এক বিরাট আকারের পরিবর্তন আসতে চলেছে সৌদি আরবে। ইতিমধ্যেই অনেক কান্ড হয়ে গেছে অবশ্য, কিন্তু এখন সত্যিই সমস্ত আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত করে সৌদির পবিত্র ভূমিতে মদ্যপানের ব্যবস্থা হতে চলেছে। দিন দুয়েক আগে সৌদির আন্তর্জাতিক যোগাযোগ দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস নিজেদের উদ্যোগে নিজেদের রাষ্ট্রদূত এবং কূটনৈতিক কর্মচারীদের জন্য সৌদি আইন ব্যবস্থার সাথে বিশেষ চুক্তি করে তাদের জন্য মদের যোগান রাখেন, তাই এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে তা রোখার জন্য এই পদক্ষেপ লাভ আনতে পারে। যেহেতু বিদেশী কূটনীতিক এবং রাষ্ট্রীয় পদধারীরা নিজেদের সুবিধার জন্য নিজেদের মতো ব্যবস্থা করে রাখেন, তার বিরুদ্ধে ব্যাপারটা সরকারি এবং আইনি ভাবেই প্রচলন করে দেওয়া হলো যাতে আর তারা আলাদা করে কিছু না ব্যবস্থা করে!
এই ব্যবস্থা করা হয়েছে শুধুমাত্র অমুসলিম কূটনীতিকদের জন্য, রিয়াদের কূটনৈতিক এলাকার সংরক্ষিত অঞ্চলের ভেতরে। যেহেতু শুধু সেই হোমড়াচোমড়াদের জন্য এই ব্যবস্থা তাই প্রত্যেকের বিশেষ একটা আইডি কার্ড থাকবে সেই দোকান থেকে মদ কেনার জন্য, এবং অবশ্যই তার কোটা, অথবা সীমা থাকবে তাদের প্রত্যেকের জন্য। সীমাটা ঠিক কতটা তা নিয়ে এখনও পুরোপুরি জানতে পারিনি কিন্তু এইটুকু শুনেছি যে তা যথেষ্টর ও অনেক বেশি কোনো মানুষের জন্য। বোঝাই যাচ্ছে অত বেশি কোটায় মদের সরবরাহ হলে তা নিয়ে কি কি হতে পারে। সৌদির যুবরাজের নানা ধরনের গগনচুম্বী এবং আপত্তিকর উদ্যোগের মধ্যে এইটি অন্যতম এবং একেবারে আকষ্মিক।
সৌদি আরবে মদ্যপানের নিষেধাজ্ঞা জারি আছে ১৯৫২ সাল থেকে। তখন সবে সৌদি রাজত্ব টালমাটাল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠছে, তেলের খনি গুলো আবিস্কার হচ্ছে, মরুভূমির মধ্যে বেদুইনরা নিজেদের মাটির বাড়ি পাকা করছে। পশ্চিমারা, বিশেষ করে মার্কিনী বিশেষজ্ঞ এবং সাম্রাজ্যবাদীরা সবে থাবা বসাতে শুরু করেছে সদ্য প্রতিষ্ঠিত তৃতীয় সৌদি রাজতন্ত্রের ওপর। সেই সালে, এক সৌদি রাজপুত্র মদ্যপান করে নেশার ঘোরে এক ইংরেজ ব্যাক্তিকে রাগ রাগের বশে খুন করে ফেলেছিলেন। সেই দুর্ঘটনার পর থেকে সৌদি আরবে শরিয়ত কানুন অনুযায়ী মদ্যপান সমপূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বেআইনি ভাবে অনেকে মদ তৈরি এবং সরবরাহ করে থাকলেও ধরা পড়লে চূড়ান্ত শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। এখন সেই সবের এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসে গেছে বোঝা যাচ্ছে।
এই নিয়ে যে বেশিরভাগ পরিমাণ মুসলমানদের কি প্রতিক্রিয়া হতে চলেছে তা নিয়ে আন্দাজ করতে অসুবিধা হয়না। যেদিন থেকে সৌদির নীতি পুলিশ তুলে দেওয়া হয়েছে সেদিন থেকে এইসব পরিবর্তন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। আগে যখন নীতি পুলিশের দৌলতে নামাজ নিয়ে কড়াকড়ি ছিল, যখন সঙ্গীত, সিনেমা সবকিছুই নিষিদ্ধ ছিল, বোরখা এবং পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীদের বেরোনো বারণ ছিল, তখন সৌদি আরবে আমার এক মেসোমশাই বিশাল অঙ্কের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ভারতে ফেরত এসে গিয়েছিলেন। ২০১৮র পর থেকে যখন নতুন যুবরাজ এই সমস্ত পরিবর্তন আনতে শুরু করলেন, অনেক পুরোনো দিনের মানুষ, বিশেষ করে পাকিস্তানিদের চূড়ান্ত দ্বিরুক্তি দেখা যেতে লাগলো। তারা এইসব পশ্চিমা প্রভাব মেনে নিলেন না কিন্তু মুখ বুজে রইলেন অন্য দেশীয় বলে। কিন্তু যে সমস্ত সৌদিরা এর প্রতিবাদ করলেন, তাদের পরিণতি খুব একটা ভালো হলো না। অনেক ইসলামী মৌলবাদীরা এইসবের পরিবর্তন করতে থাকলেন, কিন্তু তাদের কপালে রাজদণ্ড জুটলো। আগেরবার যেমন জানিয়েছিলাম যে ২০২২ এ সৌদি ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছিল, তার মধ্যে এমন অনেক ওয়াহাবি মৌলবাদীরাও নিস্তার পাননি।
তেল ফুরিয়ে আসতে আসতে যে সৌদিদের পবিত্র মরুভূমির বালিতে আরো কত বিস্ময়কর কান্ড ঘটতে দেখবো এই বিপুল অর্থনীতি ধরে রাখার জন্য, তা সময়ই বলতে পারে…