ভারতবর্ষে সিএএ-এনআরসি আইন নাকি লাগু হয়ে যাচ্ছে শুনছি! ঠিক রমজান মাসে এরকম এক বিশেষ ঘোষণা করা হলো, ভোটের আগে আগেই। শোনা যাচ্ছে নাকি রাম মন্দির এবং এই সিএএ-এর কারনেই নাকি ভোটের ফলাফলে সাড়ে তিনশো কেন বরং চারশো আসনও পেড়িয়ে যেতে পারে দক্ষিণপন্থী সরকারের পক্ষে। তা এই সিএএ নিয়ে অনেকের এত মাথাব্যথা হইচই থাকলেও আইন পাশ হওয়ার আগে জামা মসজিদের ইমাম নিজে ঘোষণা করে জানিয়েছিলেন যে এই আইনের ফলে ভারতীয় মুসলমানদের কোনোরকম ক্ষতি হবে না। যাদের সঠিকভাবে সমস্ত নাম ঠিকানা, ঠিকুজি গুষ্টি নথিভুক্ত করা আছে তাদের কোনোরকম সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারন অনেকে বলছেন যে ভারতে তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই হিন্দু ধর্মের মানুষরাই শরণার্থী হিসেবে আসেন তাই তাদের জন্য তো সুবিধা করাই আছে এই আইনে।
কিন্তু সত্যিই কতটা কি করা আছে তা আসাম এবং দিল্লির শরণার্থী শিবিরগুলোর দিকে তাকালেই বেশ মালুম করা যায়। কতজন হিন্দু এবং মুসলমান সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন তা টের পাওয়া গিয়েছিল তখনই। তা আমি এইসব আইন কানুনের এত প্যাঁচ বুঝিনা, আসলে কিরকম ফল হবে তা আমার জানা নেই একেবারে। কিন্তু এই আইন নিয়ে জনগণের মানসিকতা ভালোই বুঝতে পারছি। কট্টরপন্থীরা যেখানে দুহাত তুলে সমর্থন করছে, উদারপন্থীরা তেমনি রুখে দাঁড়াচ্ছে। এর সমর্থনে যারা আছেন তারা বলছেন যে পৃথিবীরতে এই মূহুর্তে ছাপ্পান্নটি মুসলিম দেশ আছে, অনেক খ্রিষ্টান দেশও আছে কিন্তু কোনো হিন্দু দেশ নেই। নেপালকে ওরা হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ধরে না এবং যে কোনোভাবেই হোক, যেকোনো কারনেই হোক, ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানাতেই হবে। আচ্ছা খুব ভালো কথা। কিন্তু কেন বানাতে হবে? কী সুবিধা পাবো তাতে, তা আজ অবধি আমরা কেউ বুঝে উঠতে পারলাম না।
তা যাই হোক, এরপর এত কিছু বলে আমি জানাতে চাই যে এইসমস্ত বিষয় নিয়ে ভিন্ন দেশগুলোতে অবস্থিত আমাদের শ্রমিকদের কি মতামত। বাংলাদেশের শ্রমিকরা তো বলেই দিয়েছে যে এইসব করে নাকি আমাদের দেশ আরো ভাঙবে। ওদের কারুর হিন্দু নিয়ে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু এই ধরনের হিন্দু উগ্রবাদী মনোভাব নিয়ে খুব বিরক্তি। অথচ আবার তালিবান কেও সমর্থন জানাবে। এইটা বলছি একেবারে স্বল্পশিক্ষিত শ্রমিকদের কথা, পাকিস্তানের যারা আছেন, তাদের অনেকেই বালুচিস্তানের বাসিন্দা, তারা আবার এইসব বিষয় পছন্দ তো করেনই না, বরং অনেকে তাদের মধ্যে আবার কট্টর ভাবে নাস্তিক! এইবার প্রশ্ন হচ্ছে, তারা তো সকলেই ওই ছাপ্পান্নটি দেশের বাসিন্দা, তারা কেমন আছেন সেই অর্থে?
সেই ইসলামী দেশের মানুষরা নিজেদের দেশের অর্থনীতির দুরবস্থায় একেবারে জর্জরিত হয়ে, মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলোর উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন। এইবার সেই দেশের যে ওনাদের কি হাল হয় তা আগেই বলেছি, আরেকবার মনে করিয়ে দিই। তাদের শ্রম ছাড়া সেই আর্থিকভাবে উন্নত দেশগুলো যে এতটুকু চলবে না, তা জানতে কথা। কিন্তু মুসলমান হিসেবে তারা অনেক সময়ই হয়তো সেই সম্মানটা পান না, দুটি প্রধান কারনে। এক হচ্ছে যে সৌদি আরবের মানুষরা ধরেই নেন যে আমাদের দেশগুলোর মুসলিমরা তো এই সবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন যেখানে সৌদিরা তো স্বয়ং নবীর আবির্ভাব থেকে ইসলাম অনুসরণ করছেন।
আমাদের এখানে সবাই নিশ্চয়ই হিন্দু থেকে রুপান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়েছেন তাই তারা ইসলামের সঠিক মর্ম নাও বুঝতে পারেন। এবং আরেকটি প্রধান কারন হচ্ছে যে যেহেতু তারা কনভার্টেড মুসলিম, তারা সঠিকভাবে ইসলাম মানেন না, এই এক ধারনা প্রচলিত আছে। হয়তো নিয়ম করে নামাজে যান না, মদ্যপান করেন, এই ধরনের নানা গুরুতর অভিযোগ থাকে অনেক সময়ে, তাই তাদেরকে মুসলমান হিসেবে যথার্থ সম্মান দেওয়া হয়না। এইটুকু বলে এটাই বোঝাতে চাই যে যতই ইসলামী দেশ থাকুক না কেন, এবং তাদের মধ্যে ধর্মীয় ভ্রাতৃদ্বয় যেমনই হোক, তাতে যে সবার খুব একটা সুবিধা হয়, তা কিন্তু বলা মুশকিল। পিছিয়ে থাকা ইসলামী দেশগুলোর কথা না হয় ছেড়েই দিলাম আপাতত, অল্প কথায় বেশ কিছু বোঝানোর প্রচেষ্টা করলাম। একবার ইয়েমেন, ফিলিস্তিনের দিকে তাকালে কি আর এই ধর্মীয় মেরুকরণের রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রশ্নটা করার কোনো মানে হয়?