Close

বোমাবাজি আর হিংসার ফলে রিষড়া স্টেশনে হাওড়া-বর্দ্ধমান মেন লাইনে ট্রেন আটকে, নাকাল যাত্রীরা

রাম নবমীর মিছিল কে কেন্দ্র করে হওয়া রবিবারের সংঘর্ষের পরে সোমবারও রিষড়া স্টেশনে ব্যাপক বোমাবাজি হওয়ায় রাত ১০টা থেকে বন্ধ ট্রেনচলাচল।

বোমাবাজি আর হিংসার ফলে রিষড়া স্টেশনে হাওড়া-বর্দ্ধমান মেন লাইনে ট্রেন আটকে, নাকাল যাত্রীরা

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি: সূত্র উইকিমিডিয়া

হুগলি জেলার রিষড়া স্টেশনের চার নম্বর রেল গেট অঞ্চলে ব্যাপক বোমাবাজি আর পাথর ছোড়ার ঘটনা কে কেন্দ্র করে সোমবার, ৩রা এপ্রিল, রাত প্রায় দশটার থেকে বর্ধমান মেন লাইনের আপ ও ডাউন লাইনে কোনো ট্রেন চলাচল করতে পারছে না। রিষড়া স্টেশনের থেকে ইস্ট পোস্টের বিশেষ প্রতিবেদক জানালেন যে বর্ধমানগামী লোকাল রিষড়া স্টেশনে আটকে রয়েছে আর অন্যদিকে স্টেশনের অদূরে হাওড়াগামী লোকাল আটকে রয়েছে।

রাত ১০.১৫ নাগাদ বিশাল পুলিশ বাহিনী সংঘর্ষরত দুষ্কৃতীদের ছত্রভঙ্গ করতে অভিযান চালালেও ব্যাপক বোমাবাজি ও বোতল ছোড়াছুড়ির কারণে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। আবার রাত ১০.৩৫ নাগাদ ৩০-৩৫ জনের একদল দুষ্কৃতী রেল লাইনের পশ্চিম দিক থেকে বোমাবাজি করতে করতে পূর্ব দিকে প্রবেশ করে। আতঙ্কিত হন আটকে থাকা ট্রেনের যাত্রীরা আর সেখানকার সাধারণ মানুষ।

রাত ১১.১৫ থেকে রিষড়া স্টেশনের কাছে গ্লাস ফ্যাক্টরি অঞ্চলে ব্যাপক বোমাবাজি শুরু হয়। স্টেশনেও বোমাবাজি শুরু হয়। এর ফলে রিষড়া স্টেশনেও র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র‌্যাফ) চলে আসে। তবুও পুলিশ ও র‌্যাফ কোনো ভাবেই এই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।

জানা যাচ্ছে যে রিষড়ার পূর্ব প্রান্তে, জিটি রোডের ধারে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ওয়েলিংটন জুট মিল সংলগ্ন অঞ্চলে রবিবার, ২রা এপ্রিল বিকালে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাংসদ ও প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে যে রাম নবমীর মিছিল কে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়, তারই ফলস্বরূপ সোমবারও রিষড়ার পূর্ব দিকে, জিটি রোড সংযোগকারী মসজিদ লেন ও মৈত্রী পথে সোমবার সন্ধ্যা থেকেও ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় ও বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা ঘটে।

অবাঙালি হিন্দু-মুসলিম অধ্যুষিত এই শ্রমিক অঞ্চলে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র‌্যাফ মোতায়েন করা থাকলেও তারা সংঘর্ষ আটকাতে অপারগ। এর ফলে গঙ্গার তীরবর্তী শ্রমজীবী অঞ্চলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানালেন ইস্ট পোস্ট বাংলার প্রতিবেদক। এই হিংসার রেশ থেকে রবিবার স্টেশন সংলগ্ন অঞ্চল ও হাওড়া-বর্ধমান মেন লাইনের পশ্চিম প্রান্ত সুরক্ষিত থাকলেও সোমবার রাতে এখানেও বোমাবাজি হয়।

ট্রেনে আটক যাত্রীরা রিষড়া স্টেশনে ইস্ট পোস্ট বাংলার প্রতিবেদক কে জানান যে তাঁরা নিরাপদে বাড়ি ফিরতে বা কাজের জায়গায় যেতে পারবেন কি না সেই নিয়ে তাঁরা সন্দিহান। যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা চান পুলিশ অবিলম্বে ব্যবস্থা নিয়ে দাঙ্গা বন্ধ করিয়ে রেল যাতায়ত সুনিশ্চিত করুক যাতে সাধারণ মানুষ বাড়ি যেতে পারেন।

এর মধ্যেই স্টেশন থেকে ২০-২২ জন যাত্রীর একটি দল দাঙ্গা থামাতে ও মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষার আহবান জানিয়ে রেল লাইন ধরে বোমাবাজির ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এই দলের তরফ থেকে বলা হয় যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করার দ্বায়িত্ব সবার এবং ধর্মের নাম করে উপদ্রব করে সাধারণ মানুষ কে নাকাল করা তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না।

জয়শ্রী মিল থেকে শ্রমিকেরা বের হতে পারছেন না বাইরে ব্যাপক হিংসার কারণে। ইস্ট পোস্ট বাংলা কে ইফটু রাজ্য কমিটির সদস্য মাধব উপাধ্যায় জানিয়েছেন যে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মালিকপক্ষের কাছে দাবি করা হয়েছে যে শ্রমিকদের রাতে কারখানায় থাকার বন্দোবস্ত করা হোক, এবং সেই দাবি কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিয়নটি।

কতক্ষণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে আর ট্রেন চলাচল শুরু হবে জানতে চাইলে পূর্ব রেলের রিষড়া স্টেশন কতৃপক্ষ কোনো উত্তর দেননি। পুলিশের কর্মকর্তারাও এই ব্যাপারে কোনো জবাব দেননি। মাঝরাত পর্যন্ত বোমাবাজি চলতেই থাকে। যার মধ্যে স্টেশন চত্বরের কাছেই ৩০-৩৫টি বোমা পড়েছে। দুষ্কৃতীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।

রাত ১.০৭ মিনিট থেকে রিষড়া স্টেশনে স্বাভাবিক ভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে বলে জানালেন ইস্ট পোস্ট প্রতিবেদক।

Leave a comment
scroll to top