২০১৫ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের দুঃস্বপ্ন এখনও মিলিয়ে যায়নি। তার মধ্যেই আবার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো নেপাল। কম্পন অনুভূত হল সমগ্র উত্তর ভারত জুড়ে। শুক্রবার রাতের এই শক্তিশালী ৬.৪ মাত্রার ভূমিকম্পে নেপালে অন্তত ৩৭ জন মারা গেছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। একই সময় কম্পন অনুভূত হয়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতেও তবে সেখানে আপতত হতাহতের কোনও খবর জানা যায়নি বলেই প্রশাসন সূত্রে খবর।
ভারতের জাতীয় ভূতাত্ত্বিক কেন্দ্র (এনসিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল নেপালের ১০ কিলোমিটার গভীরে। ভারতে দিল্লি এবং জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের বাসিন্দারা শক্তিশালী কম্পন অনুভব করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে। গত এক মাসের মধ্যে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো নেপালে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। প্রাথমিকভাবে যে তথ্য মিলেছে, তাতে দিল্লি (দিল্লি ও ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিওন), উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড-সহ ভারতের একাংশেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। কলকাতাতেও একই সময় কম্পন অনুভূত হয়েছে, বিভিন্ন আবাসন কেঁপে উঠেছে। তবে তা ছিল মৃদু কম্পন।
ভারতের জাতীয় ভূতাত্ত্বিক কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, শুক্রবার রাত ১১টা ৩২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে নেপালে ভূমিকম্প হয়েছে। যে এলাকা নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডু থেকে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে ৩৩১ কিমি দূরে অবস্থিত। আর ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পে উৎসস্থল ছিল। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬.৪। অর্থাৎ তীব্রতার নিরিখে সেই ভূমিকম্প অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। যেখানে ভূমিকম্প হয়েছে, তা ভারতের সীমান্ত থেকে খুব একটা দূরে অবস্থিত নয়। ফলে সমগ্র উত্তর ভারত জুড়েই যথেষ্ট জোরালো কম্পন অনুভূত হয়েছে।
এর ঠিক এক মাস আগে, ৩রা অক্টোবর দুপুরেও জোরালো ভূমিকম্প হয়েছিল পাহাড় ঘেরা এই দেশে। সেইসময় ভারতের জাতীয় ভূতাত্ত্বিক কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছিল, দুপুর তিনটে নাগাদ নেপালে ভূমিকম্প হয়েছে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬.২। সেইসময়ও দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের মতো বিভিন্ন জায়গায় কম্পন অনুভূত হয়েছিল। এর পর গত ১৫ই অক্টোবর, দিল্লি এবং রাজধানী অঞ্চলে শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হয়েছিল। দিল্লি এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্পের আনুমানিক মাত্রা ছিল ৩.১, যা বিকেল ৪:০৮ এ ঘটেছিল। জাতীয় ভূতাত্ত্বিক কেন্দ্রের মতে, ভূমিকম্পটি হরিয়ানার ফরিদাবাদে আঘাত হেনেছিল, যার গভীরতা ১০ কিলোমিটার ছিল। সেই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ফরিদাবাদের নয় কিলোমিটার পূর্বে এবং দিল্লির ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে।
গত ২০১৫ সালে ৭.৮-মাত্রার ভূমিকম্প নেপালে আঘাত হানে যার ফলে প্রায় ৯০০০ মানুষ মারা গিয়েছিল এবং প্রায় দশ লাখ বেশি ঘরবাড়ি এক নিমেষে ধ্বংস হয়েছিল। তারপরে দশ বছরের মধ্যেই পুনরায় বড় মাত্রার কম্পনে যথারীতি আতঙ্কিত মানুষ। ভারতের উত্তরে হিমালয় পর্বতমালায় সবচেয়ে উচ্চতম শ্রেণী নেপাল জুড়ে অবস্থিত। ক্রমাগত বর্দ্ধনশীল এই পার্বত্য অঞ্চল এমনিতেই ভূমিকম্পপ্রবণ। তবে এখনও পর্যন্ত স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এই ভূমিকম্পের জেরে সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য এসে পৌঁছায়নি।