Close

AISF দেশ বিরোধী! জম্মু-কাশ্মীরে রাজ্য সম্মেলনে বাঁধ সাধলো প্রশাসন-আধাসেনা

কাশ্মীরে এআইএসএফ-এর রাজ্য সম্মেলনে প্রশাসনের বাধা। দেশের স্বাধীনতায় অসীম ভূমিকা যাদের তারাই নাকি দেশ বিরোধী!

কাশ্মীরে এআইএসএফ-এর রাজ্য সম্মেলনে প্রশাসনের বাধা। দেশের স্বাধীনতায় অসীম ভূমিকা যাদের তারাই নাকি দেশ বিরোধী!

বাম ছাত্র সংগঠনের রাজ্য সম্মেলন করতে বাধা জম্মু-কাশ্মীরে। গত ১৮ই সেপ্টেম্বর জম্মু-কাশ্মীরে ছাত্র সংগঠন নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশন (AISF)-এর রাজ্য সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সংগঠনের কর্মীদের সূত্রে খবর আধাসামরিক বাহিনী নামিয়ে বাম ছাত্র সম্মেলন ভেস্তে দিলো জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি প্রশাসন।

কাশ্মীরে বন্ধ AISF-এর সম্মেলন; ছবিসূত্র শুভম ব্যানার্জি।
কাশ্মীরে বন্ধ AISF-এর সম্মেলন; ছবিসূত্র শুভম ব্যানার্জি।


ছাত্র সংগঠনের সম্মেলন জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট করেন এআইএসএফ এর সর্বভারতীয় সভাপতি শুভম ব্যানার্জি। নিজের পোস্টে শুভম লেখেন, “দিন পনেরো আগেই ঠিক হয়ে গেছিলো যে আজকের দিনে অর্থাৎ ১৮ই সেপ্টেম্বর AISF এর জম্মু কাশ্মীর রাজ্য সম্মেলন হবে উধমপুর শহরে। প্রায় ৭ দিন আগেই হল বুকিং হয়ে গেছে। BJP – RSS এর শক্তিশালী ঘাঁটি উধমপুরে এর আগে বামপন্থীদের কোনও রাজ্যস্তরীয় সম্মেলন হয় নি। তাই আমাদের উধমপুরের কমরেডরা খুব উৎসাহের সাথে বিগত ১০-১২ দিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে।”

ইস্ট পোস্ট বাংলাকে শুভম জানিয়েছেন আগামী সর্বভারতীয় সম্মেলনের কথা মাথায় রেখে পরপর রাজ্য সম্মেলনগুলি অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে। কিন্তু এভাবে একটি রাজ্য সম্মেলন জোরপূর্বক বন্ধ করে দেয়া হবে এমনটা আশা করেননি সংগঠনের কেউই। AISF কর্মীরা অভিযোগ করছেন বিজেপি আরএসএস চালিত সরকারের দিকে। বক্তব্য প্রশাসন এভাবে কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন আদতে গেরুয়া শিবিরের ‘তাবেদার’ হয়েই কাজ করছে বলে তাদের মত।

শুভম তার পোস্টে আরো লিখেছেন, “যদিও গতকাল সন্ধ্যায় উধমপুর পৌঁছানোর সময় থেকেই বুঝতে পারি পরিস্থিতি বেশ থমথমে। আমি বছর দুয়েক আগেও জম্মু তে, শ্রীনগরে এমন কি সোফিয়ানে পর্যন্ত মিটিং করে গেছি, কিন্তু এখানে কালকের পরিস্থিতি একটু অন্যরকম ই ছিল। কমরেড রা জানালো সাতদিন আগে বুক করে রাখা সত্বেও গতকাল হল বুকিং ক্যানসেল করে দেওয়া হয়েছে। তাই আবার অ্যাডভান্স দিয়ে নতুন হল বুক করতে হয়েছে। এদিকে উধমপুরের SHO (আই সি) আমাদের ছাত্র নেতা সুরজিৎ কে মেসেজে লিখেছেন যে AISF কে তিনি উধমপুর থানার অন্তর্গত এলাকায় কোনও প্রোগ্রাম করতে দেবেন না।”

AISF-কে রঘুবীর সিং-এর হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা
AISF-কে রঘুবীর সিং-এর হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা


AISF কর্মীদের বক্তব্য এর পরেই একের পর এক সভাঘর বুক করা হলেও কর্তৃপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করে প্রত্যেকটি বুকিং ক্যানসেল করে দেয় প্রশাসন। এমনকি শেষ মুহূর্তে একটি ম্যারেজ হল বুক করা হলেও ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত হওয়ার পর তাদের এক প্রকার ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় সেইখানে আগে থাকতে উপস্থিত পুলিশ। শুভমের তরফ থেকে জানা গিয়েছে ডেইলিগেটরা উপস্থিত হওয়ার আগেই হলের সামনে ৭০ থেকে ৮০ জন পুলিশ উপস্থিত ছিল।

এর পরবর্তী ঘটনার বিবরণ হিসেবে শুভম তার পোস্টে লিখেছেন, “আমরা বললাম যে ইতিমধ্যে ২৬ টি রাজ্যে AISF এর সম্মেলন হয়েছে এবং জম্মু কাশ্মীরেও হবে। পুলিশ আধিকারিক রা জানালো কোনও হল মালিক ই AISF কে হল দেবে না, তাই সম্মেলন করাও যাবে না। আমরা সত্যিই কোনও মিটিং হল পাওয়া সম্ভব নয় বুঝে ঐ হলের সামনের ফাঁকা জায়গা তেই মিটিং শুরু করে দিলাম। ততক্ষনে RSS এর প্রায় ৫০-৬০ জন এসে পুলিশের সাথেই দাড়িয়ে AISF মুর্দাবাদ, উধমপুরের মাটি তে দেশবিরোধীদের কোনও স্থান নেই ইত্যাদি স্লোগান দিতে শুরু করে। পুলিশ যদিও ওদের সাথে বেশ Co-operate ই করে।…এর পরেই দেখলাম এক ভ্যান CRPF এসে হাতে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র (সম্ভবত AK-47 ই) নিয়ে আমাদের ঘিরে পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। আমাদের বিরুদ্ধে পুরোদমে তখন RSS এর জমায়েত থেকে স্লোগান উঠছে “দেশ কে গদ্দারো কো, গোলি মারো সালো কো”…”

প্রসঙ্গত, AISF হল ভারতবর্ষে প্রথম সর্বভারতীয় ছাত্র সংগঠন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই সংগঠনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু। এক সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীও এই সংগঠনের সাথেই যুক্ত ছিলেন। আজাদ হিন্দ বাহিনীর মুক্তির দাবিতে যে আন্দোলনে দুশো ছাত্রের প্রাণহানি ঘটে, সেটিও AISF-ই সংগঠিত করেছিল। পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইউনিয়ন করার অধিকার নিয়ে আন্দোলন করে AISF। বর্তমানে সে অধিকার প্রাপ্তির ভাগীদার সর্বপ্রথম তারাই। ভারতবর্ষে ১৯৪৭ পূর্ব সময় থেকে রাজনৈতিক কার্যকলাপের ক্ষেত্রে দেশের বুকে এহানে গুরুত্ব যারা অর্জন করেছে; স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তরসূরী সেই ছাত্র সংগঠনের অদৃষ্টেই জুটলো দেশবিরোধিতার তকমা।

এক্ষেত্রে দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান এবং প্রশাসনের এখতিয়ার থেকে বর্তমান কেন্দ্রীয় শাসকদল কর্মীদের ইতিহাস চেতনা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে বর্তমান কেন্দ্রীয় শাসকদলের বিরুদ্ধ মত গ্রহণকরার সহনশীলতা নিয়েও। যে সহনশীলতাই আদতে গণতন্ত্রের মান নির্ণয় করে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঠিক কোন আইনী ভিত্তিতে প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি জানার জন্য, কাশ্মীরে উধমপুর থানার SHO(IC) রঘুবীর সিং-এর সাথে ইস্ট পোস্ট বাংলার তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি ফোন ধরেন না এবং পরবর্তীতে ফোন ধরে সংবাদ মাধ্যম পরিচয়টি শোনার পর একতরফাভাবে ফোন কেটে দেন।

লেখক

  • ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী

    ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতার ছাত্রী ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, যিনি শ্রম, কৃষি ও রাজনীতি নিয়ে রিপোর্টিং করেন।

    View all posts

ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতার ছাত্রী ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, যিনি শ্রম, কৃষি ও রাজনীতি নিয়ে রিপোর্টিং করেন।

Leave a comment
scroll to top