গত ১১ই সেপ্টেম্বর মন্দারমণির সৈকতে উদ্ধার হয়েছিল এক তরুণীর অর্ধনগ্ন মৃতদেহ। জানা যায় পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ার রানাঘাটের বাসিন্দা ওই তরুণী। খুনের ঘটনা নিয়ে তৎপর পূর্ব মেদিনীপুর পুলিশ ৯ দিনেই করে ফেলল খুনের কিনারা। গ্রেফতার অভিযুক্ত বিজেপির সাথে যুক্ত। খুন এবং খুনের পরিকল্পনা ও খুনের সাহায্য করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন মন্দারমণির একটি হোটেলের কর্মীও। ঘটনার সূত্র ধরে মৃতার পরিবারের তরফ থেকছ জানা গিয়েছে জানা গিয়েছে পাঁচ বছর আগে পঞ্চায়েত ভোটের সময় একটি রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে পড়ে দাদার শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন ধৃত যুবক। সেখানে দাদার শ্যালিকার সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। গত কয়েক মাস ধরে বিয়ের জন্য চাপও দিচ্ছিলেন প্রেমিকা ও তাঁর পরিবার। সেই নিয়েই চলছিল গণ্ডগোল।
এদিকে সম্প্রতি অন্য একটি প্রেমের সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েছিলেন ধৃত যুবক। সম্পরৃকের টানাপোড়েনের জেরেই প্রেমিকাকে খুন করা হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত সেই যুবক ও তাঁর এক বন্ধুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দু’জনকেই বৃহস্পতিবার কাঁথি আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁদের ১২ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্দেহ এড়াতেই খুনের পরের দিনই প্রেমিকার বাড়িতে গিয়েছিলেন ওই যুবক। সেখানে পরিবারের সবার সামনে কান্নাকাটিও করেন বলে মৃতার পরিবারের দাবি। পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যদের মনে একাধিক প্রশ্ন উঠতে থাকায় সেখান থেকে পালিয়ে গা-ঢাকা দেয় ওই যুবক। অভিযুক্ত যুবকের গ্রেফতারির পর মৃতার মা সংবাদমাধ্যমের কাছে ধৃত যুবকের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। মৃতার মায়ের বক্তব্য, “দুর্দিনে যাকে আশ্রয় দিলাম, সেই আমার মেয়ের খুন করল! ওর যেন ফাঁসি হয়।”
গত ১১ই সেপ্টেম্বর মন্দারমণির সমুদ্রসৈকতের কাছ তরুণীর দেহ উদ্ধার হওয়ার পর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহ ময়নাতদন্তে পাঠায় মন্দারমণি কোস্টাল থানা। তদন্তের সূত্র ধরে জানা যায়, মৃতা নদিয়ার বাসিন্দা। নদিয়ার পুলিশের থেকে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ওই তরুণী গত ৮ই সেপ্টেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবারের লোকেরা এসে দেহটি শনাক্ত করেন। এর পরেই অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত নামে পুলিশ। তার ন’দিনের মাথায় গ্রেফতার হলেন মূল অভিযুক্ত। যিনি সম্পর্কে ওই তরুণীর দিদির দেওর। খুনের পরিকল্পনা ও খুনের সাহায্য করার অভিযোগে গ্রেফতার মন্দারমণির হোটেলের কর্মী ও মূল অভিযুক্ত দু’জনেই দীর্ঘ দিনের বন্ধু বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
মৃতার পরিবারের থেকে তদন্তকারীরা জেনেছেন, অভিযুক্ত যুবক রাজনৈতিক দল বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের সময় একটি রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে পড়ার পর টানা সাত মাস তরুণীর বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন ওই ব্যক্তি। সেখানেই দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রাথমিক ভাবে তরুণীর মা এবং মামি এই সম্পর্কে রাজি না হলেও পরে যুবকের আচরণে তাঁরাও মুগ্ধ হন। এবং তার পর এই সম্পর্ক নিয়ে আর কেউ আপত্তি তোলেননি। তদন্তকারীদের আরও একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তরুণীর সঙ্গে শেষ বার ফোনে কথা হয়েছিল মূল অভিযুক্তেরই। সেই সূত্রেই সন্দেহের তালিকায় প্রথম থেকেই ছিলেন ওই যুবক। ঘটনার কয়েক দিন পর থেকেই তরুণী নিখোঁজ হওয়ায় সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়।
তদন্তের মাধ্যমে পুলিশ জানতে পারে, প্রায় বছর চারেক ধরে কলকাতায় অ্যাপ ক্যাব চালাচ্ছিলেন যুবক। তার মধ্যে প্রায় তিন বছর ধরে দমদমে একটি ভাড়াবাড়িতে ভাড়া থাকতেন। এদিকে প্রতি শুক্রবার বিউটি পার্লারে কাজ শেখার নাম করে প্রেমিকের সেই দমদমের ভাড়াবাড়িতেই যেতেন তরুণী। যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, দু’জনের মধ্যে দীর্ঘদিনের শারীরিক সম্পর্কও ছিল। কিন্তু গত মাস ছয় যাবৎ অন্য একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন যুবক। এদিকে তরুণী ও তার পরিবার বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া শুরু করেন। এই টানাপড়েনে পড়েই প্রেমিকাকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন যুবক। পুলিশ সূত্রে খবর, খুনের পর প্রমাণ লোপাটের যাবতীয় পরিকল্পনা ছিল যুবকের আর এক বন্ধুর। মন্দারমণির ওই সৈকত এলাকা সেই বন্ধুর হাতের তালুর মতো চেনা। তাই দেহ ফেলার জন্য জনবসতিহীন নিস্তব্ধ এলাকা বেছে নিতে সমস্যা হয়নি। যুবকের ওই বন্ধুর খোঁজে এখনও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুরের ডিএসপি রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেছেন, “প্রথম থেকেই সন্দেহের তালিকায় ছিল ওই যুবক। দমদম থেকেই তাকে ও তার এক বন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও এক সন্দেহভাজনের খোঁজ চলছে। ধৃত দু’জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।”