যশোর রোড এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় রাস্তার ধারে শতাব্দীপ্রাচীন গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে আন্দোলন চলছে প্রায় এক দশক ধরে। মাঝখানে কয়েকবছর এই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে এলেও চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে যশোর রোড সম্প্রসারণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট ৩০৫টি শতাব্দী প্রাচীন গাছ কাটার রায় দিলে এই আন্দোলন আবার চাগাড় দিয়ে ওঠে। কিন্তু আজ যশোর রোড সংলগ্ন বারাসাত-বারাকপুর রোডে গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে বচসায় জড়িয়েছেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু কেন? আন্দলোনকারীরা ইস্ট পোস্টকে জানিয়েছেন যে আজ যে গাছগুলো কাটা হচ্ছিল তা কার্যত বেআইনী।
কেন গাছ কাটা নিয়ে বচসা? ঘটনাটা কী ঘটেছে?
এই বিষয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে যোগাযোগ করেছে ইস্ট পোস্ট বাংলা। গাছ আন্দোলনকারী অনির্বান দাস ইস্ট পোস্টকে জনিয়েছে, “খুব চালাকি করেই কার্যত মধ্য রাত্রে কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ। কিছু ক্ষেত্রে আমরা সকাল আট’টার সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েও দেখেছি গাছ কাটা হয়ে গিয়েছে। এবং ছোটোখাটো গাছ নয় বরং শতাব্দী প্রাচীন বড়সড় গাছ। এই গাছগুলোর কাঠের দামও যথেষ্ট বেশি, স্বভাবতই এই কাঠ কোথায়, কারা বিক্রি করবে তা বঝতে খুব একটা অসুবিধা হয় না।” আজকের ঘটনা সম্পর্কে অনির্বাণ আমাদের জানিয়েছে, “সকাল দশটা নাগাদ আমাদের কাছে খবর আসে যে টালিখোলা মোড়ে বড় বড় দুটো গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এটা শোনামাত্রই আমাদের প্রতিনিধিরা সেখানে পৌঁছে যায়। তবে আমরা যতদূর জানি এই রাস্তা সংস্কার বা সম্প্রসারণের কোনও পরিকল্পনা আপাতত নেই তাই ঠিক কী কারণে এই গাছ কাটা হচ্ছে এই নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।”
কিন্তু এই নিয়ে সমস্যা হল কেন? নেহা চক্রবর্তী নামক একজন আন্দোলনকারীর সাথে কথা হয়েছে ইস্ট পোস্ট বাংলার। ঘটনাস্থল থেকে নেহা ইস্ট পোস্ট বাংলাকে জানিয়েছেন, “বারাসাত-বারাকপুর রোড পিডাব্লিউডি-এর অন্তর্গত, কিন্তু আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি যে গাছ কাটার পারমিশন দিয়েছেন এলাকার কাউন্সিলর। কাউন্সিলরের এই বিষয়ে কোনও এক্তিয়ার নেই।” নেহা আরও বলেছেন, “বারাসাত-বারাকপুর রোড যেহেতু পিডাব্লিউডি-এর আওতাভুক্ত তাই পিডাব্লিউডি পারমিশন না দিলে একটা গাছও সেখানে কাটা যাবে না, সে মরা গাছও যদি হয়। এছাড়াও তিনটে গাছ কাটার পারমিশন দেওয়া হয়েছে কিন্তু নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি কোন গাছগুলো কাটা হবে। আমরা পারমিশন লেটারের কপি চাইলে আমাদের দেওয়া হয়নি স্রেফ দেখানো হয়েছে।”
“যারা গাছগুলো কাটতে এসেছিলেন তাদের কথার অসঙ্গতি ধরতে পেরে আমরা থানায় খবর দিই। কিন্তু পুলিশ এসে আমাদের উপরেই চোটপাট করে এবং বলে যে ‘কালকে পৌরসভায় আসুন সেখান থেকে পারমিশন লেটার নিয়ে নেবেন’।…এর আগে এলাকাবাসীর তরফ থেকে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল যে, প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটছে তাই মড়া গাছগুলো যেন কেটে ফেলা হয়। এতে আমাদেরও সমস্যা নেই, কিন্তু সবকিছুর তো একটা প্রসিডিওর আছে। এই কাজ করতে হলে তো পিডাব্লিউডি-র পারমিশন লেটার লাগবে।” নেহা আরও সংযোজন করেছেন।
এই মর্মে বারাসাত পিডাব্লিউডি-এর এক্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কে ফোন করা হয় ইস্ট পোস্ট বাংলার তরফ থেকে। কিন্তু তার নম্বরটি উপলব্ধ নেই বলে জানা যায়। বারাসাত থানায় ইস্ট পোস্ট বাংলার তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলে সেইখান থেকে জানানো হয় যে ডিউটি অফিসার বদলেছে তাই ইনফর্মেশন দেওয়া যাবে না। এই বিষয়ে যেন থানার আইসি-র সাথে যোগাযোগ করা হয়। এই মর্মে আইসি-কে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।