পুর্বতন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে ফ্রান্সে চীনা রাষ্ট্রদূত লু শাইয়ের সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে চীনের বিদেশ মন্ত্রক সোমবার, ২৪শে এপ্রিল, বলেছে যে সোভিয়েত ভেঙে যাওয়ার পরে চীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে প্রদেশগুলিকে মর্যাদা দেয়। গ্লোবাল টাইমসের ধারাভাষ্যকার হু জিন একটি বিবৃতিতে লুয়ের বাকস্বাধীনতা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।
৮০ জন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য ফ্রান্সের কাছে রাষ্ট্রদূত লুয়ের বহিস্কারের দাবি জানিয়েছে। হু মন্তব্য করেছেন, “এই ধরনের অনুরোধ যেমন উদ্ভট তেমনই অকারণ। আমি বিশ্বাস করি এই রকম অর্থহীন আবেদনে ফ্রান্স সাড়া দেবে না। ফ্রান্স ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য এবং তিন বাল্টিক রাষ্ট্রের চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না।”
ক্রিমিয়া সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে চীনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, এই বিষয়ে চীনের অবস্থান অপরিবর্তিত।
ভূখণ্ড ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে চীনের অবস্থান সুসংগত ও স্পষ্ট। সমস্ত দেশের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে চীন সম্মান করে আসছে। জাতিসংঘের সনদের উদ্দেশ্য ও নীতিকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছে চীন, সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন। হু বলেন, “ইউক্রেন এবং পূর্বতন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলির স্বীকৃতি সম্পর্কে চীনের একাধীক সরকারি বিবৃতি আছে। যেগুলো একত্রে চীনের অবস্থান স্পষ্ট করে। এবং তা ইউরোপ সহ সমগ্র বিশ্বের সামনে সুস্পষ্ট ভাবে রাখা হয়েছে।”
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয় যে দেশগুলো, চীন তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিল। চীন সর্বদা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমতার নীতি মেনে এসেছে এবং দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার সম্পর্কে আস্থা রেখেছে। মাও বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর চীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে মর্যাদা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত চীনা রাষ্ট্রদূত লু ফরাসি টেলিভিশন LCI নিউজ চ্যানেলকে একটি সাক্ষাৎকারে বলেন যে “এইসব পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রগুলির আন্তর্জাতিক আইনে প্রকৃত স্বীকৃতি নেই কারণ তাদের সার্বভৌমত্ব বাস্তবায়িত করার জন্য কোনও আন্তর্জাতিক চুক্তি নেই৷” তাঁকে ক্রিমিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে তার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে, মাও বলেন যে সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি ফেডারেল রাষ্ট্র ছিল এবং বিদেশ নীতিতে তারা সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক আইনের স্বীকৃতি পেয়েছিল। এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিটি প্রজাতান্ত্রীক সদস্য সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেয়েছে।
মাও আরও বলেন যে, ইউক্রেন প্রশ্নে চীনের অবস্থান বস্তুনিষ্ঠ, ন্যায্য এবং অত্যন্ত স্পষ্ট। ইউক্রেনের সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতীক পরিমন্ডলে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে চীন উদ্গ্রীব।
হু এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “লু ফ্রান্সে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত চীনা রাষ্ট্রদূত। চীন-ফ্রান্স সম্পর্কে তিনি চীন সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি চীন ফ্রান্স দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে দ্বায়িত্ব পালন করেন। ইউক্রেন প্রশ্ন তাঁর কাজের পরিধিতে পড়ে না। ফ্রান্সের সংবাদ সংস্থা তাঁর থেকে ইউক্রেন সমস্যা নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ উত্তর চায়। এতে তাঁর কিছু সাধারণ মন্তব্য রাখার সুযোগ হয়। যদিও তিনি একজন কূটনীতিক, এই ধরনের সাক্ষাৎকারে তাঁর আধিকারীক বিবৃতির গুণমান নামতে বাধ্য, বিশেষ করে যা তাঁর দৈনন্দিন কার্যক্রমের বাইরে।”
মাও উল্লেখ করেছেন যে তাঁর বিবৃতি চীনা সরকারের রাজনৈতিক অবস্থানের প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি বলেন, সমস্ত দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করার এবং জাতিসংঘের সনদের নীতিগুলিকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে চীন নিঃসন্দেহে এগিয়ে থাকা একটি দেশ।
সোমবারের সাংবাদিক সম্মেলনে বিদেশী প্রতিবেদক পরবর্তী যে প্রশ্নটি করেছিলেন তা হল, চীন কি ইউক্রেনকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়?
মাওয়ের সহাস্য উত্তর, “এটা সাধারণ জ্ঞানের মধ্যে পড়ে, আপনি যে দেশটির কথা উল্লেখ করলেন সেটি জাতিসংঘের একটি আনুষ্ঠানিক সদস্য রাষ্ট্র, এবং শুধুমাত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলিই জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক সদস্য হতে পারে।”
জাতিসংঘের সনদের সহাবস্থান সংক্রান্ত পাঁচটি নীতির উদ্দেশ্য ও নীতির ওপর ভিত্তি করে ইউক্রেনের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে চীন। সেই সম্পর্ককে ব্যাহত করার যে কোনও প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে, চীনা মুখপাত্র বলেন।
হু বলেন, “লুএর সাক্ষাৎকার বেশ দীর্ঘ এবং এক বিশেষ প্রসঙ্গে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রসঙ্গ থেকে তা টেনে বের করে নিয়ে বড় করে দেখানো বা বিচার করা অনুচিত। পরিকল্পনা বহির্ভূত কথাবার্তায় জোর দেওয়াও সঠিক নয়। এই ধরনের মন্তব্যকে বাকস্বাধীনতার অন্তর্গত করে দেখা উচিত। তাঁর আওতাধীনে নয় এমন অনেক বিষয়ে কথা বলেছেন লু। তাঁকে ফ্রান্সের সংশ্লিষ্ট সংবাদ সংস্থা সাক্ষাৎকারের জন্য অনুরোধ করেছিল।”
হু আরও বলেন, “সমগ্র ফ্রান্সের উচিত লুয়ের বাকস্বাধীনতা রক্ষা করা, এবং রাজনৈতিক নিন্দা প্রতিহত করা। নইলে ফ্রান্সের মর্যাদাহানি হয়।”