Close

কেন NDA শরিকদের বিশ্বাস করা মুশকিল মোদীর?

আপাতত চন্দ্রবাবু বা নিতিশ কুমারের সমর্থন পাওয়া গেলেও কেন NDA শরিকদের বিশ্বাস করা মুশকিল নরেন্দ্র দামোদর মোদীর?

বুধবার, ৫ই জুন, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাতে ইস্তফা পত্র তুলে দিলেন নরেন্দ্র মোদী। আগামী ৮ই জুন আবার তৃতীয় বারের জন্য তাঁর শপথ নেওয়ার কথা। কিন্তু সত্যিই কি মোদী তৃতীয় বার শপথ নিতে পারবেন? পর্যাপ্ত সংখ্যা তাঁর ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের (এনডিএ) থাকলেও,নিতিশ কুমার চন্দ্রবাবুর আপাত সমর্থন পাওয়া গেলেও, এই জোটের সঙ্কটের মুখে পড়ার সম্ভাবনা আছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।

বিজেপির আসন সংখ্যা ২৪০, ম্যাজিক সংখ্যা ২৭২ থেকে ৩২ আসন দূরে। যদিও বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের আসন ২৯১টি। এর মধ্যে চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) ১৬টি এবং নিতিশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড) বা জেডিইউ এর ১২ টি আসন আছে।

অন্যদিকে জাতীয় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জাতীয় উন্নয়নশীল সর্বাত্মক জোট (ইন্ডিয়া) ২৩৪ আসন পেয়ে ম্যাজিক ফিগার ২৭২ থেকে অনেকটাই দূরে। স্পষ্ট ভাবে দেশের জনতা মোদীকে দূর্বল করলেও ইন্ডিয়া জোটকে সংখ্যা জুগিয়েছে শক্তিশালী বিরোধী তৈরি করার জন্য।

কিন্তু গত দশ বছরে মোদী সরকার যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তাতে এনডিএ শরিকদের মোদীর সঙ্গ ত্যাগ করার সম্ভবনা প্রবল বলেও মনে করা হচ্ছে। এই ব্যাপারে, ইন্ডিয়া শরিকদেরও মরিয়া হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।

যেমন ২০২৪ সালের শুরুতেই দুই জন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর― ঝাড়খন্ডের হেমন্ত সোরেন এবং দিল্লীর অরবিন্দ কেজরিওয়ালের― গ্রেফতারি ভারতের ইতিহাসে প্রথম। যদিও সোরেন প্রথমে গ্রেফতার হলেও, গ্রেফতারির আশংকায় পদত্যাগ করায়, কেজরিওয়ালই ক্ষমতায় থাকা প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যিনি গ্রেফতার হয়েছেন।
জেল থেকে নির্বাচন প্রচারের জন্যে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে কেজরিওয়াল অভিযোগ করেছিলেন জেলে তাঁর সুগারের ওষুধ আটকে দেওয়া হয়েছিল। কেজরিওয়াল ইঙ্গিত করেন জরুরী ওষুধ আটকে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছে মোদী সরকার। এর আগে এই ধরনের অভিযোগ মূলত ভারভারা রাও, প্রফেসর সাইবাবার মত নকশালপন্থী সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া বন্দীরাই করতেন।

দিল্লী আবগারি মামলায় শুধু আম আদমি পার্টির (আপ) নেতৃত্ব নয়, আপকেই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। দেশে প্রথমবার কোনো স্বীকৃত রাজনৈতিক দলকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও, গত দশ বছরে বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে হেনস্থা, জেলে আটকে রাখার মতন ঘটনাতো আছেই।

গোয়া, মধ্যপ্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যা গরিষ্ঠতা না থাকার সত্ত্বেও বিধায়ক কেনার মাধ্যমে সরকার গড়েছে বিজেপি। যাকে অমিত শাহের চাণক্য নীতি বলে প্রশংসা করা হয়েছে সংবাদ মাধ্যমে।

কেরল, পশ্চিম বঙ্গ, প্রভৃতি রাজ্য গুলোর বিরুদ্ধে লাগাতার রাজ্যপালের রাজনৈতিক ব্যবহার মোদী যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তা ছাড়া ‘এক দেশ এক ভোট’ ব্যবস্থা চালু হলে অথবা সংবিধান বদলে যদি মার্কিনী ধাঁচের রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রিক শাসন চালু হয় তবে আঞ্চলিক দল গুলোর আর কোনো দরকষাকষির ক্ষমতাই থাকবে না। বিরোধী দল এবং নেতাদের সম্পূর্ণভাবে নি:শেষ করার যে কর্মসূচি মোদী সরকার নিয়েছে, তা সফল হলে, পরের ধাপে শরিক দল গুলো নিশানায় পরিনত হতে পারে কি না, সেই নিয়ে সেই শরিক দলের আশঙ্কা থাকা অমুলক নয়। তৃতীয়বার মোদী সরকার প্রতিষ্ঠা হলে, বিরোধী কংগ্রেস এবং অন্যান্য আঞ্চলিক দল গুলোর অস্তিত্ব লোপাটের সম্ভবনা প্রবল বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইন্দিরা গান্ধীর শাসনের পর বিরোধী রাজনৈতিক দলের উপর এই ধরনের আক্রমণ আগে দেখা যায়নি। শ্রীমতি গান্ধী একরোখা আগ্রাসনকে ঠেকাতেই দেশের মানুষ একক সংখ্যা গরিষ্ঠতার বদলে জোট রাজনীতির যুগের সূত্রপাত করে। কংগ্রেস ১৯৮৪ সালের পরে আর কখনো একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায়নি৷ বিজেপির ক্ষেত্রেও একই পুনরাবৃত্তি দেখা গেলে অবাক হওয়ার যেমন কিছু থাকবে না তেমনি গণতন্ত্রের ন্যূনতম ভারসাম্য বজায় থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সৌম্য মন্ডল একজন আর্থ-সামাজিক এবং ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি ইস্ট পোস্ট বাংলায় মুখ্য সম্পাদক হিসাবে কর্মরত। মূলত উদীয়মান বহু-মেরুর বিশ্বের নানা ঘটনাবলীর তিনি বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করেন।

Leave a comment
scroll to top