা হল যে কী হয়েছে? সে কিছু দেখেছে কি না? সে বলল, “কী দরকার বলে, বাইরের লোক তো সব সময় আসবেনা”, তারপর মুসলিম মহল্লার দিকে ইশারা করে বললেন, “আমাদের তো ওদের সাথেই থাকতে হবে”।

বছর ষাটেকের মহম্মদ তাহির ফজির বাজার অটো স্ট্যান্ডের কাছে রয়েল বেঙ্গল বিরিয়ানির দোকান চালান। ইসলামের পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে যেহেতু মুসলিমরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত অবধি উপবাস করেন, তাই সকাল থেকেই তাঁর বিরিয়ানির দোকানে বিক্রি বাটা হয়নি। অপেক্ষা ছিল সন্ধ্যাবেলায় ইফতারের পরে গ্রাহকদের জন্যে। কিন্তু বিকেলবেলায় রাম নবমীর মিছিল কে কেন্দ্র করে হিংসাত্মক আক্রমণ শুরু হতেই ভীত প্রৌঢ় তাড়াতাড়ি দোকানের ভারী জিনিসপত্র সরাতে গিয়ে পড়ে আহত হন।

তাহির বলেন, “আমি দেখলাম ৫.৩০ নাগাদ খুব দৌড়াদৌড়ি হচ্ছে। আমি তখন দোকানের জিনিসপত্র ভিতরে ঢোকালাম, ওই সব সরাতে গিয়ে পায়ে লেগে গেছে”। তাহিরের দাবি ঝামেলার সময় ভয় পেয়ে তিনি দোকানের ভিতর ঢুকে গেছিলেন, তাই কিছুই দেখেননি।

একই দাবি প্রায় প্রত্যেক সংখ্যালঘু মানুষের। সবাই বলেছেন যে তাঁরা ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না, তাই কিছু বলতে পারবেন না। এরকমই রয়াল বেঙ্গল বিরিয়ানি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বছর ২৬ এর এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংখ্যালঘু যুবক বললেন, “আমাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করবেন না, আমি কিছুই বলতে পারবো না। পুলিশকে জিজ্ঞাসা করুন, ওরা দাঁড়িয়ে ছিল, ওদের সামনেই তো সব হয়েছে”। এরপর যুবকটি চলে যেতে গিয়ে আবার ফিরে এসে বললেন, “তবে একটা কথা বলতে পারি, আমরা চুপ আছি, সব মেনে নিচ্ছি। কিন্তু যেদিন আমরা কিছু করা শুরু করবো সেদিন কিন্তু কেউ সামলাতে পারবে না।”

বড় রাস্তা থেকে হাওড়া জুটমিলের উল্টো দিকে সংখ্যালঘু মুসলিমদের মহল্লায় ঢুকলাম তৃণমূল কংগ্রেসের ৩১ নং ওয়ার্ডের সভাপতি খুরশিদ মাস্টারের বক্তব্য জানতে। তখন রাত প্রায় ১১ টা। আঁকাবাঁকা সরু গলির ভিতর বিভিন্ন বয়সী উত্তেজিত মানুষের ছোট ছোট জটলা চোখে পড়ল, তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কানে আসছিল ছেঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার কথা, বোমা পড়ার কথা। তাদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ আলো আঁধারিতেও স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠছে। তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে সবে মাত্র ঘটনাটা ঘটেছে।

দাঙ্গা বিধ্বস্ত হাওড়া জুট মিল অঞ্চল
দাঙ্গা বিধ্বস্ত হাওড়া জুট মিল অঞ্চল। ছবি সত্ত্ব: সৌম্য মন্ডল/ইস্ট পোস্ট বাংলা

খুরশিদ মাস্টারের বাড়ি যত কাছে আসতে থাকল, ভিড়ও ততই যেন বাড়তে থাকছে। শেষে ওয়ার্ড সভাপতির বাড়ির বাইরে এক তৃণমূল কংগ্রেস নেতা জানালেন যে আজ কথা বলার পরিস্থিতি নেই, আজ প্রেসের সাথে কথা হবে না, কাল সকালে প্রেসের সাথে কথা বলা হবে। ফেরার সময় একজন বছর ২৮-র যুবক প্রতিবেদককে দেখে এগিয়ে এসে বলল দাদা মেন রোডে উঠলে হাত উপরে করে যাবেন। জানালাম, না এখন সেরকম কিছু করতে হচ্ছে না।

শিবপুরেই থাকেন বিশিষ্ট অভিনেতা নাট্যকার জয়রাজ ভট্টাচার্য। প্রসঙ্গত এই বছর জানুয়ারিতে উৎপল দত্তের লিখিত নাটক “তিতুমীর” ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার (এনএসডি) ভারত রঙ্গ মহোৎসব থেকে বাদ দেওয়ায় বিতর্ক তৈরি হয়। এই নাটকটির পরিচালক ছিলেন ভট্টাচার্য। তিনি এখানে সামাজিক আন্দোলনের সাথেও জড়িত।

ভট্টাচার্য বলেন, “এটা প্রথম ঘটল এমনটা নয়। চওড়া বস্তি এবং পিএম বস্তির সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে রাম নবমীর মিছিল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফোরশোর রোড এবং জিটি রোডের মাঝামাঝি যে অঞ্চল, মূলত ৯৫% শ্রমজীবী মুসলিমরা থাকেন। এরা সবাই জুট মিল শ্রমিক। জুটমিলগুলো বন্ধ হয়ে হাইরাইজ ফ্ল্যাট উঠেছে। এখানে মূলত নব্য ধনী, মাড়োয়ারি, গুজরাটিরা থাকে। যারা প্রবলভাবে আরএসএসকে (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ কে) ফান্ড দেয়। গত তিন বছর ধরে দেখতে পাচ্ছি রামনবমীর মিছিল তারা সংগঠিত করে। মিছিল থেকে উস্কানিমূলক স্লোগান দেওয়া হয়, এগ্রেশন শো করা হয়।”

দাঙ্গা বিধ্বস্ত হাওড়ার সড়ক
দাঙ্গা বিধ্বস্ত হাওড়ার সড়ক. ছবি সত্ত্ব: সৌম্য মন্ডল/ইস্ট পোস্ট বাংলা

তিনি যোগ করেন “হতাহত খুব বেশি না হলেও রাজ্যজুড়ে একটা উত্তেজনা, গুজবের বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা চলছে। এখানে সেখানে উল্টো ন্যারেটিভ প্রচারের চেষ্টা চলছে যে, মুসলিমরা কত হিংস্র, দেখো ওরা শান্তিপূর্ণ মিছিলে ইঁট মারে!”

ভট্টাচার্য আরো বলেন, “হাওড়ায় রাম নবমীর ঐতিহ্য অনেক পুরানো, সেটা রামরাজাতলাকে কেন্দ্র করে। তার সাথে উত্তরপ্রদেশের এই আগ্রাসক রামের কোনো সম্পর্কই নেই। এটা খুব নতুন একটা ঘটমান বিষয় যেটাকে লালনপালন করা হচ্ছে। যেখানে সরকার বা প্রশাসন খুব সদর্থক ভূমিকা পালন করছে না বলেই আমাদের মনে হয়। গত দুই বছর একই ঘটনা ঘটেছে যখন, আবার একই ঘটনা কী ভাবে ঘটে, যদি প্রশাসন সতর্ক থাকে?”

দাঙ্গা বিধ্বস্ত শিবপুরে জিটি রোডে কর্মরত পৌর সভার কর্মীরা
দাঙ্গা বিধ্বস্ত শিবপুরে জিটি রোডে কর্মরত পৌর সভার কর্মীরা ছবি সত্ত্ব: ইস্ট পোস্ট বাংলা

এলাকায় কথা বলে বোঝা গেল গত দুই বছরের মত মূলত অবাঙালি হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যেই এই হিংসার ঘটনা ঘটেছে। বাঙালি হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। অশান্ত এলাকায় আগুন নিভে গেলেও ভিতরে ধিকি ধিকি করে একটি শিখা যে জ্বলছে সেটা টের পাওয়া যাচ্ছিল। সবার শেষে এসেছে পৌরসভার কর্মীরা, বুলডোজার আর গাড়ি নিয়ে রাস্তার জঞ্জাল সাফ করতে, স্বাভাবিক চিত্র ফিরিয়ে আনতে। ফজির বাজার থেকে জিটি রোড ধরে যতই হাওড়া স্টেশনের দিকে এগোতে থাকলাম ততই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছিল, মুছে যাচ্ছিল ধ্বংসস্তুপের চিহ্ন। কিন্তু এই ভাবেই আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের বুকে উগ্র ধর্মীয় মেরুকরণ আর সাম্প্রদায়িক অশান্তি মুছে যাবে কি না সেটা এই অন্ধকার রাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল না। 

লেখক

  • সৌম্য মন্ডল

    সৌম্য মন্ডল একজন আর্থ-সামাজিক এবং ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি ইস্ট পোস্ট বাংলায় মুখ্য সম্পাদক হিসাবে কর্মরত। মূলত উদীয়মান বহু-মেরুর বিশ্বের নানা ঘটনাবলীর তিনি বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করেন।

    View all posts

সৌম্য মন্ডল একজন আর্থ-সামাজিক এবং ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি ইস্ট পোস্ট বাংলায় মুখ্য সম্পাদক হিসাবে কর্মরত। মূলত উদীয়মান বহু-মেরুর বিশ্বের নানা ঘটনাবলীর তিনি বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করেন।

Leave a comment
scroll to top