আজ, ২৩ ফেব্রুয়ারি, দিল্লী থেকে রায়পুরে ইন্ডিগোর একটি বিমানে যাওয়ার কথা ছিল কংগ্রেসের এক প্রতিনিধিদলের। রায়পুরে শুক্রবার থেকে অনুষ্ঠিত হতে চলা কংগ্রেসের পঁচাশিতম প্লেনারি অধিবেশনে যোগ দিতে চলা ঐ প্রতিনিধিদলে খেরার সাথে সুপ্রিয়া শ্রীনেত, রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা, কে.সি বেনুগোপাল প্রমুখ কংগ্রেস নেতারাও ছিলেন। প্লেনে ওঠার পর খেরাকে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।
এই প্রসঙ্গে ইন্ডিগোর একজন কর্তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান যে তাদের কাছে আদেশ ছিল খেরাকে যেন বিমানে ওঠার অনুমতি না দেওয়া হয় কারন তার বিরুদ্ধে মামলা আছে।
খেরা নিজেও জানিয়েছেন যে তাকে কেন বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় তা তিনি জানেন না। তার বক্তব্য, “ব্যাগ পরীক্ষার নাম করে আমাকে বিমান থেকে নেমে যেতে বলা হয়, পরে আমাকে জানানো হয় দিল্লী পুলিশের ডিসিপি তার জন্য টারম্যাকে অপেক্ষা করছেন”। এরপর খেরাকে গ্রেফতার করে আসাম পুলিশ ও তাকে হেফাজতে নিয়ে যায়।
খেরার গ্রেফতারের পর আসাম পুলিশ জানায় যে আসামের হাফলং পুলিশ স্টেশনে খেরার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে ও তারা দিল্লী পুলিশের সাথে খেরার সম্ভাব্য গ্রেফতারি নিয়ে আলোচনাও করেছে।
কংগ্রেস এই ঘটনাকে সমালোচনা করে এটিকে একনায়কতন্ত্রের সাথে তুলনা করতে শুরু করেছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনেত বলেন যে বিজেপি সরকার ভয় পেয়ে এই অতি তৎপরতা দেখাচ্ছে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলোত খেরার গ্রেফতারিকে জরুরি অবস্থার সাথে তুলনা করে বলেন যে এখন দেশে অলিখিত জরুরী অবস্থা চলছে যা দেশকে গোটা বিশ্বের কাছে বদনাম করছে। তিনি আরও জানান যে বিজেপির অহঙ্কার খুব শীঘ্রই সাধারন জনগণ চূর্ণ করতে চলেছে।
কংগ্রেস ছত্তিশগড়ে সরকারী অফিসে ইডি হানা নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারকে বিদ্ধ করেছে। এর আগে বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি,কয়লা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ছত্তিশগড়ের সরকারী অফিসে ইডি হানা দেয়। কংগ্রেসের বক্তব্য সেখানে কিছু প্রমাণ না পাওয়ায় পবন খেরাকে গ্রেফতার করানোর মতো কাজ করছে বিজেপি সরকার।
সম্প্রতি একটি সাংবাদিক সম্মেলনে পবন খেরা প্রধানমন্ত্রীর নাম বলার সময় নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর বদলে নরেন্দ্র “গৌতমদাস” মোদী বলেন। খেরা স্পষ্টতই হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট নিয়ে সরকারি গড়িমসি ও আদানি-মোদী সমঝোতা নিয়ে বলতে গিয়ে তীর ছুঁড়েছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার পরেই বিজেপি খেরার গ্রেফতারের দাবী তুলে সরব হয় ও খেরার বিরুদ্ধে বিজেপি নেতারা মামলা করে।
আজ খেরার গ্রেফতারির পর কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টে যায় ও কোর্ট খেরাকে স্বস্তি দিয়ে দিল্লী হাইকোর্টকে নির্দেশ দেয় অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়ার জন্য।
কংগ্রেস ছাড়াও সমাজবাদী পার্টি ও উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা খেরার গ্রেফতারিকে তীব্র সমালোচনা করে। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেছেন, “শাসক পার্টির ভারতের সংবিধান ও গণতন্ত্রের উপর কোনো আস্থাই নেই”। অপরদিকে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত জানান, “কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী পক্ষকে গলা টিপে মারতে চাইছে। চব্বিশ ঘন্টা আগেই ছত্তিশগড়ের সরকারী অফিস ও মুখ্যমন্ত্রীর সহযোগীদের অফিসে ইডি ও সিবিআই এর হানা, এবং আজ পবন খেরার গ্রেফতারি এটাই প্রমাণ করে”।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে খেরার গ্রেফতারি বিজেপি বিরোধী পক্ষকে বিজেপির একনায়কতন্ত্রকে অভিযোগ করে একটি সাধারন মঞ্চে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। এরপর বিরোধীরা এই ব্যাপারটি থেকে রাজনৈতিক লাভ তুলতে পারবে কীনা সেটা সময়ই বলবে।