Close

হেড স্কার্ফ বিতর্কে মধ্যপ্রদেশে স্কুল-এর অধ্যক্ষ গ্রেফতার

অমুসলিম ছাত্রীদের জোরপূর্বক হিজাব পরানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার মধ্যপ্রদেশের গঙ্গা যমুনা হাই স্কুল-এর অধ্যক্ষ। আইনজীবীর বক্তব্য এটি মিথ্যা মামলা।

গত মাসের শেষের দিকে, দশম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষায় স্কুল-এর সাফল্য উদযাপন করার জন্য একটি পোস্টার স্কুল প্রাঙ্গনের বাইরে লাগানো হয়েছিল, যেখানে অমুসলিম ছাত্রদের মাথার স্কার্ফ পরা ছিল বলে জানা যাচ্ছে ৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডানপন্থী ও উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলি প্রতিবাদ করা শুরু করে এই অভিযোগে যে স্কুল টি অমুসলিম ছাত্রীদের ধর্মান্তরিতকরণ করছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল মধ্যপ্রদেশের দামোহ জেলার গঙ্গা যমুনা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির অন্য দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে।


গত ৩১শে মে, মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন, এবং ২রা জুন, শিক্ষা বিভাগ অপর্যাপ্ত পরিকাঠামোর কথা উল্লেখ করে বিদ্যালয়টির স্বীকৃতি তুলে নেয়। ২রা জুন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান , উর্দু কবি-দার্শনিক ইকবালের নাম উল্লেখ করে বলেন, যে স্কুল প্রশাসন “এই স্কুল এমন একজন ব্যক্তির কবিতা শেখাচ্ছে যে দেশ ভাগের কথা বলেছিল” এবং সতর্ক করে দিয়েছিল যে “মধ্যপ্রদেশে এই ধরনের কাজ আমরা বরদাস্ত করবো না।”


এই স্কুল ২০১০ সালে গঙ্গা যমুনা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, এটি শহরের ফুটেরা ওয়ার্ডের একমাত্র ইংরেজি-মাধ্যম স্কুল, যার থেকে শ্রমিক-শ্রেণির একটি বড় অংশের মানুষ যেমন, কৃষি শ্রমিক, বিড়ি প্রস্তুতকারক এবং ঠিকা শ্রমিকের পরিবার পরিসেবা গ্রহণ করে।

বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিও গঠন করেছে মধ্যপ্রদেশ রাজ্য সরকার বলে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই পুলিশ গ্রেপ্তারকৃতদের স্কুলের অধ্যক্ষ আফশা শেখ; গণিতের শিক্ষক আনাস আতাহার এবং নিরাপত্তারক্ষী রুস্তম আলী বলে শনাক্ত করেছে। তাদের স্থানীয় আদালতে হাজির করে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

দামোহের পুলিশ সুপার রাকেশ সিং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন বলেন , “প্রধানত স্কুল ছাত্র এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত ছয়-সাতজন সাক্ষীর বক্তব্যের ভিত্তিতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে”। ৭ই জুন স্কুল পরিচালনা কমিটির ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। “অভিযান চালানোর পর তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ মামলায় অন্য আসামিরা পলাতক থাকায় আমরা জেলায় অভিযান চালাচ্ছি।” বলছেন রাকেশ সিং।


যদিও সূত্রের খবর, অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্যদেরও এই মামলায় টানা হচ্ছে এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। প্রাথমিকভাবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইপিসি ধারা ২৯৫ (কোনও শ্রেণীর ব্যক্তির দ্বারা পবিত্র হিসাবে রক্ষিত যে কোনও বস্তুকে ক্ষতি করা বা অপবিত্র করা) এবং ৫০৬ (অপরাধমূলক ভয় দেখানো) এবং সেইসাথে জুভেনাইল জাস্টিস (শিশু সুরক্ষা) আইনের অধীনে মামলা করা হয়েছিল।


এই বিষয়ে অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলছেন মিথ্যা অভিযোগে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, “তাঁদের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হয়েছিল কিন্তু সেখানে পুলিশ আর বাড়তি তদন্ত চায়নি। পুলিশ তাদের কেস ডায়েরি আদালতে পেশ করেছে। আমরা আদালতে আমাদের মামলা প্রমাণ করব।”

স্কুল প্রশাসন এর আগে অভিযোগগুলি খারিজ করে দিয়েছিল এবং বলেছিল যে হেড স্কার্ফটি তাদের ইউনিফর্মের অংশ ছিল, ষষ্ঠ শ্রেণির পরে চালু হয়েছিল। স্কুল প্রশাসনও স্পষ্ট করেছে যে ছাত্রীদের এটি পরতে বাধ্য করা হয়নি।

Leave a comment
scroll to top