Close

পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা! কী প্রভাব ফেলবে?

রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে শিশুদের 'ডিপোর্ট' করার অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করল আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত।

রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে শিশুদের 'ডিপোর্ট' করার অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করল আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত।

১৭ই মার্চ শুক্রবার স্বয়ং রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত। শুধু পুতিন নয় রুশ শিশু অধিকার কমিশনার মারিয়া লাভোভা বিলোভার বিরুদ্ধেও জারি হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা!

পুতিন এবং বিলোভার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ হল ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ এর পর থেকে ইউক্রেনের জনগণকে বিশেষত শিশুদের বেআইনি ভাবে “ডিপোর্ট” করে রাশিয়ার নিয়ে চলে গেছে তারা। যদিও রুশ পক্ষের দাবি ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচাতেই বিপজ্জনক অঞ্চল থেকে শিশুদের রাশিয়ার অভ্যন্তরে নিরাপদে সরানো হয়েছে।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন রুশ রাষ্ট্রপতি পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা কে “ন্যায়সংগত” বলে উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন “স্পষ্টতই পুতিন যুদ্ধাপরাধ করেছে।”

এর প্রতিক্রিয়ায় দেশটিতে রুশ দূতাবাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও যে ICCকে অনুমোদন দেয়নি সেটা মনে করিয়ে দিয়ে, রাষ্ট্রপতি বাইডেনের মন্তব্যকে “অলস সিজোফ্রেনিয়ার” সাথে তুলনা করেন।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র নীতি বিশ্লেষক টনি কেভিন শনিবার রুশ সংবাদ সংস্থা তাসকে কে বলেছেন, ডনবাসের প্রাণঘাতী যুদ্ধের অঞ্চল থেকে শিশুদের সরিয়া দেওয়া রাশিয়ার দায়িত্বশীল এবং মানবিক পদক্ষেপ, যেখানে তাদের বাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল, খেলার মাঠে ২০১৪ থেকে তাদের প্রাক্তন সরকার গোলা নিক্ষেপ করেছে। কেভিন আরো বলেন “শুধুমাত্র একটি রুশ বিদ্বেষী মন – শুধুমাত্র একটি ইউক্রেনীয় নাৎসি মন – ঝুঁকিপূর্ণ নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য নেওয়া এই বিচক্ষণ ব্যবস্থায় একটি অপরাধ দেখতে পারে।”

রোম সংবিধির ৮(২)(ক)(৪) এবং ৮(২)(খ)(৪) অনুচ্ছেদের অধীনে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ পুতিন এবং রুশ সরকারের শিশু অধিকার কমিশনার মারিয়া আলেকসেয়েভনা লভোভা বেলোভার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। ২২শে ফেব্রুয়ারী ২০২৩-এ প্রসিকিউশনের জমা দেওয়া আবেদনের ভিত্তিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আদালত।

আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবং প্যালেস্তাইনে ইজরায়েলের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করার জন্য এর আগে প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের প্রসিকিউটর ফাতু বেনসৌদার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলো। যদিও ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে বাইডেন সরকার এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

রোম সংবিধি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত গঠিত হয়েছে। ১২৩টি দেশ এই আদালতকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত দেশের সরকারগুলির মধ্যে বিবাদের মীমাংসা করতে পারলেও কোনো ব্যাক্তির বিচার করতে পারেনা, যা পারে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত। শুধুমাত্র ১লা জুলাই ২০০২ এর প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কোনো অপরাধের বিচার করতে পারে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত।

আন্তর্জাতিক ফৌজদারী আদালত ১৯৯৮ সালে রোম সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে গৃহীত সংবিধির পক্ষে ১২০ টি দেশের স্বীকৃতির পর ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি জাতিসংঘের অংশ নয় এবং রোম সংবিধি অনুমোদন করেছে এমন দেশগুলির কাছে দায়বদ্ধ। যে দেশগুলি সংবিধি স্বীকৃতি দেয়নি তাদের মধ্যে রয়েছে রাশিয়া (স্বাক্ষরিত, কিন্তু পরবর্তীতে অনুমোদন করেনি), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (স্বাক্ষরিত, তারপর স্বাক্ষর প্রত্যাহার) এবং চীন (স্বাক্ষর করেনি)। ভারতও ICC কে স্বীকৃতি দেয়নি। পুতিন ২০১৬ সালে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন যাতে বলা হয়েছিল যে রাশিয়া ICCর সদস্য হবে না। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতি অনুসারে, আদালত প্রত্যাশা পূরণ করেনি এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের জন্য সত্যিকারের স্বাধীন সংস্থা হতে ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং ICCর গ্রেফতারি পরোয়ানার কোনো গুরুত্ব রাশিয়ার কাছে আইনিভাবে নেই।

যদিও এটি পুতিনকে অন্যান্য উপায়ে প্রভাবিত করতে পারে, যেমন আন্তর্জাতিকভাবে ভ্রমণ করতে না পারা। আদালতের পরোয়ানার বাহানায় ১২৩টি সদস্য রাষ্ট্রের যেকোনো একটিতে পা রাখলে তাকে এখন হয়ত গ্রেফতার করা হতে পারে।

আক্রান্তের সুরক্ষা, সাক্ষীদের সুরক্ষা এবং তদন্তকে সুরক্ষিত করার জন্য ICC-র গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সাধারণত গোপন থাকে। কিন্তু আদালত বলেছে যে পরোয়ানার অস্তিত্ব, সন্দেহভাজনদের নাম এবং যে অপরাধের জন্য পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তা প্রকাশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তার কারণ হল, বর্তমানে সম্বোধন করা ঘটনাটি ঘটে চলেছে এবং পরোয়ানা সম্পর্কে জনসচেতনতা অপরাধ প্রতিরোধে অবদান রাখতে পারে। সুতরাং রাষ্ট্রপতি পুতিন গ্রেফতার হোক বা না হোক, এই পরোয়ানার যে একটি প্রচার মূলক রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে সেটা আদালতের বয়ানেই স্পষ্ট।

Leave a comment
scroll to top