Close

অশান্তির ভোট, দফায় দফায় হিংসা রাজ্যে

চতুর্থ দফার লোকসভা ভোট-এ জায়গায় জায়গায় হিংসার চিত্র ফুটে উঠল বাংলায়। কমিশনের প্রশংসা অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে পরিণত হল

চতুর্থ দফার লোকসভা ভোট-এ জায়গায় জায়গায় হিংসার চিত্র ফুটে উঠল বাংলায়। কমিশনের প্রশংসা অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে পরিণত হল।

প্রথম তিন দফায় ভোট শান্তিপূর্ণ হওয়ায় তৃতীয় দফা নির্বাচন শেষে বাংলায় শান্ত নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী ছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সে গুড়ে বালি। চতুর্থ দফাতেই বাংলার নির্বাচন হল চেনা ঢঙে। বরং তিন দফায় হিংসা না হাওয়ায় যেন চতুর্থ দফায় উপরি হিংসার ছবি রাজ্যে। ভোট শুরু হয়েছে সকাল সাতটায়। কিন্তু এইদিন সকাল ১১টার মধ্যে হাজারের বেশি অভিযোগ জমা পড়ল নির্বাচন কমিশনে। মোট অভিযোগের সংখ্যা ১,০৮৮। তার মধ্যে দলগত ভাবে সিপিএম ৭২টি, কংগ্রেস ৬০টি, বিজেপি ৬টি এবং তৃণমূলের তরফে একটি অভিযোগ করা হয়েছে কমিশনে।

চতুর্থ দফায় নির্বাচন শুরুর আগেই কেতুগ্রামে খুন হলেন তৃণমূল কর্মী। পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামে ভোটের আগের দিন রাতে ওই তৃণমূল কর্মী খুন হন। বোমা মেরে এবং কুপিয়ে তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। খুনের পেছনে এলাকার সিপিএম কর্মীদের হাত আছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। সিপিএম অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দিতে আঙুল তুলেছে। পরে এইদিন দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ‌। এদের মধ্যে একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার বলে জানা গিয়েছে। নির্বাচন চলাকালীন দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছে দুই বর্ধমান জেলা। এইদিন পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরে বিজেপি কর্মীকে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জিতেন্দ্র তিওয়ারি এ বিষয়ে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। জিতেন্দ্র তিওয়ারির অভিযোগ, পাণ্ডবেশ্বরের লস্কর বাঁধ এলাকায় চন্দন দাস নামের ওই বিজেপি কর্মীকে শারীরিক নিগ্রহের পর বুথ থেকে বার করে দিয়েছে তৃণমূল।

এইদিন বর্ধমানের দুর্গাপুর কেন্দ্রের প্রার্থী দিলীপ ঘোষ দফায় দফায় বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন। প্রথমে, মন্তেশ্বরে বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মীরা। কেউ কেউ গাড়ির সামনে শুয়েও পড়েন। তাঁর কনভয়ে কিছু গাড়ির কাচ ভাঙা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পরে আবারও কালনায় বিক্ষোভের মুখে পড়েন দিলীপ। কালনায় দিলীপের কনভয়ে আবার হামলা হয়। ভাঙচুর করা হয় গাড়ির কাঁচ। দিলীপের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটও ছোঁড়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। দিলীপের দুই নিরাপত্তারক্ষী ইটের ঘায়ে জখম হয়েছে বলে খবর। এদিকে আবার দুর্গাপুরের তানসেনে তৃণমূলের পোলিং ক্যাম্পে হামলার অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে। সিপিএমের কার্যালয়েও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। বিজেপি কর্মীদের হামলায় বেশ কয়েক জন তৃণমূল কর্মী জখম হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। বিজেপিকে এর পর তাড়া করে তৃণমূল কর্মীরা।

এদিকে নদীয়ায় নির্বাচন শুরু থেকেই উত্তপ্ত। এইদিন সকালে সিপিএম পরিচালিত নদিয়ার পালিতবেঘিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে কালিগঞ্জ থানা এলাকার সিপিএম প্রধানের আত্মীয়কে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর। আক্রান্তের নাম হাসমুত শেখ। হাসমুতের অভিযোগ, চেয়ার, টেবিল নিয়ে বসতে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং মারধর করা হয়েছে। অন্যদিকে, কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণিতে বিজেপি কর্মীকে মারধরের অভিযোগ। পরে সেই কর্মীদেরই নাকি গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ নিয়ে থানায় গিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী তথা কৃষ্ণনগরের রাজ পরিবারের সদস্য অমৃতা রায়। কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। পুলিশের সঙ্গে তাঁর বচসাও হয়। তেহট্টে আবার তৃণমূল সিপিআইএমের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গিয়েছে এইদিন। অভিযোগ, তৃণমূল কর্মীদের মারে মাথা ফেটেছে সিপিএম কর্মীর। চাপড়াতেও বুথে সিপিআইএম এজেন্টকে বসতে না দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে বাম তৃণমূলের।

নদিয়ার নাকাশিপাড়ায় রবিবার রাত থেকে বোমাবাজির অভিযোগ। রাতভর বোমাবাজির পর সোমবার সকালেও এলাকায় বোম পড়ছে বলে অভিযোগ। বিলকুমারী গ্রাম পঞ্চায়েতের দফাদারপাড়া এলাকায় হজরত মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি সম্প্রতি তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কারণে তাঁর বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। পিছিয়ে নেই বহরমপুরও। বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বুথ দখল ও ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের ‘নীরবতার সুযোগ নিয়ে’ একের পর এক এলাকার বুথ দখল করেছে তৃণমূল। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে কংগ্রেস।

অপর দিকে অনুব্রতহীন বীরভূমেও তুমুল উত্তেজনা ভোটের দিন। বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের সাহাপুরের ২৪৮ নম্বর বুথে বিজেপির বুথ এজেন্ট কে মারধর করার অভিযোগ। সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এলাকায় উত্তেজনা। এছাড়াও, বীরভূমের ইলামবাজারে ভোটারকে ধরে নিয়ে গিয়ে ভোট দেওয়ানোর অভিযোগ স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ওহেদ আলি, নাজিমুদ্দিন নামের তৃণমূল নেতারা ভোটারদের ইভিএমের সামনে নিয়ে যাচ্ছেন, কোন বোতাম টিপতে হবে, তা-ও আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন।

এইদিন পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের কুলটি বিধানসভার লালবাজার এলাকায় ৫৮/৫৯ নম্বর বুথে তৃণমূল এবং বিজেপির বচসায় উত্তেজনা। তৃণমূল সভাপতি বিমান দত্ত দলবল নিয়ে বুথে ঢোকার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। বিজেপি তার প্রতিবাদ করলে গোলমাল শুরু হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যদিও কিছুটা সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছে আসানসোল। এইদিন লোকসভা ভোটের তৃণমূলের ক্যাম্পে যান বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি। সেখানে মিষ্টি-জল খাইয়ে তাঁকে আপ্যায়ন করেছেন তৃণমূল নেতা তথা আসানসোল পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর সুব্রত বিশ্বাস। হাতে হাত রেখে কথাও বলতে দেখা গিয়েছে এই দুইজনকে।
Leave a comment
scroll to top