Close

ইজরায়েলের উপর মার্কিন আশির্বাদ: ম্যাগসেসে ফেরালেন সন্দীপ

ইজরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সাহায্যের প্রতিবাদে ম্যাগসেসে পুরষ্কার ফিরিয়ে দিলেন ভারতীয় সমাজকর্মী সন্দীপ পান্ডে।

ইজরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সাহায্যের প্রতিবাদে ম্যাগসেসে পুরষ্কার ফিরিয়ে দিলেন ভারতীয় সমাজকর্মী সন্দীপ পান্ডে।

গান্ধীবাদ, মানবতা, প্রবাসীদের অর্থ ব্যবহার করে ভারতের দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা প্রদানের জন্য ব়্যামন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশন তাঁকে ম্যাগসেসে পুরষ্কারের জন্য মনোনীত করেছিল। কিন্তু একজন সমাজকর্মী হিসেবে দায়িত্বের কথা মাথায় রেখেই সেই পুরষ্কার ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। যাঁর কথা হচ্ছে, তিনি সোশ্যালিস্ট পার্টি (ইন্ডিয়া)-র বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ পান্ডে।

২০০২ ব়্যামন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশন কর্তৃক সন্দীপকে এমন ‘একজন ভারতীয় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল যিনি প্রবাসীয় অর্থসাহায্যে ভারতের গরীব শিশুদের শিক্ষার বিকাশে গান্ধীর পথ অনুসরণ করেছিলেন।’ তিনি এবং তাঁর সংস্থা আশা ফর এডুকেশন, গত ২২ বছর ধরে ভারতের দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষা বিস্তারের ব্রত মাথায় তুলে নিয়েছিল। ২০০২ সালে ব়্যামন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশন অনুযায়ী, “একজন উদীয়মান নেতৃত্ব হিসেবে ২০০২ ব়্যামন ম্যাগসেসে পুরষ্কার প্রদানের উদ্দেশ্যে ট্রাস্টি বোর্ড তাঁর ভারতের প্রান্তিক দরিদ্রদের রূপান্তরের প্রতি প্রতিশ্রুতির ক্ষমতায়নের উদাহরণকে স্বীকৃতি দেয়।”

সন্দীপ তাঁর বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “যখন আমি পুরষ্কারটি পাই, ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতির দ্বারা পুরষ্কার হস্তান্তরের ঠিক পরের দিন ইরাকে আসন্ন হামলার বিরুদ্ধে মানিলায়, মার্কিন দূতাবাসের সামনৈ বিক্ষোভে আমার অংশগ্রহণ করা নিয়ে একটু ছোট্ট বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল‌। ম্যাগাসেস ফাউন্ডেশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান আমায় এই অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে এই বলে যে এতে সংস্থার মর্যাদাহানি হতে পারে। আমার যুক্তি ছিল, ১৯৯৯ সালে পোখরান থেকে সারনাথ পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে শান্তি মিছিলে অংশগ্রহণ এই পুরস্কার বিতরণের সময় উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থাৎ আমার যুদ্ধ বিরোধী অবস্থান সম্পর্কে সকলে অবগত।”

তিনি আরও বলেন, “ম্যানিলার ইউনিভার্সিটিতে একটি শান্তি সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে হয়েছিল, যা কাকতালীয়ভাবে ৩১শে আগস্ট শেষ হয়েছিল, যেদিন ম্যাগসেসে পুরস্কার হস্তান্তর করা হয়েছিল, মার্কিন দূতাবাসে প্রতিবাদ করার জন্য, কারণ আমাকে সম্মেলনেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ১লা সেপ্টেম্বর প্রতিবাদের পরে, ম্যানিলার একটি সংবাদপত্র একটি সম্পাদকীয়তে আমাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিল যে আমি যদি নিজেকে একজন নৈতিক মানুষ হিসেবে তাদের বিশ্বাস করাতে চাই তবে আমি যেন ভারতে ফিরে যাওয়ার আগে মার্কিন দূতাবাসে পুরস্কারটি ফিরিয়ে দিয়ে যাই। এই চ্যালেঞ্জ আমার সিদ্ধান্তকে আমার জন্য সহজ করে দেয়। …আমি বিমানবন্দর থেকেই পুরস্কারের নগদ অংশ ফেরত দিয়েছিলাম যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ড ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে এসেছিল কিন্তু ম্যাগসেসে ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসনের কাছে একটি চিঠিতে আমি বলেছিলাম যে আপাতত আমি পুরস্কারটি নিজের কাছে রাখছি কারণ এটি একজন প্রাক্তন জনপ্রিয় ব্যক্তি, ফিলপাইনের রাষ্ট্রপতির নামাঙ্কিত ছিল এবং আমার দেশে জয়প্রকাশ নারায়ণ, বিনোবা ভাবে ও বাবা আমতে-এর মতো ব্যক্তিত্বদের দেওয়া হয়েছিল, যাদের আমি আমার আদর্শ বলে মনে করি। আমি সেই চিঠিতে উল্লেখ করেছিলাম যে ম্যাগসেসে ফাউন্ডেশন যদি কখনও মনে করে যে আমি তাদের খ্যাতির খুব বেশি ক্ষতি করছি, আমিও পুরস্কারটি ফিরিয়ে দিতে পেরে খুশি হব।… আমি মনে করি আজ সেই দিন এসেছে।”

বর্তমানে এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের কারণ হিসেবে তিনি বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন, “ম্যাগসেসে পুরস্কার প্রাথমিকভাবে রকফেলার ফাউন্ডেশন দ্বারা অর্থায়নকৃত এবং যে বিভাগে আমি পুরস্কারটি পেয়েছি তা ফোর্ড ফাউন্ডেশন দ্বারা অর্থায়নকৃত, উভয় আমেরিকান ফাউন্ডেশন। ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বিরুদ্ধে বর্তমান আক্রমণে ইজরায়েলকে নির্লজ্জভাবে সমর্থন করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে, যার মধ্যে ২১,৫০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র এখনও ইজরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছে, তাই পুরস্কারটি রাখা আমার পক্ষে অসহনীয় হয়ে উঠেছে। আমি, তাই, অবশেষে পুরস্কারটিও ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।”

এরই সাথে তিনি সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত ম্যানুফ্যাকচারিং এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডুয়াল এমএস ডিগ্রীগুলি এবং বার্কলেতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পিএইচ.ডি. ডিগ্রি ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “প্রসঙ্গত, সিনিয়র প্রেসিডেন্ট বুশ কর্তৃক ইরাকের বিরুদ্ধে মার্কিন যুদ্ধের বিরুদ্ধে ১৯৯১ সালে বার্কলে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলাকালীন প্রতিরক্ষা প্রকল্পে মার্কিন একাডেমিক প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে তাদের প্রকৌশল ও বিজ্ঞান বিভাগের জড়িত থাকার বিষয়ে আমাকে সচেতন করা হয়েছিল।…বৈদ্যুতিক প্রকৌশলের একজন অধ্যাপক প্রভিন ভারাইয়া, যার গবেষণার এলাকা, কন্ট্রোল সিস্টেমস, আমার মতোই ছিল এবং যিনি বিরোধী বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী ছিলেন, তিনি আমাকে উপলব্ধি করিয়েছিলেন যে আমিও অজান্তেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধযন্ত্রের অংশ ছিলাম। এইভাবে আমার গবেষণার ক্ষেত্র সম্পর্কে আমার মোহভঙ্গ শুরু হয় এবং আমি ১৯৯২ সালে কানপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পড়া শুরু করার পরে আমি আমার গবেষণার ক্ষেত্র পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।” সন্দীপ স্পষ্ট জানিয়েছেন যে তিনি আমেরিকান জনগণ এবং দেশের বিরুদ্ধে নন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি এমন একটি দেশ বলে মনে করেন যা “মানবাধিকাকে সবচেয়ে সম্মান করে এবং সর্বোত্তম মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রদান করে।”

ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতার ছাত্রী ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, যিনি শ্রম, কৃষি ও রাজনীতি নিয়ে রিপোর্টিং করেন।

Leave a comment
scroll to top