Close

ভূমিকম্প বিধ্বস্ত সিরিয়ার উপর ইজরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ হত ১৫

রবিবার, ১৯শে ফেব্রুয়ারি, স্থানীয় সময় মাঝরাতে ইজরায়েলি বাহিনী সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করেছে পাঁচ জন কে।

ভূমিকম্প বিধ্বস্ত সিরিয়ার উপর ইজরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ হত ১৫

ছবি সত্ত্ব: মার্টিন বার্নস /ফেসবুক

কয়েকদিন আগেই এক বিরাট ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে সিরিয়ায়। আহত অসংখ্য মানুষ। এখনো উদ্ধারকার্য চলছে ১২ বছর ধরে যুদ্ধবিদ্ধস্ত এই দেশে। এই পরিস্থিতিতে, রবিবার, ১৯শে ফেব্রুয়ারি, স্থানীয় সময় মাঝরাতে ইজরায়েলি বাহিনী সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করেছে ১৫ জন কে। সংবাদ সিরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা সানা’র। ভূমিকম্প বিধ্বস্ত সিরিয়ার উপর ইজরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি বাশার আল-আসাদের প্রশাসন।  

সানা একটি অজ্ঞাতপরিচয় সিরিয়ান আরব সেনার (সা) আধিকারিক কে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, “রবিবার ভোরবেলা ০.২২ মিনিটে, ইজরায়েলি শত্রু অধিকৃত সিরিয়ার গোলানের দিক থেকে ক্ষেপণাস্ত্রের তরঙ্গ নিয়ে একটি বিমান আগ্রাসন চালায়, দামাস্কাস শহর এবং তার আশেপাশের আবাসিক এলাকা সহ কিছু পয়েন্ট লক্ষ্য করে, আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে বাধা দেয় এবং তাদের অধিকাংশই ধ্বংস করেছে।” 

প্রাথমিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই আক্রমণে ইজরায়েল একজন সৈনিক সহ পাঁচজন কে হত্যা করেছে, এবং ১৫ জনের উপর আহত হয়েছেন। পরে জানা যায় যে হত্যা করা হয়েছে ১৫জন কে। সিরিয়ার উপর ইজরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ দামাস্কাস শহরের কিছু অসামরিক আবাসনের ব্যাপক ক্ষতি করেছে ও বিদ্যুৎ সরবাহ ব্যাহত করেছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।   

সিরিয়ার উপর ইজরায়েলের এই আক্রমণ এমন এক সময় নেমে এসেছে যখন প্রভুত প্রতিকুল পরিস্থিতিতে সিরিয়ার উদ্ধারকার্য চলছে এবং পশ্চিমা শক্তিগুলোর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট জঙ্গীদের দখলে থাকা অঞ্চলগুলোয় ত্রাণ পাঠানো ও উদ্ধারকার্য চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এরই মধ্যে কিন্তু সিরিয়ার হোমস প্রদেশে মার্কিন ঘনিষ্ঠ বলে অভিযুক্ত ইসলামী সন্ত্রাসী শক্তি দায়েশ বা ইসলামিক স্টেট আক্রমণ করে হত্যা করেছে কয়েক ডজন নাগরিককে। সিরিয়ার সরকার এই ঘটনার দায় পশ্চিমা শক্তিগুলোর উপর চাপিয়েছে কাউকে সরাসরি অভিযুক্ত না করে।  

সিরিয়ার পররাষ্ট্র ও প্রবাসী মন্ত্রণালয় রবিবার বলেছে, “সিরিয়া আশা করে জাতিসংঘের সচিবালয় এবং নিরাপত্তা পরিষদ ইজরায়েলি আগ্রাসন ও অপরাধের নিন্দা করবে, তাদের প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে, তাদের দায়ী করবে, তাদের অপরাধীদের শাস্তি দেবে এবং নিশ্চিত করবে যে এর যেন পুনরাবৃত্তি না হয়।” 

মন্ত্রণালয়টি জানিয়েছে, “আবাসন, পরিষেবা কেন্দ্র, বিমানবন্দর এবং বন্দর সহ সিরিয়ার বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুগুলির বিরুদ্ধে নিয়ম তান্ত্রিক ইজরায়েলি আক্রমণের প্রেক্ষাপটে এই আগ্রাসনটি হয়েছে, সেই সিরিয়ানদের ভয় দেখানোর জন্যে যারা এখনও ভূমিকম্পের বিপর্যয়কর প্রভাবে ভুগছে এবং এতে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার জন্য কাজ করছে।” 

মন্ত্রণালয়টি আরও জানিয়েছে, “ফিলিস্তিনি ও সিরিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে এই নৃশংস হামলা ও অপরাধের ধারাবাহিকতা এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি সুস্পষ্ট হুমকি এবং সিরিয়ার ভূখণ্ডে ইজরায়েলি আগ্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য জরুরি আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।” 

ভূমিকম্প বিধ্বস্ত সিরিয়া যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে তার ভূমিতে মার্কিন-মদদপুষ্ট ইসলামী জঙ্গীবাহিনী কে প্রতিরোধ করছে ও তাদের পরাজিত করছে তাই পশ্চিমা দুনিয়ার কোনো দেশই সিরিয়ার ভূমিকম্পের পরে ত্রাণ বা অন্যান্য সহায়তা পাঠায়নি। ভূমিকম্পের পরবর্তীকালে উদ্ধারকার্য আর ত্রাণের ক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিক অঙ্ক মিলিয়ে পশ্চিমা দুনিয়া চলায় সিরিয়ার কপালে পশ্চিমা-ঘনিষ্ঠ তুরস্কের মতন সহযোগিতা জোটেনি। তবে এর মধ্যেই কিন্তু ভারত, রাশিয়া, চীন, ইরান সহ নানা দেশ সিরিয়ার সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে।  

ভূমিকম্প বিধ্বস্ত সিরিয়ার উপর ইজরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ নিয়ে পশ্চিমা শক্তিগুলি কোনো জোরালো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। ইজরায়েল এই অঞ্চলে ধারাবাহিক ভাবে সন্ত্রাস চালিয়ে আসলেও এই নিয়ে কোনো রকম পদক্ষেপ নেয়নি জাতি সংঘ। এর আগেও, ২রা জানুয়ারি, রাজধানী দামাস্কাসের দক্ষিণাঞ্চলে ইজরায়েলি আক্রমণে নিহত হন দুই জন আর আহত হন আরও দুই জন। এর ফলে রাজধানীর বিমানবন্দরটি কয়েক ঘন্টার জন্যে বন্ধ করে দিতে হয়।  

Leave a comment
scroll to top