সোমবার, ১৩ই ফেব্রুয়ারি, কলকাতা প্রেস ক্লাবে একটি বই উদ্বোধনের উদ্দেশ্যে হাজির হয়েছিলেন মানবাধিকার সংগঠন গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির (এপিডিআর) সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত সুর এবং তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। ড.আমিনুদ্দিন শেখের বই “সন্ত্রাসবাদ চর্চার ধারা এবং দুই বাংলার মুসলিম সমাজের আত্ম সমীক্ষা” উদ্বোধন হয় এই দিন।
মুসলিমদের উপর নির্যাতন বঞ্চনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে শাসক দলের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর উপস্থিতিতে জেলবন্দী বিরোধী বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর প্রসঙ্গ তোলেন মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত সুর।
সুর বলেন, “… আজকে যে ভাবে নওশাদ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে, এটা অত্যন্ত অন্যায়। মুসলমান না হলে এটা হত আমার মনে হয় না। মুসলিম সমাজ থেকেও সেরকম প্রতিবাদ উঠছে না। গণতান্ত্রিক অন্যান্য সংগঠন, অন্যান্য শক্তির দিক থেকেও প্রতিবাদ উঠছেনা! এটা আমাদের খুব দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।”
এর পরেই বই উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বলাগড়ের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। নওশাদ প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু না বললেও, বইয়ের প্রসঙ্গ থেকে বাইরে হিয়েই তিনি দু-বার নিজে বামপন্থী হয়েও কোন পরিস্থিতিতে তিনি দক্ষিণপন্থী তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন তা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন “একটুখানি ত্রুটি বিচ্যুতি হয়ে গেছে, বামপন্থা থেকে দক্ষিণপন্থার দিকে আসার জন্য।” এর পর তিনি মহারাষ্ট্রের দলিত প্যান্থার আন্দোলনের নেতা কবি নামদেও ধাসালের শিবসেনায় যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন “মানুষ কেউ কেউ শারীরিক ভাবে মরে, আবার কেউ কেউ মানসিক ভাবে মরে, চিন্তার জগতে তার মৃত্যু ঘটে যায়”
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য শ্রমজীবী অবস্থান থেকে উঠে আসা দলিত সাহিত্য আন্দোলনের অন্যতম মুখ মনোরঞ্জন ব্যাপারী নকশালবাড়ি আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০২১ সালের নির্বাচনে তিনি শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হন। তার মতে দলিত-আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিরোধী ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) আটকাতে তৃণমূল কংগ্রেসই একমাত্র নির্ভরযোগ্য শক্তি ছিলো। তাই তিনি বামপন্থী হয়েও দক্ষিণপন্থী দলে যোগ দিয়েছেন।
নিজের বই প্রসঙ্গে ড. আমিনুদ্দিন শেখ বলে “এই বইতে দেখানো হয়েছে কীভাবে ঠান্ডা যুদ্ধ অবসানের পরে আমেরিকার নেতৃত্বে পুঁজিবাদী দেশগুলো সাম্রাজ্যের অর্থনীতির বিকাশের জন্য তার প্রতিপক্ষ হিসেবে সন্ত্রাসকে ব্যবহার করে, মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোকে দখল করে…বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে ভারতে একটা অন্যরকম পরিস্থিতি তৈরি হল। তারা পর ঘন ঘন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দাঙ্গাজনিত হিংসার ঘটনা… ভারতবর্ষের যে সব এলাকায় বেশী দাঙ্গা হয়েছে এবং সংখ্যালঘু সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিশেষত মুসলিমরা, সেখান থেলেই তথাকথিত সন্ত্রাসবাদীদের উত্থান ঘটছে।”
এই দিন বামপন্থার থেকে দক্ষিণপন্থায় যাওয়া কে বিচ্যুতি বললেও মনোরঞ্জন ব্যাপারী তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া বা বিধায়ক পদ ছাড়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।